E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব

ভৈরবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ

২০১৫ মার্চ ১১ ০৯:৫২:৫৩
ভৈরবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ

ভৈরব প্রতিনিধি : জেলার ভৈরবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে আধিপত্য বিস্তার ও ২ গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। গত রবিবার উপজেলার শ্রীগনর উচ্চ বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমিস উদ্দিন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয় সূত্রে জানাযায়, শ্রীনগর এলাকাটি ২ গ্রুপে বিভক্ত। ১ গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন হেলিম ও অন্য গ্রুপে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী ফুল মিয়া পক্ষে নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তাক হোসেন।

গত ২০০৬ সালে হেলিম গ্রুপ ও হাজী ফুল মিয়া গ্রুপ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে হেলিম গ্রুপের প্যনেল জয়ী হয়। কিন্তু আধিপত্য বিস্তারের কারণে মেনে নেয় নি হাজী গ্রুপ। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে দায়ের করে মামলা। এ নিয়ে উভয়পক্ষ ৫টি মামলা করে। ফলে দীর্ঘ ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা করা হয় এডহক কমিটির মাধ্যমে। যার কারণে শিক্ষক নিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেখা দেয় শিক্ষক সঙ্কট।

গত বছরের ১৪ এপ্রিল সর্বশেষ ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। উক্ত নির্বাচনে ২ গ্রুপের পক্ষ থেকে ৪ জন করে প্যনেল দেয়া হয়। নির্বাচনে হেলিম গ্রুপ থেকে একজন মোকশেদ আলী নির্বাচিত হয় এবং অ্যাডভোকেট মোস্তাক হোসেন গ্রুপ থেকে ৩ জন নির্বাচিত হয়। পরবর্তিতে হেলিম গ্রুপের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে অ্যাডভোকেট মোস্তাক হোসেনকে সভাপতি করে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন হলে ঘটে বিপত্তি। ফলে আবারও ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব উঠে চরমে ও দেখা দেয় উত্তেজনা।

এছাড়াও গত ৩ মাস ধরে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ ও প্রধান শিক্ষককে শোকজ করে জবাব না পাওয়ায় চলতি মাসের গত ৪ তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করে বর্তমান কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাক হোসেন। তাছাড়া ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩শ’ ৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের পাঠদানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক পাঠদান পরিচালনা করছেন। এমন সময় বিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জমিস উদ্দিন।

এ বিষয়ে ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রান্ত বেগম ও হৃদয় বলেন, শ্রীনগর গ্রামের মানুষ এক পক্ষ আরেক পক্ষকে মেনে নিতে পারে না। ফলে বিদ্যালয়ে সুন্দর পরিবেশও হয় না। এখন আমরা (শিক্ষার্থীরা) ২ পক্ষের শিকার। তাই তাদের লেখাপড়া অনিশ্চিত।

নজরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, শ্রীনগর এলাকায় ২ গ্রুপের এক গ্রুপ চাই, তাদের দখলে থাকবে বিদ্যালয়। আরেক গ্রুপ চাই তাদের দখলে থাকবে। এ নিয়ে ২ গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। ফলে তাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান খুব নাজুক। তারা এসব দ্বন্দ্বের কারণে তাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষৎ অন্ধকার দেখেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন হেলিম বলেন, আমরা সর্বশেষ নির্বাচনটি মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কৌশলে বাদ দিয়ে বিদ্যালয় ছাড়া অন্যত্র বসে কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটি অবৈধ হওয়ায় এলাকাবাসী এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, কমিটি গঠন, শোকজ কিংবা তাকে সাময়িক বরখাস্তের কোন চিঠি তিনি পাননি। তাছাড়া এলাকায় ২ পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করায়, শিক্ষকদের ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুলটি অনির্দিষ্টাকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।

বর্তমান কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাক হোসেন বলেন, নিয়ম মতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যিনি বাদ পড়েছেন তিনি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় বোর্ড তাকে বাদ দিয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর বোর্ড কর্তৃক কমিটি পাস হয়েছে। তাছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ায় তাকে শোকজ করা হয় নির্ধারিত সময়ে জবাব না দেয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বিদ্যালয়টি বন্ধের কথা স্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ওএস/এটিআর/মার্চ ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test