E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

শিরোনাম:

র‌্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু, সুরতহাল জানাচ্ছেন না কেউ

২০২৪ মে ১৮ ১৯:৩০:০০
র‌্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু, সুরতহাল জানাচ্ছেন না কেউ

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ভৈরব র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২, ভৈরব ক্যাম্পে এক মহিলার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ধোঁয়াশা যেন কাটছে না। এ ঘটনায় ভৈরব থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম। তবে মামলার বিষয় অস্বীকার করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ।

মামলাতেও যেন রয়েছে রহস্য। পুলিশ বলছে মামলা হয়েছে আর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বলছে মামলা করেনি। সুরাইয়া খাতুন অসুস্থ্য হলে র‌্যাবের সদস্যরা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। যদিও সেখানে ছিল না কোন নারী সদস্য। কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরাইয়া খাতুনকে মৃত ঘোষণা করলে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মরদেহ হাসপাতালে পড়ে থাকে। ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে গেলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোন রকম তথ্য না দেয়ায় রহস্যের সৃষ্টি হয়। এমন কি পরবর্তীতেও যোগাযোগ করতে চাইলে কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় নিহত সুরাইয়া বেগমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে র‌্যাব বলছে গরমে অসুস্থ হয়ে নারীর মৃত্যু হয়েছে আর নিহতের পরিবার বলছে র‌্যাবের নির্যাতনে নারীর মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, ১৭ মে শুক্রবার সকাল ৭টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর সুরাইয়া নামের এক নারীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ভৈরব থানা পুলিশকে খবর দেয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু হওয়ায় র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা মিটিংয়ের পর সন্ধ্যা সাতটায় সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান।

তিনি জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে র‌্যাব হেফাজতে থাকা নারী আসামি সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতাল রির্পোট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রির্পোট আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

নিহত মহিলা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বরুণাকান্দা চন্ডীপাশা গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম (৫২)।

পুত্রবধূ হত্যা মামলার আসামি তিনি। এ ঘটনায় তাকে নান্দাইল থানার সামনে থেকে আটক করেছে র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা। আটকের বিষয়টি জানিয়েছেন নিহতের স্বামী ও পুত্রবধূ হত্যা মামলার আরেক আসামি আজিজুল ইসলাম। তিনি মুঠো ফোনে জানান, আমার পুত্রবধূ রেখা আক্তার ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তার পরিবার মামলা করেছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবেলা করব। শুক্রবার রাতে নান্দাইল থানায় পুলিশ আমাদেরকে ডেকে এনে র‌্যাবের হাতে সুস্থ অবস্থায় আমার স্ত্রীকে তুলে দিল। আমার ছেলে তাজুল ইসলাম লিমনকে ঢাকা থেকে আটক করা হয়। খবর পেলাম রাতেই মারা গেল আমার স্ত্রী। র‌্যাব নির্যাতন করে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। আমি এবিষয়ে আদালতে মামলা করব। আমি বিচার চাই।

তবে এ বিষয়ে র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফাহিম ফয়সাল বলেন, রাতে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে সুরাইয়া খাতুন। পরে অসুস্থ অবস্থায় সুরাইয়া বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়।

র‌্যাব অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৩ মে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানায় অন্ত্বসত্বা গৃহবধূ রেখা বেগমকে হত্যা মামলা দায়ের করেন মা রামিসা খাতুন। এরপর থেকে বিশেষ তদন্তে কাজ করে র‌্যাব। নিহতের স্বামী ও শ্বাশুরী ঘটনার পর ঘা ডাকা দিলে র‌্যাব তাদের দুজনকে আটক করে।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, সকালে সুরাইয়া খাতুনকে হাসপাতালে আনেন র‌্যাবের সদস্যরা। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে মৃত অবস্থায় পায়। পরে হাসপাতাল থেকে পুলিশ প্রশাসনকে জানালে ভৈরব থানা পুলিশ ও কিশোরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে। তিনি আরো জানান, থানায় অপমৃত্যু মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের পর নিহতের স্বজনদের কাছে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা মামলার বাদী। তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, রেখা আক্তার ও তাইজুল ইসলাম গাজীপুর জেলার নয়নপুর একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করার সুবাদে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম ও বছর খানেক পূর্বে কোর্টে মাধ্যমে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়িতে একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয় গৃহবধূ রেখা। নিহত রেখার মা রমিছা খাতুন গত ২৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে আমরা ঈশ্বরগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে আমার মেয়েকে মৃত দেখতে পায়। পরে জানতে পারে রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় অন্তঃসত্ত¡া রেখা আক্তারকে (২০) নান্দাইল হাসপাতালে না নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বামী-শ্বশুরসহ পরিবারের লোকজন। রেখা মারা গেছেন জানতে পেরে পালিয়ে যান তার স্বামী মো. তাইজুল ইসলাম (২৩)। এ সময় জরুরি বিভাগের লোকজন শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরে তিনি ছাড়া পেয়ে যান।

গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামী, শ্বাশুড়ি ও শ্বশুর) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করে। আদালতের বিচারক মামলার শুনানী শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে নান্দাইল থানার এস আই নাজমুল হাসান।

(এসএস/এএস/মে ১৮,২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০২ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test