E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোহাগড়া পৌরসভা, যেখানে নাগরিক সুবিধা নেই

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৪:৩৩:৪৮
লোহাগড়া পৌরসভা, যেখানে নাগরিক সুবিধা নেই

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি: ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুন, কিন্তু নেই তেমন কোন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। সাধারণ মানুষের অভিমত এর চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদই ভালো ছিল। সেবাও ছিল না, ব্যয়ও ছিল না।

বলা হচ্ছে, নড়াইল জেলার লোহাগড়া পৌরসভার কথা।

উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা, জয়পুর, মল্লিকপুর ও লোহাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১৭টি গ্রাম নিয়ে বিগত বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে শাষনামলে ২০০৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় লোহাগড়া পৌরসভা গঠিত হয়। দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও এ পৌরসভায় কোন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে।

সুযোগ-সুবিধার কথা উঠলেই পৌর কর্তৃপক্ষ সোজা জানায়, ‘অর্থ বরাদ্ধের অভাবে কোন কিছুই ভাল ভাবে করা যাচ্ছে না’।

পৌরবাসী সূত্রে জানা যায়, আয়ের জন্য নির্ধারিত খাতগুলোর ব্যাপারে পৌর কর্তৃপক্ষ তৎপর হলেও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে গড়িমসিসহ নানা তালবাহানা ও অজুহাত দাঁড় করায়। চলতি বছরে পৌরকর ও সকল প্রকার লাইসেন্সের খরচ দুই তিন গুনেরও বেশি বৃদ্ধি করা হলেও বাড়েনি ন্যূনতম সেবার মান।

কর প্রদানকারী এলাকাবাসী ও কর সংগ্রহকারীরা নিশ্চিত করেন যে, বিগত বছর গুলোর তুলনায় কয়েকগুন হারে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবী, বেশিরভাগ লোকজন কর প্রদান করে না।

অন্যদিকে, পৌর এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষজন আলাপকালে বলেন, তারা বছরের পর বছর ধরে কর প্রদান করেও কোন নাগরিক সুবিধা পান না। তাই কিছু কিছু নাগরিক কর প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন।

কিন্তু সকলেই জানান, যে তারা তাদের প্রাপ্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেলে অবশ্যই নিয়মিত নির্ধারিত হারে কর প্রদান করবেন।

শহরের লক্ষ্মীপাশা গ্রামের লিয়াকত বিশ্বাস, ছাতড়ার অধিবাসী ইমরুল কায়েস হীরাঙ্গীর, কচুবাড়িয়ার ফারুক শেখ, রামপুর এলাকার মিজানুর রহমান মিন্টু, সওদাগর পাড়ার জাহিদসহ অন্যান্য পৌরবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভায় কিছু সুযোগ-সুবিধা চাইতে গেলে ভোগান্তির অন্ত থাকে না। খালি নাই আর নাই। রাস্তার কথা বললেই পৌর কর্তৃপক্ষের সোজা উত্তর, বরাদ্দ নেই। এ ভাবে আর কত দিন কর ও খাজনা দিয়ে আমাদের শহরবাসী সেজে থাকতে হবে’।

পৌরসভার আরেকটি উল্লেখযোগ্য আয়ের খাত ট্রেড লাইসেন্স ও হাটবাজারের ইজারা। পাঁচশ টাকার ট্রেড লাইসেন্স এ বছর ব্যবসায়ীদের নিতে হচ্ছে দুই হাজার টাকারও বেশি দিয়ে। এই খাত থেকে কোটি টাকার বেশি আয় করলেও নেই হাটবাজারের উন্নয়ন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এই আয়ের ৪০/৪৫ শতাংশ অর্থ বাজারের উন্নয়নে ব্যয় করার নিয়ম রয়েছে।

পৌর এলাকার হাটবাজার গুলোর রাস্তা-ঘাট ভাঙ্গা-চোরা, নোংরা-কাঁদা পানিতে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু বাজারের রাস্তাই নয়, এলাকার অন্যান্য রাস্তাঘাটেরও চরম বেহাল দশা। পৌরসভা থেকে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখার নিয়ম থাকলেও সেটা করা হয় না। বাজারে পশুর কোন রকম পরীক্ষা ছাড়াই জবাই করা হয়। বাৎসরিক বাজেট তথা আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপনের নিয়ম থাকলেও লোহাগড়া পৌরসভায় যথাযথভাবে তা হয় না। এমনকি পৌর কার্যালয়ে জনগণের জ্ঞাতার্থে বাৎসরিক হিসাব উপস্থাপন দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন বাধ্যতামূলক হলেও তা কখনই দেখা যায় নাই।

এখানে উল্লেখ্য যে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক পৌরসভা কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন ফরমে নাগরিক সেবা প্রদানের ১০টি খাত রয়েছে। সেগুলো হল পানি সরবরাহ, পানি প্রাপ্তি সুবিধা, স্ট্রীট লাইট, স্যানিটেশন পদ্ধতি, পরিচ্ছন্নতা, খাদ্য সামগ্রীর মান নিয়ন্ত্রণ, মশক নিধন, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ, বেওয়ারিশ কুকুর নিধন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। বাস্তবে কয়েকটি এলাকার রাস্তা ঘাটে লাইট ও ঝাড়– দেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়া অন্য আর কোন সেবাই পৌরবাসী পায় না।

লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র নেওয়াজ আহমেদ ঠাকুর বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং এখন থেকে বাজেট ও অন্যান্য তথ্যাবলীর উপস্থাপন যথাযথভাবে করা হবে।

(আরএম/এলপিবি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test