E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে প্রভাবশালীরা ভোটার তালিকায়!

২০১৬ জুলাই ২৭ ১৫:১১:৩২
শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে প্রভাবশালীরা ভোটার তালিকায়!

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আগামী ১ আগষ্ট অনুষ্ঠিত হবে শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৫৫ জন ভোটরের ভোট প্রয়োগের নিয়ম রেখে একটি ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করেছে ক্রীড়া সংস্থা। তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে অন্তত ৩০ জন ভোটার রয়েছেন অস্তিত্বহীন বিভিন্ন ক্লাব/সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের নামে। ক্রীড়া পরিষদের নীতিমালা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ভূয়া, বায়বীয় সংগঠনের নামে এলাকার প্রভাবশালীদের ভোটার করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ায় ফুঁসে উঠেছে এলাকার বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের কর্মকর্তারা।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চার বছর মেয়াদী জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক একটি নির্বাচন কমিশিন গঠন করেন। এতে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আর,ডি,সি) মো. মুশফিকুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করা হয়। ১৭ জুন ২০১৬ তারিখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন কমিশন। তফসিলে ২৮ জুন ভোটর তথ্য সংগ্রহ শুরু, ১২ জুলাই তথ্য সংগ্রহের শেষ দিন, ১৪ জুলাই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ১৭ জুলাই ভোটার তালিকার উপর আপত্তি দাখিল ও নিস্পত্তি, ২১ জুলাই চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৩ জুলাই মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ, ২৪ জুলাই মনোনয়ন পত্র বাছাই, ২৫ জুলাই প্রত্যাহারের শেষ তারিখ এবং ১ আগষ্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করা হয়।

চুড়ান্ত ভোটর তালিকা সংগ্রহ করে সেখানে দেখা যায় অস্তিত্বহীন কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ভোটারের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। যেমন, ধানুকা আব্দুর রব ক্রীড়া চক্রের নামে ইকবাল হোসেন অপু, গোলার বাজার মাল্টি নূর কে,সি এর নামে এ্যাডভোকেট আলমগীর মুন্সি, শরীয়তপুর উজ্জীবন সংসদ এর নামে অলিউর রহমান চৌধুরী, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একাদশ এর পক্ষে বিনোদপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ, পালং তুলাসার বালুচরা স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে সৈয়দ মো. আনাস, নড়িয়া শহীদ স্মৃতি ফুটবল একাদশ এর পক্ষে আব্দুল মালেক নক্তি, শান্তি নগর নিজাম ফরাজী স্মৃতি সংসদের নামে ইমদাদুল হক সোহাগ, আঙ্গারিয়া একতা যুব সংঘের নামে সঞ্জিব নাগ, ধানুকা রাইজিং স্টার এর নামে আবুল কালাম মোল্যা, সুপার ইলেভেন ব্রাদার্স ক্লাবের নামে আক্তার হোসেন কলিন্স, সেভেন স্টার শরীয়তপুরের নামে নীরু কুমার শীল, গোসাইরহাট শাপলা স্পোর্টিং ক্লাবের নামে মোশারফ হোসেন মিলন, আঙ্গারিয়া সুর্য তরুন সংঘের নামে নবীন চন্দ্র দাস, তেলিপাড়া তরুন সংঘের নামে সুভাস চন্দ্র দাস, ধানুকা সুরেন্দ্র স্মৃতি সংসদের নামে শতীষ চন্দ্র দাস, আঙ্গারিয়া স্পোর্টিং ক্লাব এর নামে কমল কুমার সাহা, কাশাভোগ ক্রিকেট ক্লাব এর নামে কবীর মাহমুদ, রজনীগন্ধা স্পোর্টিং ক্লাব এর নামে ইয়াহিয়া খালেদ, পালং স্পোটির্ং রøাব এর নামে মো. আব্দুল রব কোতোয়াল, নড়িয়া কিশলয় ফুটবল একাডেমির নামে মো. তারিক মাহমুদ, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নামে মো. সালাউদ্দিন সরদার, টিম-৯৮ এর নামে আবু সাঈদ, শরীয়তপুর ক্রীকেট একাডেমীর নামে দুলাল খান, আব্দুর রব মুন্সি ক্রীড়া চক্রের নামে রাসেল শিকদার, স্মার্ট বয়েস এর নামে বি, এম ইশ্রাফিল, নড়িয়া শিশু কিশোর সংঘের নামে রাজ মো. আলী আকবর বাংগাল, জে এএইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের নামে মো. এমরান পারভেজ খান, নড়িয়া কিশলয় ক্রিকেট একাডেমির নামে জাহাংগীর আলম, মধ্যপাড়া শতদল ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে মোহসীন উদ্দিন ও শরীয়তপুর ক্রিকেট খেলোয়ার কল্যান সমিতির নামে মো. সেলিম শিকদার।

