E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণে ধীরগতি

২০১৭ মে ৩১ ২২:২৮:২৩
ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণে ধীরগতি

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণের কাজ বারবার পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত ঈশ্বরদী - ঢালারচর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের পরও পার হয়েছে আরও একটি বছর। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৬৫ শতাংশ। এতে প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। তবে প্রকল্পের পরিচালক সুবক্তগীণ দাবি করেছেন পাবনা পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষ হয়েছে, উদ্বোধন হবে যেকোনো সময়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঝগ্রাম, দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া এবং পাবনা স্টেশনের সেড নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। রং করা হচ্ছে শেড সমূহে। স্টেশনে রেললাইন বসানো হয়েছে, সিগন্যাল ব্যবস্থা সংযোজনের কাজও চলছে। ডিসেম্বরে পাবনা অভিমুখে এই ট্রেনে মানুষ যাতায়াত করবে। মাঝগ্রাম, দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া ও পাবনায় যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) মোহাম্মদ সবুক্তগীন জানান, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এই পর্যায়ে রয়েছে মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত রেলপথ। দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেলপথ। এই পর্যায়ে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ৫৪ কিলোমিটার রেলপথের দ্বিতীয় ফেজের কাজ শেষ হওয়ার সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করা হলেও তা আগামী বছরের (২০১৮সাল) ডিসেম্বরেও শেষ হবে কি না সন্দেহ।

পাবনাবাসীর বহু প্রতিক্ষিত এই প্রকল্পটির কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে ঈশ্বরদীর অদূরে মাঝগ্রাম স্টেশন থেকে পাবনা পর্যন্ত রেলপথ চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দও বেড়ে গেছে। বর্তমানে এই ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬শ ২৯ কোটি টাকা। প্রথমে বরাদ্দ ছিল ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। এই ব্যয় আরও পায় দুইশ কোটি টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রকল্পের জনৈক কর্মকর্তা জানান, প্রথম ফেজের কাজ ৮০ ভাগ শেষ হলেও দ্বিতীয় ফেজের কাজের অগ্রগতি সীমিত। মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ২৫ কি.মি. রেলপথ ও ৪টি স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরে যাত্রী চলাচলের জন্য ট্রেন চলবে। ইতোমধ্যে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া ও পাবনায় স্টেশন নির্মাণসহ রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদীর অদূরে মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ৩৬টি ছোট ও ২টি বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৬টি ছোট ও ৯টি বড় ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম দফায় ১৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট, রেললাইন স্থাপন, রেলক্রসিং গেট ও পাবনা পর্যন্ত ৪টি স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, এখন ফিনিসিং কাজ চলছে।

মাঝগ্রাম-ঢালারচর ভায়া পাবনা রেলপথের কাজ ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়। এর আগে ওই বছরেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর বৈঠকে প্রকল্পটি পাস হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬শ ২৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে ব্যয় বরাদ্দ আরও বেড়েছে। আরও একশ কোটি টাকা ব্যয় বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।

এই প্রকল্পের আওতায় মাঝগ্রাম রেলস্টেশন থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন ও ১১টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রথম দফায় শুধু পাবনা পর্যন্ত কাজ শেষ করতেই নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। পাবনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ডিসেম্বরে শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে জমি অধিগ্রহণ ও মাঝগ্রাম থেকে মাটি ভরাট কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই প্রকল্পটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচনের সময় এক টেলি-কনফারেন্সে পাবনায় রেলপথ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের অক্টোবরে।

এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ আসাদুল হক হলেন, এই প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের বহু প্রতিক্ষিত প্রকল্প, হাজারো মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে পাবনা পর্যন্ত ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এই রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। রেলপথে পণ্য পরিবহণে স্বল্প খরচের কারণে এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে ও কম সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। মানুষজনও কম সময় ও খরচে যাতায়াত করতে পারবে।

পাবনা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই রেলপথ যা সম্পন্নের দিন গুণছে তারা। কবে চড়বে নতুন ঝকঝকে রেল গাড়িতে সেই অপেক্ষায় রয়েছে এই অঞ্চলের অগণিত মানুষ।

(এসকেকে/এএস/মে ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test