E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর জালিয়াতি মামলায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেলহাজতে

২০২১ অক্টোবর ২৪ ১৮:১০:১৭
ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর জালিয়াতি মামলায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জেলহাজতে

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করার মামলায় দিনাজপুর সদর উপজেলা ভাইস-চেয়াারম্যান মো.রবিউল ইসলাম সোহাগে জেল-হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।

দিনাজপুর জেলা সদরের আমলী আদালত-১ এর প্রথম শ্রেণির জুটিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো.ইসমাইল হোসেন আজ ববিবার বেলা ৩টায় জেল-হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দাবি করার দিনাজপুর সদর উপজেলা ভাইস-চেয়াারম্যান মো.রবিউল ইসলাম সোহাগে বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর’২০২০ রাতে দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলাটি দায়ের করেন,দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা ও ফৌজদারি আইনে করা মামলায় রবিউল ইসলাম সোহাগের বিরুদ্ধে মিথ্যা,মানহানিকর ও প্রতারণামূলক তথ্য প্রচার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি জনমনে বিদ্বেষ ও সংগঠনের মধ্যে শক্রতা সৃষ্টি করে অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় সাক্ষী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি,দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার,যুগ্ম সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল,দপ্তর সম্পাদক সেলিম আক্তার চৌধুরী এবং স্পেশাল পিপি সামসুর রহমান পারভেজের নাম দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে জাল প্রেস বিজ্ঞপ্তি তৈরি ও ব্যবহার করে ফেইসবুক ইলেকট্রনিক বিন্যাসে নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দাবি করা হয়েছে। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মানহানি ও মানসম্মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি গত ৭ অক্টোবর’২০২০ ফেইসবুকে দেখেন যে আসামি রবিউল ইসলাম সোহাগ একাধিক আইডিতে একটি মিথ্যা প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর জাল করে দলীয় প্যাড ও লোগো জালিয়াতির মাধ্যমে ‘অভিনন্দন রবিউল ইসলাম (সোহাগ), শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দিনাজপুর জেলা শাখা’ শিরোনামে প্রতারণামূলক, মিথ্যা, ভুয়া তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করে। ওই ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সাব্বিরুল আহসান ছবি ১১/১২/২০১৮ তারিখে মৃত্যুবরণ করায় ওই পদটি শূন্য হয়।সেই প্রেক্ষিতে রবিউল ইসলাম (সোহাগ), পিতা-আলহাজ জাবেদ আলী, মা-আলহাজ সাবরুন নেসা, গ্রাম-দক্ষিণ ফরিদপুর, চেরাডাঙ্গী সদর, দিনাজপুরকে শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দিনাজপুর জেলা শাখায় নিয়োগ/পদস্থ করা হলো। এই আদেশ জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে ওই ভুয়া ও জাল প্রেস বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করে নিজেকে আওয়ামী লীগ দিনাজপুর জেলা শাখার শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দাবি করে রবিউল ইসলাম সোহাগ। সে দলের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সামাজিক-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় এই খবর দেখার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাদী নিশ্চিত হন যে, আসামির দাবিকৃত কথিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষর করেননি। আসামিকে তিনি ওই পদে নিয়োগ বা পদস্থ করেননি।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মাহবুবুর রহমানকে। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মাহবুবুর রহমান অভিযোগ গঠনের পর তা আজ রোববার আদালতে পেশ করেন। উচ্চ আদালতে জামিনে থাকা আসামী দিনাজপুর সদর উপজেলা ভাইস-চেয়াারম্যান মো.রবিউল ইসলাম সোহাগে আজ দুপুরে পুরণায় নিন্ম আদালতে জামিনের জন্যে দিনাজপুর জেলা সদরের আমলী আদালত-১ গেলে আদালতের বিচারক প্রথম শ্রেণির জুটিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো.ইসমাইল হোসেন তাকে জেল-হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, স্পেশাল পিপি এডলোকেট সামসুর রহমান পারভেজ,সিনিয়র এডভোকেট সাইফুল ইসলাম,এডভোকট শাহাদাত হোসেন এডমিলার ও এডভোকেট সিদ্দিকা মিমি। আসামীর পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মাজহারুল ইসলাম।

প্রসঙ্গতঃ আসামি রবিউল ইসলাম সোহাগ দিনাজপুর সদর উপজেলা ভাইস-চেয়াারম্যান নির্বিিচত হওয়ার আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), দিনাজপুর কার্যালয়ে এমএলএসএস পদে চাকরি করতেন। সরকারি চাকুরি ইস্তফা দিয়ে সে সদর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যানে শূণ্য পদে আওয়ামী লীগের একাংশর সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দেয়া হয় সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা ফয়সাল আজিজ চঞ্চলকে। সোহাগ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।

(এস/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test