E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহি মাছের মেলা

২০১৫ জানুয়ারি ১৫ ২১:২৩:১৫
কালীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহি মাছের মেলা

গাজীপুর প্রতিনিধি:মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই বলে মাছের মেলা। বিরাট এই মেলাকে ঘিরেই দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিরিরাইলবাসী।

বিনিরাইল এবং এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছে মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী। মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগীতা। আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাঘাইড় মাছ ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। বিক্রেতা মাছের দাম হাকছে ৮০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় চুপাইর এলাকার জামাই নুরুল ইসলাম মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভীর জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য।

মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরেও মাছের মেলায় গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছিল নানা রকমের দেশী মাছও। বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ৪০ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স¦ীকৃত। এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। তাই স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।

বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মাছের মেলা সংলগ্ন মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শাখাওয়াৎ হোসেন জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।


(এটি/এসসি/জানুয়ারি,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test