E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাত্যায়নী পূজায় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর মাগুরা শহর

২০১৫ নভেম্বর ২০ ১৩:৩২:১৪
কাত্যায়নী পূজায় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর মাগুরা শহর

দীপক চক্রবর্তী,মাগুরা থেকে :পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারন,উলু ও শঙ্খধ্বনী,শাঁখা,ঘন্টা,ঢাকের বাদ্যের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার মহানবমী এবং আগামীকাল শনিবার দশমী পুজান্তে মাগুরার ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা শেষ হলেও মেলা ও উৎসব চলবে আরও ১০ দিন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও এটি মাগুরার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে রূপ নিয়েছে। এ উৎসব উপলক্ষে সারা শহর সেজেছে বর্ণিল সাজে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন গেট, প্যা-েল, মন্দিরসহ সারা শহরে তৈরি করা হয়েছে আলোকসজ্জা। প্রতিদিন লাখ-লাখ দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখোর গোটা মাগুরা শহর। হচ্ছে পূজা ও মেলাকে ঘিরে। মন্দিরগুলো সাজানো হয়েছে প্রাচীন ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্থাপত্য কলার আদলে।

জেলায় এ বছর জেলায় মোট ৭০টি ম-পে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে পূজার মূল আকর্ষণ থাকবে পৌরসভা এলাকার জামরুল তলা, নতুন বাজার, ছানার বটতলা, বাটিকাডাকা, সাতদোহা, নিজনান্দুয়ালী, পারনান্দুয়ালীসহ শহরের ১২টি ম-পে। এছাড়া শালিখার আড়পাড়া,পোড়াগাছী,রামকান্ত পুর, তালখড়ি, ধনেশ্বরগাতীসহ ২০টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ পূজা। এ কারণে সমস্ত জেলা ঘিরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

প্রতিবছর শারদীয় দুর্গা পূজার একমাস পরেই জাঁকজমকপূর্ণভাবে মাগুরাতে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী ২১ নভেম্বর ৫দিন ব্যাপী এ পূজা শেষ হলেও শহরের নতুন বাজার ও ছানার বটতলায় মেলা চলবে আরো ১০ দিন। যেখানে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারসহ নানা সামগ্রী পাশপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা আয়োজন। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও এ মেলায় অংশ নিতে ইতিমধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছে।

মাগুরা জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের বাসুদেব কু-ু জানান, ১৯৫০ সালের দিকে শহরে পারনান্দুয়ালি এলাকার জনৈক সতীশ মাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এ পূজা শুরু করেন। পেশায় তিনি ছিলেন মুদি দোকানী। সেই থেকেই জেলার মানুষের অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে এই পূজা। ৮০ দশকেও এই পূজা কেবল মাগুরা শহরের ছানার বটতলা, নিজনান্দুয়ালি, নতুন বাজার, বাটিকাডাঙ্গা এবং জামরুল তলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গত দুই যুগে এর ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে সংখ্যাও বেড়েছে অনেক। যার আয়োজন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব হিসেবে পরিচিত দুর্গা পূজার আমেজকেও ছাড়িয়ে গেছে।

শাস্ত্র মতে, দাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আগে গোপবালা বৃন্দ তীরে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর, বন্ধু, স্বামী, পুত্র হিসাবে আরাধনা করতেন। তাদের এক মাসব্যাপি আরাধনা সে সময় কাত্যায়নী পূজা হিসেবে চিহ্নিত হতো। যার সময়কাল ছিল কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস। প্রতিমা স্থাপন থেকে শুরু করে দূর্গাপূজার আদলেই সবকিছু হতো। তবে অতিরিক্ত হিসেবে দেবী দুর্গার কোলে শ্রীকৃষ্ণের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। যার অর্থ দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পাওয়া। যেটি কাত্যায়নী পূজার ধর্মীয় যোগসূত্র।

মাগুরায় এই বর্ণিল পরিবেশের উৎসবে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেপাল ও ভারত থেকেও ছুটে আসেন উৎসাহীরা।
মাগুরার পুলিশ সুপার একেএম এহসান উল্লাহ জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য শহরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ম-পগুলোর আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সর্বক্ষনিক পুলিশ টহলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জামরুল তলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু জানান, কাত্যায়নী পূজা হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব হলেও গত তিন দশকে এটি মাগুরার ঐতিহ্যবাহী উৎসবে রূপ নিয়েছে। যেখানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সানন্দে অংশ নিয়ে থাকে।

(ডিসি/এসসি/নবেম্বর২০,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test