E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মধুমতির ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে মহম্মদপুরের বির্স্তীণ জনপদ
   

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৫:৫১:৪৯
মধুমতির ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে মহম্মদপুরের বির্স্তীণ জনপদ   

মহম্মদপুর থেকে ফিরে দীপক চক্রবর্তী : মধুমতির ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জেলার  বির্স্তীণ জনপদ। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে মাগুরার  মহম্মদপুর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের বড় অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। টিকে থাকা বাকি গ্রামগুলোতেও  চলতি বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে।

বিভিন্ন সময় মন্ত্রী এমপি ভাঙন কবলিত গ্রাম পরিদর্শন করেছেন, দিয়েছেন প্রতিশ্রুতি কিন্তু বাস্তবে ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থাই। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডও ভাঙনরোধে (পাউবো) কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর অভিযোগ৷

মহম্মদপুর উপজেলা সদরের পূর্ব পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার শাখা মধুমতির ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের লোকজনের মধ্যে এখন বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। এসব এলাকায় ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। গত তিন দিনে নদী গ্রাস করছে দেড় হাজার একর আবাদি জমি, গাছপাালা বসতভিটা মসজিদসহ কয়েকশ’ স্থাপনা। ভাঙনের মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা। আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তৎকালিন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমান মধুমতি তীরবর্ত্তী সবচেয়ে ভাঙনকবলিত কাশিপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু হবে বলে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতিশ্রুতি দেন। দুই বছরেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না দেখে ক্ষুব্ধ মধুমতি পারের ভাঙনকবলিত লোকজন।

সরেজমিন রবিবার বিকালে মধুমতির ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহম্মদপুর সদর, দীঘা, পলাশবাড়িয়া ও বাবুখালী ইাউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতির পূর্বতীরে প্রায় তিন কিলোমিটার ভেঙে গেছে। ম‏হম্মদপুর সদর ইউনিয়নের গোপালনগর,কাশিপুর, ধুলজুড়ী, মুরাইল, রায়পাশা, ভোলানাথপুর, পাচুড়িয়া, রুইজানী ও পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝামা, আড়মাঝি, কালিশংকরপুরের গ্রামগুলো তীব্র ভাঙন কবলিত। এসব এসব এলাকার নদী তীরের অসংখ্য বসতবাড়ি ইতমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গছে। অসংখ্য স্থাপনা বসতঘর, কৃষি জমি ও গাছপালা হুমকির মুখে রয়েছে।

লোকজন বাড়ি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে গাছপালা বিক্রি করে দিচ্ছেন। উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন কবরস্থান কাশিপুর গোরস্থান থেকে ৫০ গজ দূরে ফুঁসছে মধুমতি। নদী ক্রমেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দিকে এগিয়ে আসছে। ২০কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এ বাঁধ ভেঙে গেলে হুমকির মুখে পড়বে উপজেলার বিস্ত্রীর্ণ জনপদ। মধুমতির হাত থেকে মহম্মদপুর উপজেলাকে রক্ষা করতে সরকারি কোন উদ্যেগ চোখে পড়ছে না।

দেখা গেছে, মধুমতি তীরবর্তী জনপদে বসতিদের মধ্যে এখন বিরাজ করছে তীব্র ভাঙন আতঙ্ক। লোকজন তাদের বসতঘরগুলো এমনভাবে নির্মাণ করছেন, যাতে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়। গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছে লোকজন। কোন বাড়ির ভিটিই পাকা নয়। নদীভাঙনে পাঁচ থেকে সাতবার বসত ভিটা সরিয়ে নিয়েছেন এমন পরিবারের সংখ্যা অনেক। নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে যোগ হয়েছে বৃষ্টি। এতে ভাঙন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। নদী এখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে।

ভাঙনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধুমতির ভাঙনে এসব এলাকার অনেক অবস্থাপন্ন পরিবার এখন নিঃস্ব, পরের জমিতে আশ্রিত। কেউ দিনমজুর কিংবা নৌকার মাঝি। অনেকে সহায়সম্বল হারিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্যত্র।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কাশিপুর গ্রামের পিকুল মোল্যা (৩০), জয়েন উদ্দিন মোল্যা (৭০) মোসলেম শেখ (৫০), পান্নু মোল্যা (৫০), রুইজানি গ্রামের প্রিয়নাথ চৌধুরী (৫০), ভোলানাথপুরের সচিন বিশ্বাস (৬৫), পূর্ণ চৌধুরী ঝামা ও চর ঝামা এলাকার ইয়াসিন মোল্যা (৬০), জাহাঙ্গীর মোল্য (৩৫) ও আলী আফজালের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক সময় তারা অবস্থাপন্ন ছিলেন। গোয়াল ভরা গরু ছিল। ঘরবাড়ি, পুকুর ফসলি জমি সবই ছিল। চোখের সামনে শেষ সম্বল বাপ-দাদার ভিটে নদীতে বিলীন হওয়ার দৃশ্য তারা অসহায়ের মতো চেয়ে দেখছেন।

ধুলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন খাঁন বলেন, ‘মধুমতি আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। আছে শুধু বসত ভিটা। এবার মনে হচ্ছে শেষ রক্ষা আর হবে না।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহীন হোসেন জানান, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। মধুমতির ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সূত্রধর বলেন, মধুমতির ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তারা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

মাগুরা-২ (মহম্মদপুর-শালিখা) আসনের সংসদ সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ্রী বীরেন শিকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধে নদী শাসনের কাজ দ্রুত শুরু হবে।’

(ডিসি/এএস/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test