E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরযাত্রী আসার আগেই ইউএনও হাজির, পণ্ড হলো বাল্যবিয়ে

২০২৩ নভেম্বর ০৬ ১৯:৪৪:১০
বরযাত্রী আসার আগেই ইউএনও হাজির, পণ্ড হলো বাল্যবিয়ে

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া নিঝুম আক্তারের (১৪) সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হয় রাব্বিন নামে ১৯ বছরের এক কিশোরের। দিনক্ষণ ঠিক করে ধুমধামে আয়োজন করা হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের। ঘড়ির কাঁটা সময় দেড়টা বাজে। তখনও বরযাত্রী আসেনি বিয়ে বাড়িতে। বরযাত্রী আসার আগেই বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ। সঙ্গে ছিলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. ছিদ্দিকুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সাগর হোসেন সৈকত, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার শামসুন নাহার তাসমিন, ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক মো. শহিদুর রহমানসহ পুলিশ ফোর্স।

৬ নভেম্বর সোমবার দুপুরে এঘটনা ঘটে ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি গ্রামে। কনে নিঝুম আক্তার পঞ্চবটি গ্রামের মো. জামাল হোসেন ও নিতু আক্তার পপি’র কন্যা ও বর মো. রাব্বিন মিয়া একই গ্রামের বেনু মিয়ার পুত্র। পারিবারিকভাবে মেয়ের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল।

বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে শহরের পঞ্চবটি গ্রামে বিয়ে বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসার খবর পেয়ে স্থানীয় উৎসুক নারীপুরুষ বিয়ে বাড়িতে এসে ভীর জমান। এসময় বিয়ে বাড়ির লোকজন কনে নিঝুম আক্তারকে পাশের একটি বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কনের অভিভাবকদের সাথে কথা বললে প্রায় আধাঘন্টা পর কনেকে নিয়ে আসা হয় বিয়ের আসরে। পরে বর ও বরের অভিভাবকদের আনা হয়। এসময় ইউএনও বাল্য বিয়ের কারণ জানতে চাইলে দুই পক্ষই তাদের ভুল স্বীকার করে এবং সরকারি আইন অনুযায়ী বিয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেনা বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাদা কাগজে মুচলেকা দেন। বাল্যবিয়ে দেয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা করে কনে ও বর পক্ষকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতিতে কনের বাড়ির লোকজন শতাধিক বরযাত্রীর জন্য আয়োজিত প্যান্ডেল ও গেইট খুলে ফেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন ভণ্ডুল করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, আমি একটি সংবাদ পাই ভৈরবের পঞ্চবটি গ্রামে বাল্যবিবাহ দেয়া হচ্ছে। তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে এসে সত্যতা নিশ্চিত হই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে একই এলাকার এক কিশোরের সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। মেয়েটি বয়স সর্বোচ্চ ১২/১৩ হবে। আর ছেলের বয়স ১৯। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে দুই পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে চল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা করি এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেখা নেয় তাদের বয়স আঠারো ও একুশ না হওয়া পর্যন্ত যেন বিবাহ না দেয়া হয়। সরকার আইন করেছে ছেলের বয়স একুশ ও মেয়ের বয়স আঠারো না হলে কোন ভাবেই যেন বিয়ে দেয়া না হয়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আমরাও সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি। এ বয়সে বিয়ে দিলে ছেলে মেয়ে উভয় শারিরীক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি আমাদের সমাজের জন্য বাজে খবর। আমরা চাই আপনাদের ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করান এবং উপযুক্ত বয়স হলেই যেন বিবাহ দেয়া হয়।

(এসএস/এএস/নভেম্বর ০৬, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test