E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন

২০২৪ জানুয়ারি ১৪ ১৩:০৪:৫৯
তীব্র শীতে বিপর্যস্ত নীলফামারীর জনজীবন

ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : ঘন কুয়াশা, হিমশীতল বাতাস আর হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় উত্তরের জেলা নীলফামারীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত, কোন কোন দিন সারা বেলা বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। পাঁচ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। রাস্তা-ঘাট ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকায় সড়ক দুঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

শহরের কালিবাড়িমোড় এলাকায় কথা হয় ইজিবাইকচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে সারাদিন ঘুরে ৩০০ টাকাও ভাড়া পাইনি। আগে দিনে সাত থেকে আট শ টাকা আয় হতো অটো চালিয়ে। এখন অর্ধেক টাকাও আয় হয় না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, একদিকে আয় কম অন্যদিকে বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি।

গত চারদিন ধরে নীলফামারীতে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের। তীব্র শীত আর এক টানা ঘন কুয়াশার কারণে নীলফামারীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাস আর ঘন কুয়াশায়সহ হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ জেলার মানুষ।শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মজুর পরিবারের মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে যাবাহনগুলোকে দুপুর ১টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতের প্রকোপে অভাব মানুষের জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে। উত্তর হাড়োয়া গ্রামের আবদুর রহমান বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ । প্রতিদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। কয়েকদিন যাবত অতিরিক্ত কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসের কারণে আমরা কাজে যেতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সদর উপজেলার কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক ইনসান আলী বলেন, আমরা প্রতিদিন বদলা দিয়ে সংসার চালাই। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে হাত পা অবশ হয়ে আসছে। কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়চলতি বছরের শুরু থেকে নীলফামারীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। সকাল থেকে মাঠেঘাটে কৃষিশ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অনেকে শীতবস্ত্র কিনতে পুরোনো কাপড়ের বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন।

সৈয়দপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বুধবার ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব মিলিয়ে শীতে জবুথবু এখানকার লোকজন।

জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ইতিমধ্যে জেলার ছয় উপজেলায় ৪০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দের জন্য নতুন করে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

ইটাখোলা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের একটি বাগানবাড়িতে কাজ করছিলেন রেজাউল করিম(৪৫)। তিনি বলেন, ‘খিব ঠান্ডা পইড়ছে বাও। তিন দিন বেলা ওঠেছে না। অগুনের গোড়ত বইসলে উঠির মনায় না। কাম না কইরলে খামো কি? এই জন্য এই ঠান্ডাত কাম করির নাগেছে।’

প্রবাদ রয়েছে ‘মাঘের জাঁরে বাঘ কাঁন্দে’ (মাঘ মাসের শীতে বাঘও কাঁদে)। তবে এখন বাঘ না কাঁদলেও এই মাঘের তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা নীলফামারী। মাঘ মাসের শুরুর দিন থেকেই তীব্র শীত জেঁকে বসেছে হিমালয়ের পাদদেশে থাকা উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। গত তিন দিন থেকে ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়া সহকারী লোকমান হাকিম বলেন, টানা কয়েক দিন বিরতি থাকার পর গত শনিবার থেকে জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে। ওই দিন জেলা জুড়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়।

নীলফামারীর জলঢাকায় হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও অতিদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত পাঁচদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় কমেনি শীতের দাপট। ফলে বেকায়দায় রয়েছে এ অঞ্চলের সকল পেশা শ্রেনীর মানুষ।

এদিকে তীব্র শীতে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ সহ পশু পাখিও।
শনিবার ভোরে এলাকার বিভিন্ন মোড়ে ও চায়ের দোকানের সামনে শীত নিবারণের চেষ্টায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে নিম্ম আয়ের মানুষকে। পৌর শহরের রিকশাচালক মাসুম বলেন, আজ প্রচণ্ড শীত লাগছে। ঠাণ্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত ও পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না।

চাকরিজীবী শাকিলা ওয়াজেদ জানান, সকাল ৮টার মধ্যে অফিসের উদ্দেশে বের হতে হয়। আজ প্রচণ্ড শীতের কারণে রিকশা না নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। যাতে শরীরটা একটু গরম থাকে কিন্তু হিমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা। অবশ্য তীব্র শীতেও শীত নিবাননের জন্য গড়ম কাপর কিনতে ভীর দেখা যায় দোকান গুলোতে। এদিকে হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগী দেখা যাচ্ছে। গত তিন দিনে জলঢাকা হাসপাতালে শিশুসহ প্রায় ২০০ রোগী ঠাণ্ডাজনিত কারণে আউটডোরে চিকিৎসা নেয় বলে জানান হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

তবে কুয়াশা ও শীত বাড়ার সঙ্গে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহের সোমবার থেকে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে বলেও জানান তিনি।
ডিমলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে শৈত্যপ্রবাহ, ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়।তীব্র শীত জেঁকে বসেছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। গত দুইদিন থেকে নীলফামারীতে সূর্যের দেখা মেলেনি। খুব একটা কুয়াশা না থাকলেও মৃদু হিমেল হাওয়া বইছে। তীব্র এই শীতে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সৈয়দপুরে আজ এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। সকালে দৃষ্টিসীমা ছিল ৫০, দৃষ্টিসীমা কম থাকায় বিমানবন্দের বিমান ওঠানামা বন্ধ ছিল।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলায় ২৫ হাজার পিচ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(এসএএস/এএস/জানুয়ারি ১৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test