E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘মুসলমান ভাইয়েরা হিন্দুদের প্রশ্রয় দেবেন না’ 

২০২৩ মে ১৪ ১৭:৩৬:৪৪
‘মুসলমান ভাইয়েরা হিন্দুদের প্রশ্রয় দেবেন না’ 

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : কলিমহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা: বিলকিস বানু বলেছেন, হিন্দুরা ভাবছে আমরা কি জিনি হয়ে গেছি, না! আপনারা পালাবেন কোথায় ইন্ডিয়ায়? ইন্ডিয়ার থেকে ধরে নিয়ে আসা হবে! মুসলমান ভাইয়েরা নিশ্চিন্তায় ঘুমাবেন কিসের বিধান কিসের সন্ত্রাস। হিন্দুরা ভাবছেন আপনারা বড়, না মুসলমানরা সব সময় বড়, হিন্দুরা সব সময়ের জন্য ছোট! মুসলমান ভাইদের বলছি আপনারা হিন্দুদের প্রশ্রয় দেবেন না! 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের জেহরা জেরীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান মোছা: বিলকিস বানু।

তিনি ২০২১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন। সে কলিমহর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মন্ডলের স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

শান্তি সমাবেশে উপস্তিত ছিলেন, পাংশা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাছপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল ইসলাম বুড়ো, কসবামাজাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার সুফল মাহমুদ, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ কুমার কুন্ডু, রাজবাড়ী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি সুব্রত কুমার দাস সাগর, পাংশা উপজেলা হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য উত্তম কুমার কুন্ডু, পাংশা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভজগোবিন্দ দে, পাংশা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা (কার্তিক), পাংশা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি দিপক কুমার কুন্ডু, পাংশা আদি মহাশশ্বান কমিটির সহ-সভাপতি নিখিল কুমার দত্ত, কলিমহর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি কিশোর কুমার দাশ, কলিমহর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর মাস্টার, কলিমহর ইউনিয়ন পুজা পরিষদের সভাপতি বিধান কুমার বিশ্বাস সহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ।

কিসের জন্য শান্তি সমাবেশ: গত ৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাংশা উপজেলার কালিমহর ইউনিয়নের হোসেনডাঙ্গা গ্রামের পাকা রাস্তার উপর পাংশা বালিকা বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীয়ান ও পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের বসাকুষ্টিয়া গ্রামের ইব্রাহিম মন্ডলের ছেলে মিজানুর রহমান মুকু (৪৭) কে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।এঘটনায় মিজানুর রহমানের স্ত্রী পারুল খাতুন বাদী হয়ে স্বামীর ব্যবসায়ীক পাটনার ও ছোটবেলার বন্ধু অসিত কুমার প্রামানিককে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামী করে পাংশা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার দুই দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনসহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত পাঁচজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর দুই দিন পর এই হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত বাকি ৩ জন কে আরও ২টি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলা হয় ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মিজানুর রহমান কে হত্যা করা হয়। গ্রেপ্তার কৃত ৮ জন আসামীর মধ্যে ৪ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের হয় বিপত্তির সৃষ্টি হয়।

ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পাংশা শাখার ব্যানারে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে গত ৯ মে মঙ্গলবার দুপুরে পাংশা শহরের কালীবাড়ি মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে হিন্দু নেতারা।

চেয়ারম্যানের সাম্প্রদায়িক এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে শান্তি সমাবেশে উপস্তিত উপজেলার হিন্দু এক নেতা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, এমপির নির্দেশে ওই এলাকার হিন্দু নারী পুরুষদের নিয়ে শান্তি সমাবেশ করা হয়। তবে চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে আরও বেশি অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

স্থানীয়রা বলছে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাদের কোনো ধর্ম নেই। তাই বলে এলাকার সব হিন্দু নারী পুরুষদের মাঠে বসিয়ে এভাবে হুমকি দেওয়ার মানে কি!যারা নিজেদের হিন্দু নেতা দাবী করেন তারাই কেমন! এরা মুলত নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গ্রামে এসে চেয়ারে বসে নেতাগিরি দেখায়। ঈশ্বর একজন আছেন তিনি দেখবেন। এই মাটিতে জন্ম গ্রহণ করেছি মরতে হলে এই মাটিতেই মরবো।

পক্ষান্তরে চেয়ারম্যানের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে সেই ভিডিও ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রশাসন সহ নেতৃবৃন্দ।

(এমজি/এসপি/মে ১৪, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test