E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নার্স ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, ভয়ে সহকর্মীরা

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৮:৫২:৫১
নার্স ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, ভয়ে সহকর্মীরা

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফেরদৌসি বেগম এর দাপটে অসহায় হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স হয়ে নিজে এবং নিজের আত্মীয়-স্বজন দিয়ে সহকর্মী ও কর্মচারীদের বকাবাজি, লাঞ্ছিত করা সহ চিকিৎসকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফেরদৌসী বেগম এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি পালনের বদলে নিজের ইচ্ছেমতো নামমাত্র ডিউটি করেন।রাতে ডিউটি থাকলে ডিউটির শুরুতে ফিঙ্গার দিয়ে বাসায় চলে যান আবার ডিউটি শেষের সময় এসে ফিঙ্গার দেন। হাসপাতালের আইডি কার্ড বানানো, রেষ্ট এন্ড রেক্রিয়েসন,ছুটি পাশ করানো,ফরোয়ার্ডিং নেওয়া ইত্যাদি অজুহাতে বিভিন্ন নার্সিং কর্মকর্তা ভাই, বোন থেকে মোটা অংকের টাকা আর্তসাৎ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেরদৌসী বেগম বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার নিকটাত্মীয়র পরিচয়ে দিনের পর দিন স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সহকর্মীরা। হাসপাতালের ভেতর ফেরদৌসী বেগমের অশোভন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েক দফায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) ও তত্ত্বাবধায়ক, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরাবর তাঁকে বদলি ও সংশোধন এর দাবিতে অভিযোগ দিয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত নার্স ও কর্মচারীরা।

ফেরদৌসী বেগম ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন ১৯৯৯ সালে। এর পর যে দল ক্ষমতায় এসেছে সে দলের স্থানীয় নেতাদের লেজুড়বৃত্তি করে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে ফেরদৌসী অফিস স্টাফ দের সাথে খারাপ ব্যবহার করার কারণে নিজেই মুচলেকা দেন সেবা ও তত্ত্বাবধায়ক(সন্ধা) এবং উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক(রেহেনা পারভীন) এর কাছে। পুনরায় এমন অপরাধ করেলে জুতার মালা গলায় দিয়ে পুরা মেডিকেল চত্বর ঘুরবেন।

পরবর্তীতে স্মৃতি কণা বিশ্বাস, সিনিয়র স্টাফ নার্স (ভারপ্রাপ্ত সুপারভাইজার) ফেরদৌসীর নামে ২৪/০৪/২০১৬ ইং তারিখে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর তত্ত্বাবধায়ক এর নিকট স্মৃতি কণা বিশ্বাস কে অপমান অপদস্থ করার কারণে অভিযোগপত্র দায়ের করেন।

ফেরদৌসী বেগম এর অনিয়ম–স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক, নার্স বা কর্মচারী প্রতিবাদ করলে তার সহকর্মী ও আত্মীয়দের দিয়ে ভয় ভীতি ও শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করানো হয়।অসদাচরণের অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক,ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নার্সিং ও মিডিওয়াইফারি অধিদপ্তর এ অভিযোগও করা হয়েছে।

ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পর অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক নার্স সাংবাদিকদের জানান, ‘হাসপাতালের ভেতর এমন কোনো অনিয়ম–দুর্নীতি নেই যা ফেরদৌসী করেন না।

ফেরদৌসী বেগম দু একদিন পরপর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নার্সদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেন।কখনও অফিসে খাওয়ানোর কথা বলে, কখনো ডিসি স্যারকে গিফট দেয়ার কথা বলে। প্রণোদনা টাকা নেয়ার সময় সকলের নিকট থেকে জোরপূর্বক ১২০০ টাকা চাঁদা আদায় করে।

এই ফেরদৌসী বেগম অত্র হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রাহেলা বেগমকে প্রাননাশের হুমকি দেন এবং সকলের সামনে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবং তার ছেলেমেয়েদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেন। রাহেলা বেগম তখন থানায় একটা জিডিও করেন।

এই ফেরদৌসী বেগম ১১/০৮/২০২১ইং তারিখে সাঙ্গা পাঙ্গা নিয়ে অত্র হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমানকে পিটিয়েছে। আরো জানা যায় ফেরদৌসি বেগম এর নেতৃত্বে গত ১৭-০৪-২০১৯ শিক্ষনিবাস ডাঃ সানী আলমকে প্রশাসনিক ভবন এর ৩য় তলায় নিয়ে জুতা পিটা করেন যার ভিডিও সংরক্ষিত রয়েছে। আরো জানা যায় গত ১৮/০৮/২০১৭ তারিখে জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার অপসারন করে তার পকেটে রেখে নার্সিং সুপারভাইজার সহ কিছু নার্সিং কর্মকর্তা দের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়।

সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে একজন নার্সের প্রতি মাসে পাঁচ দিন নাইট করার কথা থাকলেও ফেরদৌসী বেগম ২০২২ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে,জুন এই ছয় মাস কোন নাইট ডিউটি করেননি। পরবর্তীতে জুলাই মাসে ২,৩,৪,৫,৬ এই পাঁচ দিন ট্রমা সেন্টারে নাইট ডিউটি থাকলেও ডিউটির শুরুতে ফিঙ্গার দিয়ে বাসায় চলে যান এবং ডিউটি শেষে এসে আবার ফিঙ্গার দেন। পরবর্তীতে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর কোন নাইট ডিউটি করেন না। ডিসেম্বর মাসে ৯, ১০,১১,১২,১৩ এই পাঁচ দিন ট্রমা সেন্টারে নাইট থাকলেও ডিউটি শুরুতে ফিঙ্গার দিয়ে বাসায় চলে যান এবং ডিউটি শেষে এসে আবার ফিঙ্গার দেন।

সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে সর্বশেষ তথ্য বেরিয়ে আসে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেরদৌসী রাত্রিকালীন ডিউটির তথ্য:- ২ তারিখে রাতে ৯.৩০ মিনিটে চলে গেছে। ৩ তারিখে আসেন নাই। সকালে ফিংগার দেওয়ার জন্য আসছেন। ৪ তারিখে ৮,৩০ মি: হাসপাতালে ঢুকছেন এবং ১০.৫ এ চলে গেছে। ৫ তারিখে হাসপাতালে আসেই নাই বরং সকালে ফিংগার ও দিতে আসে নাই। ৬ তারিখে ৮.১৩ তে ঢুকছেন এবং ৯.৫৪ এ তার কর্তব্য স্থান ছেড়ে বাসায় চলে গেছে।

এ বিষয়ে মেট্রন সুচিত্রা সেনের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান ২৫ দিন পর পর নাইট করার কথা থাকলেও সে কেন করে নাই এটা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে নাইট সুপার শামসুন্নাহারের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি দুইটি ভবনের দায়িত্বে একা থাকার কারণে বিষয়গুলো আমি ওভাবে খেয়াল করতে পারি না। আর কেউ যদি ফিঙ্গার দিয়ে বাসায় গিয়ে আবার সকালে এসে ফিঙ্গার দেয় আমি কি করতে পারি?তিনি স্বাক্ষর করেছেন এতোটুকু আমার আমার জানা আছে ।

এ বিষয়ে হসপিটালের পরিচালকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আসলে আমি অবগত না।আমি লিখিত কোন অভিযোগ পেলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test