E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় মাদকের ব্যবসা জমজমাট

২০১৬ জুলাই ০২ ১৫:১৪:১৫
আগৈলঝাড়ায় মাদকের ব্যবসা জমজমাট

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মাদকের আমদানী, ক্রয়-বিক্রয় ও সেবনের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল। হাত বাড়ালেই মেলে মরণ নেশা হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল। গাঁজার তো কথাই নেই!

গোয়েন্দা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, বেনাপোল-খুলনা থেকে যশোর হয়ে গোপালগঞ্জের মধ্য দিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট মহাসড়ক ধরে গৌরনদী হয়ে মাদকের চালান পৌছে যায় বরিশাল বিভাগীয় শহরসহ দক্ষিাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে। এই রুটের নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মাদক ব্যবসায়িরা ব্যবহার করে পয়সারহাট ও এর আশপাশ এলাকাকে।

পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যে দু’একজন গাঁজা বিক্রেতা ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করলেও মুল হোতাদের গ্রেফতারে তৎপর না হওয়ায় কোন ভাবেই মাদক সেবিদের অদম্য উন্মাদনা রোধ করা যাচ্ছে না বলে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন শৃংখলা সভায় কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি ও সুধী সজ্জনেরা অভিযোগ করে আসছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন চরম উদ্বিগ্ন। পুলিশ বলছে আইনী দুর্বলতার জন্যই বেশী দিন তাদের আটক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঈদকে সামনে রেখে আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম।

ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে খুচরা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সাজা প্রদান করলেও মাদক ব্যবসায়ীরা এতটুকু দমেনি। চলতি বছরে পয়সারহাটে ইয়াবার একটি চালানসহ একজনকে এপিবিএন’এর সদস্যরা আটক করলেও তার দেয়া স্বীকারোক্তি মতেমুল হোতাতে মামলা থেকে অজ্ঞাত কারণে বাদ দেয়া হয়েছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের হাতেও এবছর কোন মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার হয়নি।

জেলা পুলিশ বিশেষ শাখার সর্বশেষ তালিকানুয়ায়ি, উপজেলায় পাইকারী গাঁজা, পেন্সিডিল ও ইয়াবা বিক্রেতার সংখ্যা ৩৮ জন। এদের মধ্যে শিবির, বিএনপি নেতা থেকে ক্ষমতাসীন দলেরও লোকজনের নাম রয়েছে। ২০১৪ সনে ওই তালিকায় বিক্রেতার সংখ্যা দাড়িয়েছে ২২জনে।

সূত্র মতে, এলাকায় নৌ-ডাকাত, রোড ডাকাত, ট্রান্সফরমার চোরের তালিকায় নাম রয়েছে ২১ জনের। তালিকাভুক্ত ২১ জনের সকলের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকায় রয়েছে ৩০ জন। তবে গোয়েন্দা তালিকাভুক্ত কাউকেই পুলিশ সাড়াশি অভিযানের মধ্যে গ্রেফতার করেনি।

সম্প্রতি দেশব্যাপি পুুলিশের সাড়াশি অভিযানে আগৈলঝাড়ায় পুলিশের তালিকাভুক্ত উল্লেখযোগ্য কোন সন্ত্রাসী, মাদক বিক্রেতা, চাঁদাবাজ গ্রেফতার না হওয়ায় জনমনে ক্ষোভেরও কমতি নেই। বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল আগৈলঝাড়া পুলিশের নিস্ফল সাড়াশি অভিযান।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্র মতে, উপজেলায় মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত স্পট হচ্ছে- গৈলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, কালি খোলা, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ভ্যানস্ট্যান্ড, বাগধা, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মগরার উত্তরপাড়, আস্করের বাঁশতলা, চক্রিবাড়ি, কান্দিরপাড়, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও স্লুইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাট, মাগুরা বাজার, ভালুকশি, রাজিহার, বাশাইল, পূর্ব সূজনকাঠী, রামেরবাজার, রামানন্দেরআঁকসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে। উপজেলার কালী খোলার কয়েকটি মুদি দোকানেও পাওয়া যায় মাদক। এসব দোকানে নির্দ্দিস্ট গ্রাহকদের কাছেই কেবল মাদক বিক্রি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টেকেরহাটে পুলিশ চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়ার আশেপাশে কোন পুলিশী চেকপোস্ট না থাকায় পয়সারহাট এলাকাকে অধিক নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।

এ রুটের ব্যবসায়ীরা ত্রিমুখী ও আমবৌলা খেয়া ঘাট দিয়ে মাদকের বড় চালান পার করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও রামশীল থেকে রাজিহার হয়ে চাঁদশী হয়ে গৌরনদী ও রাজিহার থেকে ঘোষেরহাট রুট ব্যবহার করছে। ঘোষেরহাট ঠাকুর বাড়ি মাদকের অন্যতম একটি বড় বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই এলাকার বিক্রেতারা বাশাইল ওয়াপদা এলাকায় ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রির স্পট গড়ে তুলেছে।

এ ব্যাপারে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ঈদ উপলক্ষে পয়সার হাটে পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। মাদকের ব্যাপারে আমারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাদক বিক্রেতাদের তালিকা তৈরী করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই অভিযানে পরিচালনা করা হচ্ছে।

মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গৌরনদী সার্কেল অফিসার মো. রায়হান ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওযা যায়নি।

(টিবি/এএস/জুলাই ০২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test