E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন ইউনিটের কাজ শুরু

২০১৫ অক্টোবর ১৯ ১৬:২৫:৫১
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন ইউনিটের কাজ শুরু

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার আরও একটি ইউনিট (৩ নম্বর ইউনিট) স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নতুন ইউনিট নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। ৩ নম্বর ইউনিটটি বাস্তবায়ন শেষে উৎপাদনে গেলে বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে আহরিত কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে খনিমুখে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দু’টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট করে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে সম্প্রসারণ করে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে বলে সুত্রটি জানায়। আর ৩ নম্বর ইউনিটের পাইলিং এর কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার দুই শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সূত্রমতে, দরপত্রদাতার ঋণের (বায়ারস ক্রেডিট) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করে ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। এতে ৩টি বৈদেশিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের শর্ত পুরণ না হওয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করা হয়। চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন ও সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানী নিয়ে গঠিত সিএমসি/এসইসি কনসোর্টিয়াম এবং জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল ও সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী লিমিটেড চায়না এ দুটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়।

বায়ারস ক্রেডিটের আওতায় ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট স্থাপনের বিপরীতে জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী মুল আর্থিক প্রস্তাবে ২৪৮.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২ হাজার ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫শ টাকা), বার্ষিক ৩ দশমিক ২৫ ভাগ (৩.৫%) সুদে ১০ বছরে সমান ২০ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ও নিমার্ণকালীন ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড প্রভৃতি শর্তে দর উদ্ধৃত করে। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতি কিলোওয়াট স্থাপন ব্যয় হবে ৯০৮.৯৮৬ মিলিয়ন ডলার (সুদসহ ১০০০.৬৮ মার্কিন ডলার)।

অপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি/এসইসি কনসোর্টিয়াম অনেক বেশী দর ও শর্ত আরোপ করে। তাছাড়া তাদের কাজের মানও ভাল নয়। এর আগে সিএমসি/ এসইসি কনসোর্টিয়াম বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুটি ইউনিট স্থাপনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। যার ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কখনই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যেতে পারেনি।

সূত্র জানায়, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী সাথে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে পিডিবি-এর টেন্ডার কমিটি নেগোসিয়েশন করে। এরপর দরপত্রটি গ্রহণ করার সুপারিশ করে সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর।

সরকারের ক্রয় কমিটি ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ অনুমোদন করে। জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেকট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর সাথে পিডিবি’র চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। চুক্তি কার্যকর হয় চলতি বছরের ১৫ জুলাই এবং আগস্ট মাস থেকে পাইলিং এর কাজ শুরু হয়। চুক্তি কার্যকরের দিন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩ বছর।

সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মুল ভবন (বয়লার ও মেশিন ভবন) সংলগ্ন উত্তর পাশে পরোদমে পাইলিং এর কাজ চলছে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সারথ চন্দ্র ভাদুড়ী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (আই অ্যান্ড সি) মাহবুবুর রহমান জানান- ৩ নম্বর ইউনিটটিতে বয়লার ও গ্যাস টারবাইন দু’টি সিস্টেমই থাকবে। এর ফলে কয়লা বা গ্যাস যে কোনটিই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিটটি চালু রাখা যাবে।

২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ের ৩ মাস আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তৃতীয় ইউনিটটি বাস্তবায়ন শেষে উৎপাদনে গেলে দেশের উত্তর-পশ্চিম জোনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে এবং লো ভোল্টেজ জনিত সমস্যা কমে আসবে।

এছাড়া, এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যোগ হয়ে ট্রান্সমিশন লস কমাবে। ৩ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখতে বছরে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এতে করে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে বলে তারা মনে করেন।

(এটি/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test