E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চিকিৎসা সনদ ও বিএমডিসি’র রেজিষ্টেশন ছাড়াই এরা ডাক্তার

২০১৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১৩:৫৩:১৮
চিকিৎসা সনদ ও বিএমডিসি’র রেজিষ্টেশন ছাড়াই এরা ডাক্তার

কলাপাড়া প্রতিনিধি :ডাক্তারী পাস না করেও দীর্ঘ বছর ধরে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কলাপাড়ার বিভিন্ন ক্লিনিকে বসে চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতারনার অভিযোগে চিকিৎসা সনদ ও বিএমডিসি’র রেজিষ্টেশন নম্বর দেখতে চেয়ে তিন ডাক্তারকে নোটিশ করেছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত ৩০ আগষ্ট কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা  ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম এই নোটিশ প্রদান করেন।

নোটিশ প্রাপ্ত ডাক্তাররা হলেন কলাপাড়ার লাইফ কেয়ার ডায়গনষ্টিক ল্যাব-২ চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ডা.মো. মনির হোসেন, পপুলার ডায়গনষ্টিক ল্যাবে চিকিৎসা প্রদানকারী ডা. মোহাম্মাদ শরিফ জালাল ও পায়রা মেডিকেল হলে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ডা. তৌফিকা জেরিন হক। আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করেন।

অনুসন্ধানে জানাযায়, ডা. মনির তাঁর চিকিৎসা পত্রে নিজেকে ঢাকা হলিহোম হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও নাইট এঙ্গেল মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন প্রভাষক উল্লেখ করে নিজেকে মেডিসিন, হৃদরোগ, লিভার ও ডায়াবেটিকস পরিপাকতন্ত্র চিকিৎসায় অভিজ্ঞ উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে তিনি ২০০৫ সালে গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পাস করেছেন। প্রায় ছয় বছর ধরে তিনি কলাপাড়ায় একাধিক ক্লিনিকে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে ২/৪’শ টাকা ভিজিট নিয়ে রোগী দেখছেন। তাঁর অপচিকিৎসায় শতশত মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছে এ অভিযোগ এলাকাবাসীর।

ডা. মোহাম্মাদ শরিফ জালাল ও তাঁর ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে মেডিসিন, প্যারালাইসিস, বাত জ্বর ওব্যথা, ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ ও চর্ম-যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন। তিনি তার টাইটেলে এমবিবিএস ঢাকা,পি.জি.টি এফসিপিএস, মেডিসিন পার্ট-২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনিও তাঁর চিকিৎসা সনদ ও বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন দেখাতে পারেন।
ডা. তৌফিকা জেরিন হক ২০১০ সালে খুলনার হোমিওপ্যাথী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন এমন দাবি করলেও তাঁর ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে ডিএমএফ(ঢাকা),ডিএইচএমএস(ঢাকা), মা ও শিশু এবং গাইনী বিষয়ে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত উল্লেখ করেছেন।

এই তিন ডাক্তারের কারও চিকিৎসা সনদ ও বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে কলাপাড়া পৌর শহরসহ গ্রামাঞ্চলে মাইকিং করে নিজেদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে হাজার হাজার মানুষের সাথে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও রোগীরা সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ প্রতারক ডাক্তাররা যে ক্লিনিকে বসে রোগী দেখতো ওই ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তারের সাথে গোপন চুক্তি থাকতে। ডাক্তারের রোগী দেখার সকল আয়োজন করতো ক্লিনিক মালিক। বিনিময়ে রোগীদের সামান্য রোগ হলেও একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফর্দ ধরিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো টাকা। এ টেষ্টের টাকার শতকরা ৩০/৪০ ভাগ পেতো ওই ডাক্তার বাকিটা ক্লিনিক মালিকের।

গত এক মাস ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই ডাক্তাররা প্রতিদিন গড়ে ৩৫/৫০ জন রোগী দেখতো। প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৩/৪'’শ টাকা ভিজিট আদায় করতো। সাথে টেষ্ট করার পার্সেন্টিজ। সেই হিসাবে একেকজন প্রতিদিন ২০/২৫ হাজার টাকা আয় করতো। এভাবে তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন শুধু ভুয়া ব্যবস্থাপত্র লিখেই।।

অনুসন্ধানে আরও জানাযায়, পটুয়াখালী জেলা ও কলাপাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা এই তিন ডাক্তারের মেডিকেল সনদ নেই বিষয়টি জানলেও গোপন সখ্যতার কারনে তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে জেলা সিভিল সার্জর বিভিন্ন অবৈধ ক্লিনিকে অভিযান চালালেও ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতো না। বিষয়টি সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসলে তৎপর হয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ ব্যাপারে ডা.তৌফিকা জেরিন হক বলেন, তিনি হোমিওপ্যাথী ডাক্তার। তাই সব রোগেরই চিকিৎসা দেন। তাঁর চিকিৎসায় সব রোগীই ভালো হয়েছে দাবি করে বলেন, তিনি এখনও নোটিশ হাতে পান নি। নোটিশ পেলে জবাব দিবেন।

ডা.মো. মনির হোসেন বলেন, তিনি গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেতে পাস করেছেন। তবে তাঁর ব্যবস্থাপত্রে এতো টাইটেল কেন জানতে চাইলে বলেন আপনার সাথে পরে কথা বলব বলে লাইন কেটে দেন।
ডা. মোহাম্মাদ শরিফ জালাল বলেন, তাঁর রেজিষ্টেশন নস্বর আছে। তবে নম্বরটি তাঁর মনে নেই। তিনি কোন মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন তাও জানাতে পারেনি।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি ওই তিন ডাক্তারকে নোটিশ করেছেন। তিনি দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগীর প্রেক্ষিতে ওই তিন ডাক্তারের চিকিৎসা সনদ ও বিএসডিসি রেজিষ্ট্রেশন দেখতে চেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তিনি নোটিশ করতে বলেছেন।


(ওএস/এসসি/সেপ্টেম্বর০১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test