E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্বপ্ন, আশা ও ওয়াদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজারো জেলের সমুদ্র যাত্রা

২০১৭ জুন ০৪ ২২:১০:০৩
স্বপ্ন, আশা ও ওয়াদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাজারো জেলের সমুদ্র যাত্রা

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : ভয়, আতংক কেটে যাওয়ায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছে উপকূলীয় জেলে পল্লীর হাজার হাজার জেলে ও ট্রলার মালিকরা। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাব কেটে যাওয়ায় সাগর শান্ত হওয়ায় রবিবার সকাল থেকে অন্তত দেড় শতাধিক ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাত্রা করছে। এখনও মাছ শিকারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সাগর মোহনা ঘেষা নিরাপদ স্পটগুলোতে নোঙর করে রাখা অন্তত তিন শতাধিক ট্রলার।

সামনেই ঈদ তাই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোঁটাতে এবার জেলেরা প্রাণচাঞ্চল্য নিয়েই সাগর মুখী হচ্ছে এ কথা জানালেন ষাটোর্ধ জেলে ইউনুস মাঝি। পাথরঘাটার এ জেলে গত চারদিন ধরে কলাপাড়ার শিববাড়িয়া নদীতে নোঙর করে রেখেছিলেন তাদের ট্রলার। শনিবার বিকালেই ট্রলারে জ্বালানী ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে রেখেছিলেন। রবিবার সকালে ট্রলারে দোয়া মোনাজাত শেষে সাড়ে দশটায় ১৭ জেলে নিয়ে যাত্রা করেন গভীর সমুদ্রে। একইভাবে প্রতিটি ট্রলারে দোয়া-মোনাজাত শেষে গভীর সমুদ্রে যাত্রা করছে।

ভোলার এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি কালাম মিয়া জানান, তাদের ট্রলারের ১৫ জেলের সবাই রোজা রেখেছে আজ। তাই সকালেই ইফতার সামগ্রী নিয়ে যাত্রা করবেন। তিনি বলেন, ঝড়ের কারনে গত কয়েকদিন বসে খেতে হয়েছে সবাইকে। তাই এই লোকসান যাতে এবার পুষিয়ে উঠতে পারেন তাই সব ট্রলারেই দোয়া মোনাজাত করা হচ্ছে।

একাধিক ট্রলার মালিক জানান, ঈদের আগে এটাই হয়তো গভীর সমুদ্রে জেলেদের শেষ যাত্রা। প্রতিটি ট্রলার গড়ে ৮-১২ দিনের খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মাছ শিকারে গেছেন। তাদের আশা এবার সাগরে প্রচুর মাছ পড়তে পারে। তাতে মেীসুমের ক্ষতি পুষিয়ে যাতে জেলেরা যাতে খুশি মনে ঈদ করতে করতে পারে তারাও এই আশা করছেন। কারন প্রতিটি ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাত্রা করতে অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। এখন আল্লাহ ভরসা।

জেলে পল্লীর গৃহীনি মিনারা বেগম শিববাড়িয়া নদীর তীরে এসেছেন তিন সন্তান নিয়ে। তার স্বামী মাছ শিকারে যাত্রা করবে তাই খুশি মুখে বিদায় জানাতে এসেছেন প্রায় ছয় কিলোমিটার দূর থেকে। তিনি বলেন, রমজান মাস চলছে। অথচ মাছ ধরতে না পারায় এতোদিন ঠিক মতো রোজাও খুলতে পারিননা। সন্তানদের ভালো খাবার দিতে পারিনি। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইছি যাতে এবার মাছ বেশি ধরা পড়ে। তাহলে সন্তানদের নতুন জামা ও কিছু ভালো খাবার খাওয়াতে পারবেন।
বাবার কাছে নতুন জামা, জুতা ও একটি চশমার আবদার আট বছরের জিসানের। দ্বিতীয় শ্রেণির এ ছাত্রের এ আবদার হাসি মুখে মেনে নিয়েছেন তার পিতা। জেলে ওয়াদুদ মুন্সী জানালেন, সাগরে মাছ পড়লে ছেলের এই আবদার পূরণ করবো। সাথে ছোট ছেলেকে নতুন জামা, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মাকে নতুন কাপড় কিনে দেবো। কিন্তু আল্লাহ তার এই আশাপূরণ করবে কি?

রবিবার সকাল থেকে এভাবে স্বপ্ন, আশা ও ওয়াদা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কলাপাড়ার শিববাড়িয়া নদী, আন্ধারমানিক নদী, টিয়াখালী নদী, ঢোশ, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, ফাতরার মোহনায় ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় আশ্রয় নেয়া শতশত ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাত্রা করছে।

(এমকেআর/এএস/জুন ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test