যে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে ভোটার করা হয়েছে তাতে ধানুকা আব্দুর রব ক্রীড়া চক্র ও জেড, এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় ছারা কোন প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। এগুলো নাম সর্বস্ব, বায়বীয় প্রতিষ্ঠান। এদের অধিকাংশেরই কোন ঘর নেই, অফিস নেই, কমিটি নেই, গঠনন্ত্র নেই। এমনকি নেই কোন ব্যাংক হিসেব নাম্বার। অথচ, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রনীত জেলা ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্রে ৭ নং অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, এ্যাফিলিয়েশন বা ভোটর হিসেবে অনুমোদনের জন্য আবেদনকারী ক্লাব/সমিতি/প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র/নীতিমালা, ঠিকানা, সাধারণ পরিষদ, কার্যনির্বাহী পরিষদ, ব্যাংক হিসেব নাম্বার অবশ্যই থাকতে হবে। জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে নিয়ম নীতির কোন রকম কোয়াক্কা না করে ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মাদবর গত ২০০৩ সালে বিএনপি-জামাত জোটের পক্ষ হয়ে প্রথম ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে একের পর এক ভূয়া ভোটার তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে ক্ষমতায় টিকে থাকছেন তিনি বছরের পর বছর।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে, ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে গত ১৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করা হয়। এরপর ২৪ জুলাই বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ আজিজুল হক ক্রীড়া চক্রের সভাপতি আনোয়র হোসেন রিটানির্ং অফিসার বরাবরে একটি আবেদন করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, বিধি বহির্ভূতভাবে প্রনীত ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন না করার জন্য।

ভোটর তালিকার ২৫ নম্বর ভোটর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ সাকিদার জানান, আমাকে কোন্ ক্লাবের সদস্য করা হয়েছে তা আমি জানিনা। সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান রাজ্জাক আমার থেকে ছবি ও তথ্য নিয়েছে। আমাকে কোথায় রাখা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।

২২ নং ভোটার শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ও শরীয়তপুর জজ কোর্টের জিপি এ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেন মুন্সি বলেন, ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সালাম ভাই আমার নামটি ওখানে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানের নামে করেছেন তা আমি জানিনা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম মাদবর বলেন, ২০১৪ সালে সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনেক দেড়িতে আমরা পেয়েছি। আগের নিয়ম মতই এবারের ভোটার তালিকা প্রণনয়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু করা হবে।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আর,ডি,সি) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করার দায়িত্ব ক্রীড়া সংস্থার। তফসিল ঘোষনার পর ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক এ্যাফিলিটেড যে সকল ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিদের নামের তালিকা ক্রীড়া সংস্থা সরবরাহ করেছেন, সে অনুযায়ীই ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে।

আগামী ১ আগষ্ট শরীয়তপুর ক্রীড়া সংস্থার জন্য ৪ বছর মেয়াদী যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিনে ২৪ জুলাই ২৭জন কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ার জন্য মাত্র একটি প্যানেল জমা পরেছে। অর্থাৎ ১ আগষ্ট ওই প্যানেল অনুযায়ী একটি সাজানো ভূয়া কমিটি বীনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হবে।

(কেএনআই/এএস/জুলাই ২৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test