E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

 

শেষ রক্ষা হলো না ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার তৌহিদুলের

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৭ ১৮:৪৮:৩৫
শেষ রক্ষা হলো না ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার তৌহিদুলের

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দেশের স্বনামধন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডাচ্বাংলা ব্যাংকে‘র সাতক্ষীরা জেলা শাখার ম্যনেজার মোঃ তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধ ২০২৩ সাল থেকে নারী কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসৎ আচরনের অভিযোগ দৃশ্যমান ও তার প্রতিকারে প্রতিবাদ মানববন্ধন এবং সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে স্বারকলিপি পাঠানোর মত ভুক্তভোগী ও সদস্যদের সমন্বয়ে একাধিক কর্মসুচী পালন হলেও অদৃশ্য শক্তিবলে ধরাছোয়ার বাহিরে থেকে যায় এই হেভিওয়েট কর্মকর্তা। কিন্তু বিধিবাম আর শেষ রক্ষা হলো না ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এই হেবিওয়েট কর্মকর্তা ম্যানেজার তৌহিদুলের। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের জারিকৃত এক আদেশে তাকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এসআর এ এট্যাচমেন্ট দেওয়া হয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায় যে, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার সাবেক জনপ্রিয় সৎ ও নিষ্ঠাবান ম্যানেজার সাঈদুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে প্রবাসী কল্যান ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চলে যান। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ম্যানেজার সাঈদুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হন সাবেক ম্যানেজারের জুনিয়র পোষ্টের মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। কিছুদিন যেতেই ম্যানেজার তৌহিদুল অস্থায়ী অবৈতনিক হিসেবে নিয়োগ দেন এক সুন্দরী মেয়েকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ ম্যানেজার তৌহিদুল‘র স্ত্রী কাছে না থাকার সুযোগে শহরের মুনজিতপুরে সুন্দর ফ্লাট নিয়ে ব্যাংক টাইমের ফাঁকে প্রায় সময় কাটাতেন বাসায়। অনেকে অনেক কিছু দেখে ফেলার কারনে ফুসে ওঠে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের অনেক শুভাকাঙ্খিরা। এরপরেও থেমে থাকেননি ম্যানেজার তৌহিদুল। ব্যাংকের অন্য কোন কর্মকর্তা তার এ সকল বিষয়ে কথা বললে সাথে সাথে হাতে শোকজ লেটার ধরিয়ে দিয়ে চাকরি খাওয়ার ভয় দেখাত তৌহিদুল।

তৌহিদুলের অপকর্মের প্রতিবাদ কারীদের গোপন সহযোগী ভেবে বলীরপাঠা বানায় সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার নির্মলকে হেড অফিসের মাধ্যমে ডিমোশন করে দুরে বদলি দিয়ে আর শান্ত ভদ্র ধার্মিক অফিসার মোস্তফাকে অনেক দুরে বদলি করিয়ে। অভিযোগ আছে ব্যাংকের নতুন ডেকোরেশন করার পরে পুরাতন ডেকোরেশন নাম মাত্র দরপত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন তৌহিদুল ।
সুত্রে আরও জানা যায়, ম্যানেজার তৌহিদুলের বিরুদ্ধে ডাচ্বাংলা ব্যাংকের হেড অফিসে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ গেলে অদৃশ্য শক্তিবলে তৌহিদুলের পরিবর্তে তৌহিদুলের মাধ্যমে নিয়োগকৃত সেই সুন্দরী মেয়েটি বলির পাঠা হয়ে চাকরি হারিয়ে সম্মানের দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদ ছাড়াই চলে যায়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ‘ব্যাংকিং নারী গ্রহীতা ও সচেতন নাগরিক সমাজ” এর ব্যানারে সালমা আক্তারের সভাপতিত্বে ও সানজানার সঞ্চালনায় ম্যানেজারের তৌহিদুল ও তার সহযোগী এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এরিয়া ম্যানেজার শাহাজান হোসাইনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময়ব্যাপি শহরের পলাশপোল ডাচ্বাংলা ব্যাংকের “ফাস্ট ট্রাক”র সামনে ২০২৩ সালের ১৮জুলাই দুপুর একটার সময় প্রায় অর্ধশত নারী মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য প্রদান করেন রহিমা খাতুন, সাফিয়া বেগম, তামান্না আক্তার তিথি, ঝর্ণা বেগমসহ আরও অনেকে।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে ডাচ্বাংলা ব্যাংকের ম্যনেজার ও এরিয়া ম্যানেজার তৌহিদুলকে নারী লোভী বলে আখ্যায়িত করেন। বক্তারা বলেন সম্প্রতি এ জাতীয় অভিযোগ ডাচ্বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গেলেও ডাচ্বাংলা ব্যাংকে মাষ্টার রোলে চাকুরি করা ওই নারীকে হেড অফিস থেকে ছাটাই করলেও মুল দোষী ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম বহাল তবিয়তে আছেন। এছাড়া সেবা গ্রহিতা নারী গ্রহকরা তার থেকে অনিরাপদ হলেও লোকলজ্জার ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারছেনা। আবার অনেক পুরুষ গ্রাহকের সাথে অসৎ আচরণের ও অভিযোগ আছে ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানব বন্ধনে আসা নারীরা ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম‘র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অজ্ঞাত জায়গায় নারী হয়রানি সহ অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহনের ও অভিযোগ করেন। বক্তাদের বক্তব্য শেষে সভাপতি সালমা আক্তার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার তৌহিদুল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এরিয়া ম্যানেজার সাহাজান হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটমেটাম দেন।

