E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে ডাক্তারসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৮ ২০:৪৬:২০
প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে ডাক্তারসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল বড়বাড়ির মোস্তফা কামালের স্ত্রী প্রসূতি রুবি বেগমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তসহ ৩০ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওসি মুরাদনগরকে নির্দেশ দিয়েছেন কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট। মৃত প্রসূতি রুবি বেগমের স্বামী মোস্তফা কামাল মুরাদনগর ডক্টর’স ডায়াগনস্টিক এন্ড হসপিটালের গাইনী চিকিৎসক ডা. তামান্না আক্তার ও ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন রুহুলসহ পরিচালকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে হত্যা মামলা করায় শুনানি শেষে রোববার দুপুরে বিচারক রাজিয়া সুলতানা এ নির্দেশ দেন।

মামলার বাদী ও নিহত গৃহবধূর স্বামী গোলাম মোস্তফা এবং শাশুরী মনোয়ারা বেগম জানান, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুবি আক্তারের প্রসব বেদনা শুরু হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সরকারি হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের ডাক্তার না থাকায় দালালরা কম খরচে অপারেশনের আশ্বাস দিয়ে সরকারী হাসপাতাল সংলগ্ন ডক্টর’স ডায়াগনস্টিক এন্ড হসপিটালে নিয়ে ওই গৃহবধূকে ভর্তি করে। সেখানে প্রথমে নরমাল ডেলিভারি করার জন্য প্রায় ঘন্টাব্যাপী টানা হেচড়া করে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত অনুমান ৮টার দিকে ডাক্তার তামান্না আক্তার গৃহবধূ রুবি বেগম অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। অস্ত্রোপচারের পর রুবির অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হয়ে পেট ফুলে সে অজ্ঞান হয়ে রাত অনুমান ৯টার দিকে ক্লিনিকেই তার মৃত্যু হয়। পরে ওই চিকিৎসক অবস্থা বেগতিক দেখে ওই রাতেই তার ব্যবহৃত গাড়িটি দিয়ে রুবিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পৌছামাত্র কর্তব্যরত চিকৎসক অনেক আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। ডক্টর’স ডায়াগনস্টিক এন্ড হসপিটালের মালিক পক্ষ রুবির মৃত্যুর কথা সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত না করে এবং প্রসূতির স্বজনদের উল্টো পুলিশের ভয় দেখিয়ে কোনরকম কাগজপত্র না দিয়েই লাশ কাজিয়াতল বড়বাড়ি মাদরাসার পাশের কবরস্থানে জোরপূর্বক দাফন করান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্লিনিকে হাতুড়ে ডাক্তার দ্বারা অপারেশন করায় প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও উক্ত ক্লিনিকে সপ্তাহের ৭ দিন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবার ডাক্তার থাকেন। এছাড়াও উক্ত ক্লিনিকে ডিপ্লেমা সিস্টার, ডিপ্লেমা প্যাথলজি ও এক্সরে টেকনিশিয়ান না থাকলেও অদক্ষ লোকবল দিয়ে দেদারসে ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করাতো দুরের কথা ভয়েও মুখ খুলতে সাহস পায় না। এর আগেও এ ধরণের অনেক অঘটন-ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু জাহের জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে অবহিত করেনি। মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন জানান, নিহত প্রসূতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টির ব্যাপারে ক্লিনিকের ম্যানেজার সালাউদ্দিন এ ধরণের কোন রোগী তাদের হসপিটালে ভর্তি হয়নি বলে রেজিষ্টার হাতিয়ে দেখান। তবে পরিচালক আক্তার হোসেন মেম্বার রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় মৃত্যু হয়েছে দাবি করলেও আপসরফার মাধ্যমে সমঝোতা হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডা. তামান্না আক্তারের ০১৭১৫-২৫৯৭৫৬ নম্বর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় মন্তব্য নেয়া হয়নি। উল্লেখ্য- এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, ঘাতক ডাক্তার ও নিহত গৃহবধূর কথিত স্বজনদের সাথে রফাদফা হওয়ার ১ লাখ টাকা দালালরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ উঠছে।

(ওএস/পি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test