E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বৈষম্যের নির্মমতায় নড়াইলের দলিত জনগোষ্ঠীর শিশুরা

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১৩:১৯:৩৯
বৈষম্যের নির্মমতায় নড়াইলের দলিত জনগোষ্ঠীর শিশুরা

তানভীর আহমেদ রুবেল,নড়াইল :‘স্কুলি খেলতি গেলি সবাই কয় ওর বাবা মুচি! কেউ আর খেলতি নেয়না’ অবন্তি বিশ্বাস বয়স সবে ১১ ছোট বোনটিকে কোলে নিয়ে এভাবেই  আবেগে, লজ্জায় একের পর এক বলেই গেল অনুযোগ গুলি। নিগৃহীত ও অবহেলিত হওয়ার গল্পগুলো বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলল। অবন্তির বাড়ি নড়াইলের লোহগড়া উপজেলার মুচি পাড়ায়।

শুধু অবন্তিই নয় অবন্তির মত শত-শত দলিত শিশুরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে শিক্ষায়, খেলাধুলায়, শিল্প-সংষ্কৃতিতে, কর্মসংস্থানে। অন্যদিকে নড়াইলের অনেক গ্রামেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দলিত জনগোষ্টির শিশুরা। দলিত জনগোষ্টির শিশুরা বেশির ভাগই অজ্ঞতার কারনে ভাল শিক্ষায়, কর্মসংস্থানে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবহেলিত হওয়ার কারনে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের পড়ালেখার উপর তাগিদ নেই পরিবার প্রধানদের। ছোট বেলা থেকেই বাবা-মায়ের সাথে কর্মস্থলে ছুটে চলা। সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিশুদেও তুলনায় সুবিধা বঞ্চিত দলিত শিশুরা নিজেদের আলাদা ভাবে ভাবতে শুরু করে। মনে করে তারা ভিন্ন কোন জাতের লোক। চিকিৎসা, পুষ্টি, পড়ালেখা এসব কি এবিষয়ে তাদের কোন ধারনা নেই।

দলিত সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ পরিবার প্রধানরা সামান্য টাকা বেতনে পৌরসভা, হাট-বাজার ঝাড়–, বিভিন্ন সরকারী -বেসরকারী অফিসের কাজ করে। সরকাররি কোঠা চালু থাকলেও তাদের চাকুরী হচ্ছে না। ফলে পরিবার– থেকেই শিক্ষার প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। তাই অযথা বসে না থেকে ৭-৮ বছর বয়সেই এসব শিশুরা ঝুকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তবে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুরা পরিশ্রমী। তবে তাদের সু- সংগঠিত হতে অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, প্রাপ্তিসহ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রয়োজন সমবায় সমিতির।

দলিত সম্প্রদায়ের সমাজে প্রচলিত আইন ও নীতিমালা , কুসংষ্কার, দুর্নীতি, সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক প্রথা, মুল্যেবোধ, রীতিনীতির বাধ্যবাধকতা এসব কিছুই তাদের অধিকার আদায়ে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। নড়াইলের লাহুড়িয়া, কাশিপুর, গোপিনাথপুর সহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত দলিত শিশুদের জন্য নেই আলাদা কোন ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ,শিক্ষামূলক বিনোদনের কোন ব্যাবস্থা।

সমীর বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা গরীব ভাল আয় করতে পারিনা তাই বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কাজে নেমে পড়ি’। শিশু শ্রমে বাধ্য করা হতো। দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশুশ্রম।কেউ ভ্যান চালায়, কেউ গ্যারেজে কাজ করে, কেউ হোটেলে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে, মোট কথা বয়স ৭ হলেই কেউ আর বসে নেই। স্কুলে গমনের প্রবনতা থাকলেও বেশির ভাগ মাধ্যমিকে গিয়ে আটকে থাকে। বাল্যবিয়ের হার এদের মাঝে খুব বেশি মেয়েদের ১৩-১৪ বছর বয়স হলেই বিয়ে দেওয়া যেন রিতীমত প্রথা হয়েগেছে। কোন নিবন্ধন ছাড়াই হয় বিয়ে। বিবাহ নিবন্ধন কি তা তারা জানেইনা। স্কুলগুলোতে এসব শিশুদের সব সময়ই পেছনের সারিতে বা পৃথক ভাবে বসতে বাধ্য করা হয। তাদেরকে অবমাননাসূচক নামে ডাকা হয়। সেজন্য দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস কারী এই জনগোষ্ঠী সমাজের শুদ্ধতা রক্ষায় কাজ করলেও তারা ঘৃণ্য ও বৈষম্যের শিকার।

শিশুদের ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করায় আজ তারা প্রতিটা ক্ষেত্রেই পদদলিত হ্েছ। তাই তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে শিশুরা যাতে ভবিষ্যতে দেশের সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান সমাজের প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী ।


(টিএআর/এসসি/সেপ্টেম্বর২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test