এরপরও ম্যানেজার তৌহিদুলের নিয়ন্ত্রনহীন পূর্ব অভ্যাসের পূণর্ব্যাক্তের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৩১জুলাই সোমবার সকাল ১১ঘটিকায় শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সামনে মানবধিকর সংগঠন “ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন ফর ষ্টাবলিস্টমেন্ট এন্ড ইমপেলেমেনটেশন অফ হিউম্যান রাইটস” এর ব্যানারে বিশ্ব মানবধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের শ্যামনগর উপজেলা শাখার সভাপতির সভাপতিত্বে শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে বক্তাদের বক্তব্যের মুল বিষয় ও দাবি ছিল অতিদ্রুত ম্যানেজার তৌহিদুলের সকল অপকর্মের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দৃশ্যমান করতে হবে। বাংলার মানুষের প্রানের ডাচ্ বাংলা ব্যাংককে ম্যানেজার তৌহিদুলের মত নারী লোভি দূর্ণীতিবাজ ও জালেমের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মানববন্ধন সমাবেশ শেষে ন্যায় ও সত্যের জয়ের আশায় উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সকল দপ্তরে স্মারকলিপি ও অনুলিপপি দেন মানববন্ধনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

কিন্তু দীর্ঘ সময় কোন প্রতিকার না পেয়ে সাতক্ষীরায় ডাচ্বাংলা ব্যাংকের উপর থেকে যখন মানুষের আস্থা উঠতে বসেছে এমন সময় হঠাৎ বিধিবাম হলো ম্যানেজার তৌহিদুলের। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল নারী কেলেঙ্কারী, দুর্নীতি ও অসৎ আচরনের অভিযোগ মাথায় নিয়েই এস আর এ এট্যাচমেন্ট হয়েছে তৌহিদের। আর সাথে সাথেই ডাচ্বাংলা ব্যাংকের উপর আস্থা ও স্বসস্তি ফিরতে শুরু করেছে সকল পর্যয়ের মানুষের। কিন্তু এ খবর পেয়ে ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, সচেতন মহল, নারী সংগঠন ও সাধারন মানুষ তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, শুধু এট্যাচমেন্ট নয়, ম্যানেজার তৌহিদুলের দ্রুত স্থায়ী চাকুরিচ্যুত ও সকল অপরাধের জন্য আইনের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে উপযুক্ত শাস্তির দৃশ্যমান ব্যবস্থা করে ডাচ্বাংলা ব্যাংককে প্রমান করতে হবে ডাচ্বাংলায় কোন অপরাধির জায়গা নাই, ক্ষমাত নাই।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলামের কাছে বার বার ফোন করা হঔের তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test