E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বিক্রি হয়ে গেছে রানীশংকৈলের খুনিয়া দিঘী

২০১৭ মার্চ ০৬ ১৪:৫৩:৩৫
বিক্রি হয়ে গেছে রানীশংকৈলের খুনিয়া দিঘী

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : ১৯৭১ সাল পাকিস্তান বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর শ্বাসরুদ্ধকর তুমুল বন্দুক যুদ্ধ চলে। সে সময় এ দেশটি ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে এ শাসক গোষ্ঠীর সাথে জীবন বাজি রেখে বাংলার দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করে এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ও ২ লক্ষ ৬৯ হাজার অধিক মা বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে অর্জিত হয় লাল সবুজের বাংলাদেশ এ ইতিহাস সবারই জানা।

সেই মহান মুক্তিযুদ্বের সময় পূর্ব পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর সেনাবাহিনীরা লাল সবুজের (বাঙ্গালী) পক্ষের নারী পুরুষদের নিজের বসতবাড়ী, এবং যাকে যেখানে পেতো নিয়ে আসতো তাদের ক্যাম্পে, নিয়ে নারীদের করতো সম্ভ্রম হারা আর পুরুষদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে চেষ্টা করতো পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার। যে বাঙ্গালী তাদের কথা শুনতো না তাদেরকে বন্দুকের গুলি দিয়ে মেরে লাশ ফেলে দিতো যত্রতত্র। ঠিক এমনিভাবেই লোহমর্ষক নির্মম নির্যাতন আর বাঙ্গালীদের গুলি করে মেরে ফেলে দিতো ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলার খুনিয়া দিঘীতে। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই দিঘীটি বর্তমান উপজেলা পরিষদ হতে দক্ষিণে প্রায় ১ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করলেই রাস্তার পাশে অবস্থিত সবারই চোখে পড়ে। এ দিঘীতে বর্তমানে স্বৃতিসৌধ হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) ও ২৬ র্মাচ (স্বাধীনতা দিবস) শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে উপজেলা প্রশাসনসহ রানীশংকৈলবাসী।

উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই খুনিয়া দিঘী ছিলো পাকিস্তানিদের বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করার স্থান, এখানে এ উপজেলার সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা হরিপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে এসে চালাতো লোহমর্ষক নির্যাতন। এবং পরিশেষে দিঘীটির পাহাড়ে লাইন লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে দিঘীর পানিতে ফেলো দিতো লাশ। এভাবে অনেক মানুষকে মেরে খুনিয়া দিঘীতে লাশ ফেলে দিয়েছে হানাদার বাহিনী। দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পরেও এ দিঘীর পানি হয়ে থাকতো শহীদদের রক্তের লালচে রং। দিঘীতে এবং পাহাড়গুলোতে পাওয়া যেতে শহীদদের হাড় হাড্ডি। খুনয়িা দিঘীটি নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার একটি দৃশ্যমান স্বাক্ষী।

আর এ দিঘী যখন স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও সরকারের সংরক্ষণ না হয়ে বিক্রয় হয়ে চলে যায়। এক মালিক হতে আর মালিকের হাতে প্রশাসন থেকে শুরু করে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই এই দিঘীকে সংরক্ষণ করার।

তখন বর্তমান প্রজন্মের একজন কলম সৈনিক হয়ে বিবেকের আদালতে বিচার করতে না পেরে এ প্রতিবেদক ছুটে চলে এ জমির আদিবিস্তারের খোঁজে,এতে উপজেলা ও ৩ নং ইউপি ভূমি অফিসে জমির মালিকানার তথ্য পেতে দারুণ বেগ পেতে হয়। প্রায় ১৫ দিন ঘোরার পরে জানা যায় এ দিঘীটি খাস খতিয়ান নং -১ এর দুটি দাগে ৩৭৭ পাহাড়ে জমি ৩ একর ৫০ শতক এবং ৩৭৭ এর বাটা ১০৯১ দাগে দিঘীটি ২ একর ১৮ শতক জমি মোট জমি ৫ একর ৬৮ শতক। তবে স্যাটেলমেন্ট অফিস সুত্রে জানা যায়,২০০৬ সালের ভুমি জরিপে জমিটি এখনো নতুন ১৭৯ ও ১৮০ হালদাগে খাস খতিয়ান হিসেবেই লিপিবদ্ব রয়েছে তাদের দপ্তরে । এর মধ্যে দিঘীটি মিস কেসে ভুমি উন্নয়ন কর চালু রয়েছে বলে জানান ৩নং ইউপি ভুমি অফিস।

আরো জানা যায়, দিঘীর জমিটি বিট্রিশ রের্কড ছিলো কশুম উদ্দীনের নামে এর পর ফোরটি সিক্সে রেকর্ড হয় তারপুত্র উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমানের নামে, তিনি সম্প্রতি সময়ে ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভান্ডারা গ্রামের জনৈক আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা গংয়ের কাছে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে বিক্রয় করে দেন মুক্তিযুদ্বে ইতিহাস সমৃদ্ধ দিঘীটি।

মালিকানায় চলে যাওয়ার পর খুনিয়া দিঘীতে ইতিমধ্যে একটি পাহাড়ের কিছু অংশের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। তাই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়রা দাবি তুলেছেন বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে নের্তৃত্ব প্রদানকারী দল। আর ঠিক এই সরকারের সময়ে ইতিহাস সমৃদ্ধ দিঘীটি সরকারের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে সংরক্ষণ না হয়ে বেচাকেনা করাটা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সন্মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। যারা দেশের জন্য দিয়েছেন তাজা প্রাণ আমরা শুধু তাদের স্মৃতিটুকু আগলিয়ে রাখতে পারবো না? আমরা কেমন বাঙ্গালী?

এ নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের কাছে জোর মিনতি করে বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে আগলিয়ে রেখেছেন দিচ্ছেন সন্মানী ভাতাসহ নানান সুবিধা, আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আমাদের শহীদ ভাইদের স্মৃতি রক্ষা করেন। প্রয়োজনে জমিটি অধিগ্রহণ করে প্রশাসনের হেফাজতে নেন। মুক্তিযোদ্ধা হামিদুর রহমান সহ আরো ৪-৫ জন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার অর্থ দিয়ে জমিটি ক্রয় করে নেন। তবু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি ধুলিস্যাৎ হতে দেওয়া যায় না, যাবে না।

খুনিয়া দিঘী বিক্রেতা হামিদুর রহমান বলেন, পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে আমি রেকর্ডীয় সূত্রে মালিক হিসেবে দিঘীটি বিক্রি করেছি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি এরশাদুল, এনামুল, আশরাফুল ইউএনও এবং এসিল্যান্ড রোকসানা বেগম, মাষফাকুর রহমানসহ বর্তমান ইউএন খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসানকেও বারংবার তাগিদ দিয়েছি প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কেউ নেই না । এবার তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সম্মুখীন হবে এ দিঘীটি উদ্বারের জন্য বলে তিনি মন্তব্য করেন

ইউএনও খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসানের খুনিয়া দিঘীর জমিটি নিয়ে কোন অফিসিয়াল ধারনা নেই জানিয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন বিষয়টি আমি দেখব, তবে কেউ অভিযোগ না দিলেতো সংবাদের অভিযোগে হবে না বলে মন্তব্য করেন।

(কেএএস/এএস/মার্চ ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test