E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মদনে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

২০১৬ অক্টোবর ১৯ ১৪:২৫:২৮
মদনে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

মদন (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চাল বিতরনে ও তালিকা তৈরিতে  নেত্রকোণার মদন উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা এর সুফলতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ তালিকায় দলীয় নেতা-কর্মী, আত্মীয়-স্বজন, সচ্ছল ও একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে।

উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১৬জন ডিলার ৪হাজার ৩শ ৪৩জন লোকের মধ্যে এ চাল বিতরন করবেন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকসহ ১৬জন ডিলারই আওয়ামীলীগের লোক। তালিকার মধ্যে একই পরিবারের একাধিক নামসহ ডিলারের মা, ভাই, বোন, স্ত্রীর নাম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ও ওয়ার্ড নেতাদের স্ত্রীর নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিতরণের নিয়ম থাকলেও এ পর্যন্ত কোন ট্যাগ অফিসার চাল বিতরণ করতে যায়নি।

এ প্রতিনিধির অনুসন্ধানে জানা যায়, ১০ টাকা মূল্যে চাল বিতরণে ৮নং ফতেপুর ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডের সাবেক আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল কালামের পরিবারের গিয়াস উদ্দিন, শাহজাহান, রেনু, ধনাই, মুর্শিদ ১০টাকা কেজি দরে চাল পেয়েছে। ১নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি হাসিম মিয়ার পরিবারেরও ৬টি নাম রয়েছে। আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন কার্যকরী কমিটির সদস্য ৫নং ওয়ার্ডের নূরুল ইসলাম ইউনিয়ন কার্যকরী কমিটির সাধারন সম্পাদক হারু শাহ ও তার ছেলে পাভেল, চাচাত ভাই সেলিম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ডিলার শফিক মিয়ার মা রোকেয়া আক্তার, ভাই লাক মিয়া, আলেক মিয়া, সোনা মিয়া, বোন ববিতা আক্তার, স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের নাম রয়েছে। ৭নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারন সম্পাদক পালন মিয়া, স্ত্রী সাজেদা আক্তারের নামও রয়েছে। অপরদিকে তার স্ত্রীর দুস্থ্য মাতার কার্ডও রয়েছে। ইউনিয়ন কার্যকরী কমিটির উপদেষ্টা মুসলিম উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন, বাড়িতে নেই সুজাত, অসীম, ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মা আদরবানুর নামও এ তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে । ৮নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি নাহার মিয়ার নিজের পরিবারের ৬টি কার্ড রয়েছে। ফতেপুর ইউনিয়নের অপর ডিলার মোতাহার হোসেন খান চাল বিতরনের শুরতেই প্রত্যেক কার্ডধারীর নিকট থেকে ১শ টাকা করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ডিলার এ বিষয়টি অস্বীকার করলেও ট্যাক্স বাবদ ১শ টাকা করে নেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।

এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মাসুদ তালুকদার শ্যামলসহ ১৬ জন আওয়ামীলীগ সমর্থক ডিলারশীপ পেয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে একই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ডিলাররা কালোবাজারীদের মাধ্যমে কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে প্রতি কার্ড বাবদ ২শ থেকে ২শ ৫০ টাকা নগদ হাতে ধরিয়ে দিয়ে মালামাল ক্রয় করছেন। এখানে উল্লেখ্য যে কার্ডগুলো সুবিধাভোগীদের হাতে না দিয়ে ডিলারের কাছে জমা রাখেন।

ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের ও প্রচার সম্পাদক আনিছুল হক জানান, আমার ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সভাপতি নাহার মিয়া ৬টি নামের বিল উত্তোলন করছেন। ফতেপুর ইউনিয়নের কার্ডধারী মালেকা, ললিতা, জহুরা আক্তার খাতুন হেনাসহ ১০ জন জানান, সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম ১০ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি চাল কিনতে গেলে ডিলার মোতাহার হোসেন খান ৪শ টাকা করে রাখেন। তিনি ট্যাক্স বাবদ ১শ টাকা করে রাখার দাবি করলেও কোন ট্যাক্স রশিদ বা টাকা অদ্যাবধি ফেরত দেয়নি। এ ব্যাপারে ডিলার মোতাহার হোসেন খান অতিরিক্ত ১শ টাকার নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব টাকা নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে উক্ত ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ডিলার শফিক মিয়ার মা, ভাই, বোন ও স্ত্রীর তালিকায় নাম থাকার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ নামগুলো আমি বাদ দিয়ে দিব।

ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেনু মিয়া জানান, তালিকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নামের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে নিয়ে তালিকাও করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ট্যাগ অফিসার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, তালিকা তৈরিতে যদি অনিয়ম হয়ে থাকে তবে ১৫দিনের মধ্যে যাচাই বাছাই করে পরিবর্তন করা হবে। ছুটির দিন থাকায় চাল বিতরনের সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক আজিজুর রহমান জানান, তালিকা তৈরিতে অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। এ তালিকা আমার দায়িত্ব নেয়ার পূর্বেই করা ছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী অনিয়মের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ তালিকা আমার সময়ে করা হয়নি, দলীয় নেতার্কর্মীদের মাধ্যমেই করা হয়েছে। তবে এমপি মহোদয়ের নির্দেশে এ তালিকা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। ট্যাক্স বাবদ ১শ টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ডিলারই বলতে পারবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খুরশীদ শাহরিয়র জানান, অনিয়মের বিষয়গুলো ৭দিনের মধ্যে সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে। এরপর অনিয়মের অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এএমএ/এএস/অক্টোবর ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test