E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানোর কৌশল

২০১৬ নভেম্বর ২৩ ১৬:৫২:২৩
বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানোর কৌশল

নিউজ ডেস্ক : প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাটা শুরু হয় পরিবার থেকে। স্পষ্ট করে বললে মায়ের কাছেই শিশুর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়ে থাকে। তবে পড়তে কিংবা লিখতে শেখার শুরুতে শিশুকে নিয়ে নানারকম ঝক্কি পোহাতে হয় কমবেশি সব বাবা-মাকেই। তাই একটু ধৈর্য ধরে আর খানিকটা কৌশলে পড়াতে হবে শিশুকে। তার মনে বাংলার বীজ বুনতে হবে শিশুকাল থেকেই।

শুরুটা হোক বাংলায়
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। স্বাভাবিকভাবেই সন্তানকে শুদ্ধ বাংলাটা শেখানো প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব। জীবনের প্রয়োজনে ইংরেজিটা শিখতে হবে সত্য, কিন্তু রক্ত দিয়ে কেনা এ বাংলা ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেয়াটা জরুরি।

মাকে সহনশীল হতে হবে
বাচ্চার লেখাপড়ার শুরুর দিকে মাকে অবশ্যই সহনশীল হতে হবে। বাচ্চা পড়তে না চাইলে, কাঁদলে বা বিরক্ত করলে মাকে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে। দেখা যায় যে শিশুটি দিব্যি মনের আনন্দে আর স্বাভাবিক চঞ্চলতা নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাদিন। অথচ পড়তে বসলে, সেই শিশুর মাথাতেই কোথা থেকে যেন ভর করে রাজ্যের দুষ্টুমি। কখনও ঘুমের ভান করে আবার কখনও বা টিভি দেখার বায়না ধরে আপনার লক্ষ্মী ছেলে কিংবা মেয়েটিই। শিশুর এই শিশুতোষ গোলমালে হুট করেই মেজাজ হারিয়ে ফেলা যাবে না কখনোই। অনেককেই দেখা যায় অহেতুক শাসনের পাশাপাশি গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন যার বাস্তবিক অর্থে কোনো ফলাফল নেই। পড়াশোনা শুরু করার এই প্রাথমিক ধাপটা আনন্দদায়ক করার দায়িত্ব অবশ্যই পিতামাতার।

চাই উপযুক্ত পরিবেশ
সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সেই অধিকাংশ শিশুর লেখাপড়ায় হাতেখড়িটা আরম্ভ হয়। শিশুর লেখাপড়া শেখার জন্য পরিবেশও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনুকরণ-প্রিয় শিশুরা তাদের আশপাশের অনেক কিছু দেখে শিখতে থাকে। শিশুর শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে বাবা-মাকেই। অনেক সময় দেখা যায় আপনি তাকে পড়তে বলে নিজে টিভি দেখতে বসে যান, যা শিশুর পড়াশোনায় অনীহার সৃষ্টি করে। শিশুর বই পড়ার সময়টা শিশুর পাশে থেকে তাকে বোঝান যে পড়ালেখার এই সময়টাকে আপনিও গুরুত্বের সঙ্গেই নিচ্ছেন। সম্ভব হলে শিশুর জন্য আলাদা একটি পড়ার রুমের ব্যবস্থা করুন। আপনি ইচ্ছে করলে শিশু যে রুমে ঘুমায়, সেই রুমের কোনায় একটি পড়ার টেবিল দিয়ে দিন। টেবিলের গায়ে শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলো ব্যবহার করুন।

কৌশলে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলুন
যে বয়সে শিশুর খেলাধুলা করার কথা ওই বয়সে পড়তে বসালে শিশুদের বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কাজেই শিশুর আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরুর বেশ অনেকদিন আগে থেকেই তাকে একটু একটু করে পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। খেলার ছলে শিশুকে বিভিন্ন ছড়া শোনানোর মাধ্যমে তাকে বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশুর মাঝে যদি গল্প শোনার ঝোঁক থাকে তাহলে তাকে পাশে নিয়ে কোনো একটি বই থেকে শিশুকে মজার মজার গল্প পড়ে শোনান। এক্ষেত্রে গল্পগুলো যদি শিশুর ভালো লাগে তাহলে সে নিজেও গল্প পড়ার জন্য কীভাবে বানান করে পড়তে হয় তা শিখতে আগ্রহী হবে। এভাবে শিশুকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদানের আগে তৈরি করে নিতে হবে।

শিশুকে সৎ সঙ্গ ও সুস্থ পরিবেশ দান
কথায় আছে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাই শিশুর মধ্যে বাল্যকাল থেকে ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে অবশ্যই সঙ্গী নির্বাচনে নির্ভুল হতে হবে। মা-বাবাকে এ ব্যাপারে সন্তানকে স্কুলে ভর্তির সময় থেকে সাবধান ও সচেতন করতে হবে। যেসব ছাত্র লেখাপড়ায় ভালো, নিয়মিত ক্লাস করে, মেধাবী হিসেবে পরিচিত, আচার-আচরণ ভালো, খেলাধুলা করে, লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্য-উন্নয়নমূলক চর্চা করে এমন ভালো ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাচ্চাকে মিশতে উদ্বুদ্ধ করবেন।

প্রতিদিন সন্তানের খোঁজখবর নিতে সপ্তাহে একবার করে হলেও স্কুলে গেলে আপনি বুঝবেন আপনার সন্তানের অবস্থা। আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠুক বাঙালি স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে। সেই লক্ষ্যে ছোটবেলা থেকেই সুন্দর অভ্যাস গড়তে এবং সুশিক্ষা দিতে মা-বাবা, বাড়ির মুরুব্বী ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে মনোযোগী হতে হবে।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test