কাজের মধ্যেই ব্যায়াম

নিউজ ডেস্ক : আগেকার দিনে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলতে বোঝাতো নাদুস-নুদুস চেহারার মানুষ৷ যুগের সঙ্গে মানুষের চাওয়া-পাওয়া বদলে গেছে৷ আজকাল সুস্বাস্থ্য মানে সুস্থ, ফিট আর টান টান শরীরের কোনো মানুষ, যাকে যে কোনো পোশাকে মানায় এবং সবার মাঝে আকর্ষণীয় করে তোলে৷

নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের বিকল্প নেই। তবে ব্যায়াম বলতে অনেকে বোঝেন ফিটনেস সেন্টারে গিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র বা প্রশিক্ষকের সাহায্যে দৈহিক সৌন্দর্য বাড়ানোর কিছু নিয়মকানুন৷ কিন্তু ফিটনেস সেন্টারে যাতায়াত এবং ব্যায়াম করার জন্য যে সময়ের প্রয়োজন৷ তাই সুন্দর দেহ চাইলেও চাকরি, সংসার, ঘরের নানা কাজ ফেলে নিয়ম করে ফিটনেস সেন্টারের জন্য সময় খরচ করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না৷

অথচ ঘরের কাজগুলো যদি নিজেই নিয়ম করে ঠিকমতো করে ফেলা যায়, তাহলে কিন্তু দুটোই সম্ভব৷ অর্থাৎ বাড়ি-ঘর পরিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে তা একই সঙ্গে স্বাস্থ্যকরও হলো, আবার শরীরও সুন্দর হলো৷

ঘরের মেঝে মোছা: ঘরের মেঝে বা সিঁড়ি মুছতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই পেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ে, ফলে পেটের মেদ সহজেই কমে যায়৷ নিয়ম করে মেঝে মুছলে পেট মসৃণ হয় আর কোমরের আকারও হয় সুন্দর৷

জানালা পরিষ্কার: জানালার গ্লাস পরিষ্কার করতে গেলে হাত বার বার ওপরে-নীচে নামাতে তো হয়ই, এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও নাড়াচাড়া হয়৷ কাজেই জানালা পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি হাতের মাংসপেশী শক্ত হয় ও শরীরের বাড়তি মেদ কমে৷ বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের হাতের মাংসপেশী খানিকটা ঝুলে পড়ে, যা হাতের এই ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো সম্ভব৷

দাঁড়িয়ে ঘরের কাজ: আগেকার দিনে মেয়েরা রান্না ঘরের সব কাজ বসে বসেই করতো৷ বসে কাজ করলে কেবল একটি কাজই করা যায়৷ কিন্তু দাঁড়িয়ে কাজ করলে একই সঙ্গে রান্না, বাসন ধোঁয়া, কাটাকুটি এবং রান্নাঘরের অন্যান্য কাজও করা সম্ভব৷ এতে খানিকটা হাঁটাহাটির ফলে পায়েরও কিছুটা ব্যায়াম হয় এবং হাড় শক্ত থাকে৷ সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মেদও জমতে পারে না সহজে৷

যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখা: শরীরের সৌন্দর্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা বা বাধা মোটা পেট বা ভুড়ি, যা খুবই দ্রুতগতিতে বাড়ে৷ মেঝেতে বসে কাপড় কাঁচলে বা আধা বসা অবস্থায় কাপড় ধোঁয়ার মেশিন ব্যবহার করলে বা সেটা পরিষ্কার করলে পেটে চাপ পড়ে৷ নিয়মিত এ ধরনের কাজ করলে পেটে চর্বি জমে কম৷ এতে নিজেকে মেদহীন দেখতে যেমন সুন্দর লাগে, অন্যদিকে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার রাখার ফলে সেগুলোর আয়ুও বাড়ে৷

গাড়ি নিজেই পরিষ্কার করুন: আজকের ব্যস্ত জীবনে গাড়ির প্রয়োজন যেমন অনেক, তেমনি অনেকের আবার গাড়ির শখও কম নয়! তাই শখের মূল্যবান জিনিসটিকে ‘কারওয়াশ’-এ না দিয়ে বা ড্রাইভারকে ধুতে না বলে নিজেই ধুয়ে ফেলুন! এতে গাড়িটাও ঝকঝকে সুন্দর হবে, আবার নিজের শরীরটাও ফিট থাকবে৷ তখন দেখবেন যে কোনো আধুনিক পোশাকে নিজেকে কেমন স্মার্ট আর আকর্ষণীয় লাগছে।

বাগান করা: বাগান করা একটি শখের ব্যাপার৷ এ কাজটি ভালোভাবে করতে, অর্থাৎ শাক-সবজি, ফল আর সুন্দর ফুল ফোটাতে শরীরের বেশ পরিশ্রম হয়৷ বাগানপ্রেমীদের মেদহীন সুন্দর শরীর দেখেও অবশ্য তা বোঝা যায়৷ তাছাড়া বাগানপ্রেমীদের প্রকৃতির সাথেও থাকে নিবিড় সম্পর্ক৷ ফলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো রাখতে সাহায্য করে বাগান৷

ছোট থেকেই অভ্যাস গড়ে তোলা: এশিয়ার দেশগুলোতে গৃহিনীরা ‘কাজের লোক’বা গৃহকর্মী দিয়ে ঘরের কাজ করাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷ যদিও এ কাজটি করানোও সবসময় একেবারে সহজ নয়৷ তবে যারা কাজের লোক না রেখে ছোটবেলা থেকে ঘরের কাজ বা নিজের কাজ নিজে করায় অভ্যস্ত হন, তাদের শরীরের গঠন ছোট থেকেই হয়ে ওঠে সুন্দর৷

কাজের পর বিশ্রামও চাই: উপুড় হয়ে বাথটবটি নিজে হাতে ভালো করে পরিষ্কার করতে যে বেশ কিছুটা ক্যালোরি খরচ হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ স্বাভাবিকভাবেই তারপর যে কেউ কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, তাই না? ঝকঝকে সুন্দর বাথটবে পানি ভর্তি করে এতে ঢেলে দিন সুগন্ধী তরল সাবান৷ এবার নেমে পড়ুন পানিতে৷ আধঘণ্টা পর পানি থেকে উঠে শরীরটাকে মনে হবে একেবারে হালকা আর মনটা দারুণ ফুরফুরে!
(ওএস/এএস/জুন ০৯, ২০১৪)