E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌতম হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

২০১৬ ডিসেম্বর ২২ ১৭:৫৬:৪১
গৌতম হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ সুপারের প্রেস ব্রিফিং

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : পুলিশের শেখানো কথা গ্রেফতারকৃত আসামীদের শিখিয়ে দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ানোর ব্যবস্থা করে পরে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিং  এর মাধ্যমে কলেজ ছাত্র গৌতম হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামের ইউপি সদস্য গনেশ সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করে তিনি বলেন, তার গ্রামের সাবেক জামায়াতের সভাপতি মোশারফ হোসেনের ভাই আলতাফ হুসাইন জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক। মোশারফ হোসেনের ঘরজামাই জামসেদ খুলনার ফুলতলা এলাকার জনযুদ্ধ বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ও জামাংয়াতের সক্রিয় কর্মী। এ ছাড়া চোরাচালানি রেজাউল শেখের ছেলে সাজু শেখও গরু পাচারকারি।

এ ছাড়া কবিরুল ইসলাম মিঠু, নূর আগম্মেদ মুক্ত. ওমর ফারুখ, মহসিন আলী, আব্দুর রহমান, নাজমুল হাসান, ভাড়–খালির শাহাদাৎ হোসেন, নূর আহম্মেদ শাওনসহ একটি মহল এলাকার পাচারকারি দলের সদস্য ও কুখ্যাত চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। এলাকার সাধারণ মানুষকে জামায়াত শিবিরের লোক হিসেবে পুলিশে ধরিযে দিয়ে ছাড়ানোর নাম করে ব্যাপক চাঁদাবাহি করে আসছিলো। এ নিয়ে তিনি প্রতিবাদ করায় ক্ষুব্ধ ছিল ওই মহলটি।

গত ১৩ ডিসেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ মোশারফ হোসেনের ঘরজামাই জামসেদকে আটক করে। জামসেদকে ছাড়ানোর জন্য চাচাশ্বশুর জেলা জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলতাফ হুসাইন সদর থানার তদন্ত ওসি ও উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান খান এর কাছে তদ্বির করে। যা’ তাকে (গনেশ) মোবাইল ফোনে অবহিত করে ওই দু’পুলিশ কর্মকর্তা। বার বার অরুরোধের পরও ছাড়াতে না যাওয়ায় নুরআহম্মেদ মুক্ত ও আব্দুর রহমান পুলিশকে ওই দিন সন্ধ্যার পর ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে জামসেদকে ছাড়িয়ে আনে। থানা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জামসেদ ও তার শ্বশুর মোশারফ তাকে মোবাইলে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ১৩ ডিসেম্বর পিতৃতুল্য ভগ্নিপতি কৃষ্ণপদ সরকার মারা যান। একই দিনে স্থানীয় মন্দিরে কালীপুজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তারা ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। এমনই সময়ে রাত ৮টার দিকে পার্শ্ববর্তী রুহুল আমিনের দোকসে টেলিভিশনে ফুটবল খেলা দেখার সময় একটি অজ্ঞাত মোবাইল ফোন থেকে তার ছেলে কলেজ ছাত্র গৌতমকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তার(বাবা) কাছে ওই দিনই মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা চাওয়ার জন্য বলে অপহরণকারিরা। বাবার কাছে টাকা চাইতে রাজী না হওয়ায় ১৩ ডিসেম্বর রাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুখের মধ্যে তামাকের (গুল) কৌটা ঢুকিয়ে উলের তৈরি কপিড় দিয়ে মুখ বেঁধে স্কসটেপ মারার পর পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে শ্বাররোধ করে হত্যার পর পুকুরের পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লাশের শরীরে ১২টি ইট বেঁধে একটি বাঁশের খুুঁটির সঙ্গে পানির নীচে ডুবিয়ে রাখা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গনেশ সরকার বলেন, ১৩ আগষ্ট রাতে একটি মোবাইল থেকে পরিচয় না দিয়ে তার মেয়ে প্রিয়ার ফোনে রিং দিয়ে গালিগালাজ করে তাকে (গনেশ) কথা বলতে বলা হয়। এ সময় তিনি ফোর রিসিভ করা মাত্রই ছেলে গৌতমকে ফিরে পেতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। বিষয়টি কাউকে জানালে বা নির্ধারিত স্থানে টাকা পেীঁছে না দিলে গৌতমকে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে লাশ ইছামতী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

বিষয়টি তিনি ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মোশা ছাড়াও সদর সহকারি পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (তদন্ত) কয়েকজনকে অবহিত করেন। এ ঘটনায় ১৪ ডিসেম্বর তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। সন্ত্রাসীরা তার ছেলে গৌতমের মোবাইল ফোন থেকে রিং করে টাকা নেওয়ার জন্য বার বার স্থান পরিবর্তণ করে।

একপর্য়ায়ে ১৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নেদহাচা উপজেলার বগেরা খাস খামার এলাকা থেকে জনতার সহযোগিতায় পুলিশ আলী আহম্মেদ শাওন ও শাহাদাতকে আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ১৬ ডিসেম্বর তিনি শাহাদাৎ হোসেন, আলী আহম্মেদ শাওন, সাজু শেখ, নাজমুল হাসান, কবিরুল ইসলাম মিঠু ও মহসিন আলীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত শাওনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি নাজমুল হাসান, সাজু শেখ ও মহসিনকে জনতার সহায়তায় আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সাজু ও নাজমুল ১৩ ডিসেম্বর রাতে গৌতমকে মোখলেসুর রহমানের পরিত্যক্ত ভিটায় মুখ ও পিঠমোড়া দিয়ে বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর শরীরে ইট বেঁধে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে পানির নীচে ডুবিয়ে রাখার লোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে সদর সহকারি পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত), উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানসহ বহু সংখ্যক জনতার সামনে। সেখানে শাহাদাতকে মুল হত্যাকারি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সাজুসহ কয়েকজন মহসিনের বাড়ি থেকে চুরি করা খাসির মাংশ দিয়ে খাত খাওয়ার পর তাদের বাড়ি থেকে ছাগলের দড়ি ও ইট নিয়ে এসে গৌতমকে হত্যা করা ও লাশ পানিতে ডুবিয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেছে তা উল্লেখ করা হয়। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে শাহাদাৎ জানায় যে, কবিরুল ইসলাম মিঠু তাকে গণেশ সরকারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করার পর ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে। তাদের বক্তব্য অনেকেই মোবাইলে রেকডিং করেন। এরপরও গ্রেফতারকৃত শাহাদাৎ ও নাজমুল হোসেন আদালতে যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও পুািলশের শেখানো বলে তাদের মনে হয়েছে।

এ ছাড়া সাজু শেখ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে যেয়ে রাজী না হওয়া পুলিশের কারসাজি। একইভাবে শাওন ও মহসিনের একদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি কিছুটা পুলিশের দুর্বলতাকে প্রমান করে। অথচ গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এক প্রেসব্রিফিং করে ৫০ হাজার টাকার মুক্তিপণের জন্য গৌতমকে অপহরণ করে হত্যা সম্পর্কিত যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও হত্যাকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

১৭ ডিসেম্বর তিনি (গনেশ) নুর আহম্মেদ মুক্ত, ওমর ফারুক ও জামসেদের নাম উল্লেখ করে সম্পুরক এজাহার দাখির করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া ১৭ তারিখের এজাহারটি কাটছাট করে তার সাক্ষর জালিয়াতি করে রেকর্ড করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গৌতম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

(এইচবি/এএস/ডিসেম্বর ২২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test