E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চরপাথরঘাটা ইউপি নির্বাচন

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান হতে পারেন সেলিম হক!

২০২২ মে ১৮ ১৬:৩৮:৫৬
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান হতে পারেন সেলিম হক!

জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : আগামী ১৫ জুন চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী ও অনুসারীরা। 

চায়ের স্টল থেকে শুরু করে সবখানে আলোচনা-বিচার বিশ্লেষণ একটাই-‘কে হচ্ছেন চরপাথরঘাটার নবম চেয়ারম্যান’? এটাই স্পষ্ট এবারে বিএনপি কিংবা জামায়াতের নয়! নৌকার মাঝি কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীই হতে পারেন এবারে ইউনিয়নের ‘প্রধান ব্যক্তিত্ব’। যদিও আলোচনা চলছে সুষ্ঠু নির্বাচনে বদলে যেতে পারে ভোটের ফলাফল। ততক্ষণ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে থেকে সরে দাঁড়ানো বা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন না। এমন নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারছেন না। কারণ সব প্রার্থীর বক্তব্য অতি কৌশলী।

যদিও বিএনপি এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করছেন না। মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনের চিত্র দেখে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। দলীয় প্রতীকে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু নৌকার প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সেলিম হকের সাথে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির আহমদ মার্শাল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দু’বারের চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা যায়, চরপাথরঘাটার বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ এখনো নীরব। দলীয় লোকজন ছাড়া কারো পক্ষে সরাসরি কাউকে অংশ নিতে তেমন দেখা যাচ্ছে না। মাঠের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, মাঠে সরব আওয়ামী লীগ, নেই বিএনপি, কৌশলী অবস্থানে স্বতন্ত্র।

অন্যদিকে রাজনীতি সচেতন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, ‘চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে এখন যে তিনজন প্রার্থীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা সকলেই ক্ষমতাসীন দলের পদ পদবিতে রয়েছে। অনেক প্রার্থী আবার অতীতে নৌকা নিয়ে ভোট করেছেন। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশ ও দলের গঠনতন্ত্র মেনে যদি দলের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। দল ঘোষিত প্রার্থীকে যদি মূল্যায়ন করা হয়। তাহলে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ করা অন্য প্রার্থীরা ২৬ তারিখে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন বলে ধারণা তৈরি হয়েছে।

যদি তা হয়। তাহলে তখনই একটি ভিন্ন ইতিহাস হতে পারে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ভাগ্যে। তার মানে চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার সুযোগ রয়েছে যুবলীগ নেতা সেলিম হকের। কেননা নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ভাগ্য সহায় বলে যুবলীগ নেতা আলা উদ্দিন মনোনয়ন পাওয়ার ২৪ ঘন্টা পর তা পরিবর্তন হয়ে মোঃ সেলিম হকের নামের পাশেই যুক্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পদ পদবিতে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি দলীয় সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেন। এমন কি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য মাননীয় ভূমিমন্ত্রী আলহাজ¦ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র সুপারিশ প্রাপ্ত প্রার্থীকে যদি তাঁরা মূল্যায়ন করেন। তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এবং জমা দিয়েছেন তাঁদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ দল অনেক বড়।

দলের বিপক্ষে বা বিরুদ্ধে গেলে কি কি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হতে পারে। দলকে সম্মান করলে, দলের পক্ষে থাকলে দল কি সুখবর দেবেন। এসব হিসাব নিকাশের ছক কষছে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ানো বাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আবার এমনও হতে পারে। ওরা সুযোগ নিতে পারে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের নেতা কর্মীদের মাঝে বিদ্যমান অন্তকোন্দল আর দলীয় নেতাদের গ্রুপিংয়ের। কারণ অনেকেই নৌকার পক্ষে চেহারা দেখালেও ভেতরের আসল চেহারা বুঝা বড় মুশকিল। তাঁদের এ অবস্থা দেখে সাধারণ মানুষ ভাবছেন, এসব কোন্দল মিটিয়ে সেলিম হক আওয়ামী লীগের সকল নেতাকে একই কাতারে দাঁড় করাতে পারবেন কিনা। না পারলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনা অন্তত ইভিএম পদ্ধতিতে কঠিন হয়ে যাবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভাব ছিল না। কিন্তু তালিকা গেছে স্বল্পভাবে। নৌকার যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়া দলটির জন্য অন্তত চরপাথরঘাটায় কঠিন ছিল না। কিন্তু কঠিন হয়ে গেছে। আবার অনেক ইউনিয়নে জোর করেও প্রার্থীদের নৌকা দেওয়া হয়েছিলো। পরে বদল করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১ জনসহ মোট ৫৭ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।’ তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নির্বাচন যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে হয়-এজন্য যা যা করার আমরা সব করব।’

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনয়ন বাছাই ১৯ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ মে। ২৬ তারিখেই হতে পারে নতুন ইতিহাস।

(জেজে/এসপি/মে ১৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test