E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্ধ হয়ে গেছে ৫টি সিমেন্ট ও ৫টি মিশ্র সার কারখানা

নওয়াপাড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা

২০১৫ মে ১১ ২১:০৮:১৮
নওয়াপাড়ায় ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা

যশোর প্রতিনিধি : যশোরের শিল্প ও বানিজ্য শহর নওয়াপাড়া থেকে বড় আমদানিকারকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেক ব্যবসায়ী সারের ব্যবসা থেকে পুঁজি সরিয়ে অন্যখাতে বিনিয়োগ করায় নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

গত ১০ বছরের ব্যবধানে এখানকার ৫ টি মিশ্র সার কানাখানা ও ৫ টি সিমেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ সময় নওয়াপাড়ায় কোন নতুন বিনিয়োগ হয়নি। আগে যেসব গুদামে সার বোঝাই থাকতো সেখানে এখন অন্যমাল ভরে রাখা হয়েছে। এ কারনে কয়েক হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। বড় আমদানিকারকদের কাছ থেকে মাল কিনে বিক্রি করে এমন পাইকারি ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কমেছে আশংকাজনক হারে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সারের সবচেয়ে বড় মোকাম নওয়াপাড়া। এছাড়াও এ মোকামে সিমেন্ট, ভুট্টা, গম, খৈল, কয়লা আমদানিকারকরা ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব আমদানি করে থাকেন।

শিল্প শহর হওয়ায় সরকারি বেসরকারি ১২টি ব্যাংক তাদের শাখা খুলেছে নওয়াপাড়ায়। এসব ব্যাংক থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়া আছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে সার, সিমেন্ট, খাদ্যশস্য আমদানির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন। তার মধ্যে ছিল ১০টি সিমেন্ট কারখানা, ৯টি মিশ্র সার কারখানা, ৩ টি অটো রাইস মিল, ২ টি কটন মিল, ২টি বড় টেক্সটাইল মিল ও ৫ টি বৃহৎ পাটকল ।

এরপর নওয়াপাড়ায় আর কোন নতুন বিনিয়োগ হয়নি। বরং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এখানকার ৫টি সিমেন্ট কারখানা ও ৫টি মিশ্র সারকানাখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হলো সাউথ বেঙ্গল ফার্টিলাইজার, পরশ ফার্টিলাইজার, সৌরভ ফার্টিলাইজার, আক্তার ফার্টিলাইজার, পানপাতা ফার্টিলাইজার, আহাদ সিমেন্ট কারখানা, নূর সিমেন্ট কারখান, খুলনা সিমেন্ট কারখান, নিলয় সিমেন্ট কারখান ও এভার গোল্ডেন ঈগল সিমেন্ট কারখান।

নওয়াপাড়া সার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে নওয়াপাড়ায় যেখানে খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল ২শ’ বর্তমানে সে সংখ্যা কমে ৫০ জনে দাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহ জালাল হোসেন জানান, সরকার অন্যান্য সারে ভর্তুকি দেবার কারণে মিশ্র সার কানাখানার মালিকরা বিপাকে পড়ে।

দেখা যায় ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশের দামের চেয়ে মিশ্র সারের দাম বেশি। যে কারণে কৃষকরা মিশ্র সারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর বাজার মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যাওয়ায় সারকারখানা মালিকরা ব্যবসায় লোকসান গুনতে থাকেন। তারপর থেকে একে একে ৫টি মিশ্র সারকাখানা বন্ধ হয়ে পড়ে।

নওয়াপাড়া বাজার মালিক কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সরকার সিমেন্ট কারখানার মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দিলে সিমেন্ট উৎপাদনে এসব মালিকরা মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারতেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিমেন্ট কারখানাগুলো চালু হলে ৫ শতাধিক শ্রমিক ফিরে পাবে তাদের উপার্জনের ক্ষমতা।

একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির আলম জানান, কাঁচামাল সংকট ও ব্যাংক ঋণের বেড়াজালে পড়ে ২০০২ সাল থেকে সিমেন্ট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে আবারও সিমেন্ট কারখানা চালু হতে পারে।

নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা দিয়ে তা আদায় করতে পারছে না। অথচ আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের তারা ঋণ দেয়না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বলেন, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ব্যবসায়ীরা এক ব্যবসার কথা বলে ঋণ নিয়ে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। তাছাড়া অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে গাড়ি, বাড়ি করেন। যে কারনে ওই ঋণ তারা আর পরিশোধ করতে পারেন না।

নওয়াপাড়া সার ও খাদ্য শস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন বলেন, ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া, বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা আর বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে নওয়াপাড়ার সামগ্রিক ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

কেউ নতুন করে বিনিয়োগের সাহস দেখাচ্ছে না। তার মতে, ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতার কারণে নওয়াপাড়ার বিভিন্ন ঘাট ও গুদামে কর্মরত প্রায় ১০ হাজার হ্যান্ডলিং শ্রমিক এখন অর্ধ বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

মেসার্স মতিউর রহমানের ঘাটে কর্মরত শ্রমিক মতিয়ার রহমান জানান, বর্তমানে সার ব্যবসার পুরো মওসুম চললেও ঘাটে তেমন কাজ নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

ট্রাক বন্দোবস্তকারী সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ওলিয়ার রহমান বলেন, নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বানিজ্যে ধ্বস নামায় আমাদের সংগঠনের শ্রমিকরা প্রায় বেকার অবস্থায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এবং রুগ্ন শিল্পের প্রতি সরকারের সহায়তা পেলে আবার নওয়াপাড়ায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তা না হলে অচিরেই চালু অন্যসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে।

(জেকেএম/পিএস/মে ১১, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test