E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাজ শেষ হওয়ার আগেই হস্তান্তর 

ধসে পড়ছে ২৪২ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের ব্লক, দেখা দিয়েছে ভাঙন 

২০২৪ জানুয়ারি ১২ ১৮:৫৭:৫০
ধসে পড়ছে ২৪২ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের ব্লক, দেখা দিয়েছে ভাঙন 

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই হস্তান্তর করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই হস্তান্তর করায় বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন ও ব্লক ধসে  পড়ছে। এবস্থায় ক্ষুব্দ স্থানীয়রা বর্ষা মৌসুমের আগেই বলেশ্বর নদীশাসন বেড়িবাঁধের অবশিষ্ট কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বেড়িবাঁধের ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো রক্ষা এবং নদীর তীররক্ষা কাজ বাস্তায়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড যানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরে মৃত্যুপুরী শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের মানুষকে বাঁচাতে ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) অধিনে ৩৫/১ পোল্ডারের বলেশ্বর নদীর তীরে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু করে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি’।

এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ করা কালে ৩৫/১ পোল্ডারের শরণখোলা উপজেলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা, ফাসিয়াতলাসহ সাতটি স্থানে ভাঙন ও বাঁধের ব্লক ধসে বিলীন হয়েছে। এরমধ্যে কাজ শেষ না হলেও ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিইআইপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বুঝে নেয়। এই অবস।থায় বাঁধের সাতটি স্থানের মধ্যে একটি স্থানে ভঙ্গন দেখা দেয়ায় জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শরণখোলার সাউথখালী ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও গাবতলার জাকির হোসেন জানান, বলেশ্বর নদীতে ভাঙনে ভিটা বাড়ি সব হারিয়েছি। ২০০৭ সালের সিডরে পরিবারের সদস্যদেরও হারিয়েছি। এরপরে আমাদের একমাত্র দাবি ছিল, টেকসই বেরিবাঁধ। কিন্তু বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ ও নদীশাসন না করার কারণে নতুন করে বাঁধের ব্লক ধসে পড়ছে। তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের নদীশাসন করে বাঁধে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানান তার।

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণ হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখেই কেন্দ্রীয় ভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় না করে কাজ করায় তারাও কাজের বিষয়ে কোনো তদারকি করতে পারেননি। কাজ অসমাপ্ত থাকায় বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি প্রকল্পের দূরদর্শিতার অভাবে নদীশাসন না করেই বাঁধ নির্মাণের ফলে বাঁধটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। খুব শিগগিরিই নদীশাসন করে বাঁধের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রকল্পটি কাজ শেষ হয়েছে বলে ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হতো কেন্দ্রীয় ভাবে। হস্তান্তরের পরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ৩৫/১ পোল্ডারের সাতটি স্থানে দুই দশমিক ৬৮ কিলোমিটারে বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাই। নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে কাজ নদীশাসন করে বাঁেধর ভাঙন রোধ করা হবে হবে।

(এস/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test