E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে

ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করছে না ব্যাংক, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

২০১৫ নভেম্বর ২৯ ১১:১৪:৪৪
ধাতব মুদ্রা গ্রহণ করছে না ব্যাংক, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুরে সরকারি বেসরকারি কোন ব্যাংকই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধাতব মুদ্র বা কয়েন গ্রহন করছে না। ফলে শরীয়তপুরের সব হাট বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকারও বেশী মূল্যমানের কয়েন জমা পরে আছে কয়েক শত ব্যবসায়ীর কাছে। এতে চরম বিপাকে পরেছে তারা। উপায়ান্ত না দেখে অনেকে ঢাকার গুলিস্তানে ফুটপাতের মুদ্রা বদলকারিদের কাছে মোটা হারে লোকসান দিয়ে কমিয়ে নিচ্ছেন কিছু কিছুু ধাতব মুদ্রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জমতে শুরু করে ধাতব মুদ্রা বা কয়েন। সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে ব্যবসায়িক স্বার্থে ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকা সমমূল্যের কয়েন গ্রহন করতে বাধ্য হয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের থেকে সেই কয়েন বড় কোন মহাজন বা ব্যাংক গ্রহন করা বন্ধ করে দিয়েছে । ফলে শরীয়তপুর জেলার অন্তত ২০টি বৃহৎ হাট বাজার ও বিসিক শিল্প নগরীরর কয়েক শত ব্যবসায়ীর কাছে অন্তত ১ কোটি টাকার কয়েন জমা পরে রয়েছে। ব্যবসায়িরা ২০-৩০ শতাংশ হারে লোকসান দিয়ে কিছু কিছু কয়েন বিক্রি করছে ঢাকার গুলিস্তানের ফুটপাতে।

স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে কয়েন গ্রহনের কাউন্টার বন্ধ করে দেয়ায় কোন ব্যাংকই এখন এই ধাতব মুদ্র গ্রহন করছে না। আর সরকারি সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন লোকবলের অভাব এবং কয়েন গ্রহনের জন্য
ভিন্ন কাউন্টার না থাকায় কয়েন গ্রহন সম্ভব হচ্ছে না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জাজিরার কাজির হাটে শতবর্ষী ভিক্ষুক আব্দুল গফুর বেপারী ১০ দিনে ভিক্ষা করে সংগ্রহ করেছেন ২ শত ৬০ টাকার কয়েন। কাজিরহাট বাজারের ৫০টিরও বেশী দোকানে ঘুরে তিনি তার কয়েন বদল করতে পারেন নি । তিনি বলেন, আমি হাট বাজার ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে এই পয়সাগুলো ভিক্ষা পেয়েছি। এখন আমার পয়সা কেউ নিতে চায় না। এগুলো এখন নদীতে ফেলা দেয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।

জেলার সর্ববৃহৎ বাজার জাজিরার কাজীর হাট, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ও সদর উপজেলার আংগারিয়া বন্দরের ব্যবসায়ী তিমির কুমার সাহা, জসিম উদ্দিন, রুবেল খান, গোপাল চন্দ্র সাহা, সিরাজুল ইসলাম, বাদশা বেপারী, হাবিবুর রহমান, আব্দুস সালাম, আব্দুর রহিম বলেন, ব্যাবসায়ী স্বার্থে কাষ্টমারের কাছ থেকে কয়েন রাখতে আমরা বাধ্য হই। কিন্তু গত প্রায় ৬ মাস যাবৎ কোন ব্যাংক বা বড় মহাজন আমাদের থেকে কয়েন গ্রহন করছে না। প্রতিটি দোকানে এখন ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় লক্ষ টাকা পরিমনের কয়েন জমা পরে রয়েছে। এসব কয়েন আমরা স্থানীয়ভাবে চালাতে না পেরে ঢাকার গুলিস্তান হলের সামনে ফুটপাতে মুদ্রা বদলকারিদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ লোকসান দিয়ে বদল করে আনছি। তাও আবার পরিমানের তুলনায় খুব কম। কয়েন চালাতে না পেরে আমরা এখন অনেক বিপাকে পরেছি।

শরীয়তপুর বিসিক শিল্প নগরীর দেশ ফুড প্রোডাক্ট এর ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, বিসিক শিল্প নগরীতে ১০-১২টি বেকারী রয়েছে। প্রতিটি বেকারীতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে ধাতব মুদ্রা জমা পরে আছে। আমরা এই টকাগুলো কোথাও চালাতে পারছি না। সরকার যদি এই কয়েন গ্রহন না করে তাহলে এই জেলার অন্তত দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর অন্তত দেড় কোটি টাকা পানিতে ফেলে দিতে হবে।

আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক কাজিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েন কাউন্টার বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয় সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংক আমাদের থেকে কোন কয়েন গ্রহন করছে না। তাই আমরাও গ্রাহকের থেকে কয়েন গ্রহন করতে পারছি না।

সোনালী ব্যাংক জেলার প্রধান শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, শরীয়তপুর সোনালী ব্যাংকের ভল্টে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো ৩০ লক্ষ টাকার কয়েন জমা আছে। আমরা সেই কয়েনগুলোই ডেলিভারী দিতে পারছি না। কয়েন গ্রহন করতে গেলে তা গননা করতে বাড়তি সময় ও লোকবলের দরকার হয় এবং এর জন্য নতুন কাউন্টারও লাগে। তাই নতুন কাউন্টার খোলার সুযোগ না থাকায় আমরা কয়েন নিতে পারছি না।

শরীয়তপুর জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, জেলার বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকারও অধিক ধাতব মুদ্রা জমে আছে। আমার ব্যবসায়ীরা এই অর্থ কোন ভাবেই ব্যবহার করতে পারছে না। ব্যাংকে গেলে তারাও স্যবসায়ীদের কাছ থেকে গ্রহন করছে না। জরুরী ভিত্তিতে ধাতব মুদ্র গ্রহন করে ব্যসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমি আহ্বন জানাচ্ছি।

(কেএনআই/এইচআর/নভেম্বর ২৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test