E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৪ নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র 

কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিভক্ত পরিচালনা পরিষদ

২০২৪ মার্চ ২৮ ১৮:৫১:৪৯
কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে নিয়োগ বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে বিভক্ত পরিচালনা পরিষদ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ স্মারক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পক্ষ বলেছেন পরিপত্র না মেনে নিয়োগ বোর্ড গঠণ করায় তা বাতিল করতে হবে। অপর পক্ষ বলছেন নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত থাকা সকল প্রতিনিধি জেনে শুনে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচিত করেছেন। তাই নিয়োগ দিতে হবে।

বিষ্ণুপুর প্রাণকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সমীর কুমার মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ে কম্পিউটর অপারেটর কাম ল্যাব এসিসট্যাণ্ট পদে ও আয়া পদে একজন করে নিয়োগের জন্য একটি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এখানে গত বছরের ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত পুরাতন বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করা হয়। সে অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানে গত ৯ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটর অপারেটর কাম ল্যাব এসিসট্যাণ্ট পদের জন্য ১২ জন ও আয়া পদে চারজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নিয়োগ বোর্ডে ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম টুকু, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে কালিগঞ্জ সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে উপেজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ এর পরবর্তে তারই প্রতিনিধি একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার মন্ডল ও সভাপতি দেবদাস মন্ডল উপস্থিত ছিলেন।

পরীক্ষা গ্রহণের আগে অজয় ও দেবদাস মন্ডলের কোন প্রশ্ন আমলে নেননি আজাহার আলী। পরীক্ষা শেষে কম্পিউটার অপারেটর পদে শ্যামনগরের পূর্ব দুর্গাবাটি গ্রামের মধুসুধন মন্ডল ও আয়া পদে বিষ্ণুপুর গ্রামের তাপসী সরদারকে নির্বাচিত করে চারজন সাক্ষর করে যান। তাৎক্ষণিক সাক্ষরিত ওই শীটে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষে সাইফুল ইসলাম সাক্ষর করেননি। পরবর্তীতে চুড়ান্ত নিয়োগপত্রে শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহ সাক্ষর করে দেন। শিক্ষা অফিসারের নিয়োগ বোর্ডে না থাকায় তার সাক্ষর পরে নেওয়া ও চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন পরিপত্র অনুযায়ি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের ১১ সদস্য কমিটিতে বিরোধ তৈরি হয়। একপর্যায়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি না করায় ৯ মার্চের নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার নির্দেশনা দেন।

সমীর কুমার মন্ডল আরো বলেন, নিয়োগ বোর্ডে মধুসুধন মন্ডল ও তাপসী সরদারকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে মধুসুধন মন্ডলের গত ২১ মার্চের এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাশ ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলী বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় সাংবাদিকদের বিদ্যালয়ের আলোচনাকক্ষে যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার উপর ক্ষিপ্ত হন। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুটি পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হলে তা দ্রুত বাস্তবায়ন ও সম্ভব না হলে প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করার নির্দেশনা দেন।

এদিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, সম্প্রতি নৈশপ্রহরী, দারোয়ান ও পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে যথাক্রমে রাহুল স্বর্ণকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও গৌরাঙ্গ সরকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কমিটির দুইজন প্রত্যেককের নিয়োগ নিশ্চিত করতে ছয় লাখ টাকা করে গ্রহণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তারা আরো জানান, গত ৯ মার্চের নিয়োগ বোর্ডে কমিটির কয়েকজন কম্পিউটার অপারেটর পদে আশিক মাহমুদকে নিয়োগ নিশ্চিত করতে একটি মোটা অংকের আথিক সুবিধা গ্রহণ করেন। অপর কয়েকজন ওই পদে মধু সুধন মন্ডলকে নিয়োগ দিতে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। তবে বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে আয়া পদে তাপসী সরদারকে নিতে সকলে একমত হন। এই তিন জনের কাছ থেকে আট লাখ টাকা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মধুসুধন মন্ডলকে নির্বাচিত করায় আজীবন সদস্য কলেজ শিক্ষক সুব্রত সরদার, বিদ্যোৎসাহী সদস্য সমীর মন্ডলসহ ছয়জন বিরোধিতা করায় জটিলতা তৈরি হয়। সভাপতি দেবদাস মন্ডল, প্রধান শিক্ষক অজয় মন্ডল ও দাতা সদস্য গোবিন্দ লাল সরদারসহ পাঁচজন মধুসুধন মন্ডলের পক্ষে অবস্থান নেন। তবে সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক কমিটির মিটিং ডাকলেও কোরাম পূরণ না হওয়ায় কোন প্রকার সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়ে যায়। তবে বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুধবার বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গ্রন্থগারিক রাধেশ্যাম সরদার বিদ্যালয়ের মিটিং এর রেজুলেশন খাতাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রধান শিক্ষকের কাছে না দিয়ে তার লাল দাদার পরামর্শে নিজে আলমারীতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন। বৃহষ্পতিবার প্রধান শিক্ষককে খাতাপত্র নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে যাওয়ার নির্দেশনা এলে তিনি খাতা ও কাগজপত্র প্রধান শিক্ষককে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন।

তবে গ্রন্থগারিক রাধেশ্যাম সরদারের কাছে বৃহষ্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অপরদিকে মাহবুব শরীফ মুরশেদ তার ছেলে আশিক মাহমুদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে কমিটিকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার না করেই বলেন, পরীক্ষায় তাকে কোন কারণ ছাড়াই ফেল করানো হয়েছে। পূণরায় নিয়োগ বোর্ডের দাবি করেন তিনি।

তবে গোপাল সরদার তার মেয়ে তাপসী সরদারকে আয়া পদে নিয়োগ পেতে কমিটিকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার না করেই বলেন, তার মেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে । তার নিয়োগ দেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাকী বিল্লাহর সঙ্গে বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।

একইভাবে প্রায় একই সময়ে মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলী।

বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার মন্ডল কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেই বলেন, পুরাতন পরিপত্র অনুযায়ি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিয়োগ বোর্ড করা যাবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগে থেকে জানালে কোন সমস্যা সৃষ্টি হতো না। তাই জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত পরিপত্র অনুযায়ি নতুন করে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ চুড়ান্ত করতে বলেছেন।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাশ জানান, বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে জনৈক মধুসুধন মন্ডলের আবেদনের ভিত্তিতে তিনি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আজাহার আলীকে নিয়ে বুধবার সকালে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি নিদ্দিষ্ট কক্ষে তারা কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করার সময় সদস্য সমীর মন্ডল সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতির ব্যাপারে অনুমতি চান। এতে তার সঙ্গে মতানৈক্য ঘটে। সবশেষে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হলে তা দ্রুত বাস্তবায়ন ও সম্ভব না হলে প্রকৃত কারণ উল্লেখ করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেয়া হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাজাহান কবীর জানান, যথাযথ পরিপত্র অনুযায়ি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করায় তা বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে।

(আরকে/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test