E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজনগরে আতংকে দিন কাটাচ্ছে নিম্নবর্ণের সংখ্যালঘু একটি পরিবার

২০১৭ মার্চ ২০ ১৪:১৭:০০
রাজনগরে আতংকে দিন কাটাচ্ছে নিম্নবর্ণের সংখ্যালঘু একটি পরিবার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : রাজনগরে মাথা গোঁজার ঠাই হারানোর আতংকে দিন কাটাচ্ছে নিম্নবর্ণের হিন্দু সংখ্যালঘু একটি পরিবার। ওই সংখ্যালঘু পরিবারটির বসবাস উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নস্থ মোকামবাজারের প্রবেশমুখ সংলগ্ন বালাগঞ্জ-মোকামবাজার-রাজনগর সড়ক ও বালাগঞ্জ-মোকামবাজার-মুন্সীবাজার সড়ক সৃষ্ট বদ্বীপ আকৃতির ভূমিতে।

অর্থ-বিত্ত-ধর্মীয় সংখ্যাগুরুত্বের প্রভাবে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় লোকজনকে হস্তবশীভূত করে এবং উপজেলা প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত করে ওই নিম্নবর্ণের হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারটির মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই উক্ত ভূমিটুকু জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় গবিন্দপুর গ্রামের লন্ডনী মখদ্দছ আলী টেইলার ও তার সহযোগীরা। নিম্নবর্ণের হিন্দু সংখ্যালঘু পরিবারটির সন্তানরা জানান- উপজেলার বেতাহুঞ্জা মৌজাধীন ১৩নং জেএলস্থিত ১৯৩৩নং এস এ দাগযুক্ত এ ১২ শতক ভূমির মূল মালিক মৃত: নরেন্দ্র শীল তার জীবদ্দশায় আনুমানিক ২০/২৫ বছর পূর্বে কমরুদ্দিন (বর্তমানে মেম্বার) ও আবুল হোসেন (সাবেক মেম্বার) এর মধ্যস্থতায় তাদের পিতা মেদিনীমহল গ্রামের ভূমিহীন সীতারাম রুহি দাসকে পরবর্তীতে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার শর্তে মৌখিকভাবে উক্ত ভূমি দানপূর্বক স্বপরিবারে পুণর্বাসিত করেন। এর আনুমানিক ৫ বছরের মধ্যে নরেন্দ্র শীল দেহত্যাগ করেন। পুণর্বাসিত হবার পর থেকে তাদের পিতা সীতারাম রুহিদাস স্বপরিবারে এখানে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তীতে তাদের বড়বোন গোলাপি রুহিদাসের বিয়ের কিছুদিন পূর্বে আবুল হোসেন উক্ত ভূমির পাশেই আরও কিছু ভূমি দেয়ার কথা বলে তাদের পিতা সীতারাম রুহিদাসের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। নরেন্দ্র শীল, কমরুদ্দিন, মঈনুদ্দিন ও অপর এক ব্যক্তির সামনে উক্ত ৩০ হাজার টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু, আবুল হোসেন কোন ভূমিতো নয়ই, সেই টাকাও ফেরত দেননি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ-বিচার হলেও, নিম্নবর্ণের হিন্দু সংখ্যালঘু হিসাবে সামাজিক ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হন তাদের পিতা।

এ অবস্থাতেই তাদের মা সীতাবি রুহিদাস এবং তারা ৫ ভাইবোন (১) গোলাপি রুহিদাস (২) হীরামন রুহিদাস (৩) সুবাগী রবিদাস (৪) নিরঞ্জন রুহিদাস ও (৫) নীলমনি রুহিদাসকে উত্তরাধিকার রেখে বিগত ২০১৪ সালে তাদের পিতা সীতারাম রুহিদাস দেহত্যাগ করেন। এর আগে, অর্থাৎ তাদের পিতার মৃত্যুর বছরকয়েক পূর্বে স্থানীয় বেতাহুঞ্জা গ্রামের জনৈক রব মিয়া জোরপূর্বক তাদের বসতঘর ঘেঁষে ছোট একটি দোকানকোঠা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তাদের পিতার মৃত্যুর পর থেকে উক্ত রব মিয়া একটু একটু করে ওই ছোট কোঠাকে বেশ বড় দোকানকোঠায় পরিণত করেন। তারা এ নিয়ে কথা বললে “এই ভূমি তোমাদের নয়, তোমরা কথা বলার কে” বলে রব মিয়া তাদেরকে হুমকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। ফলে, আতংকিত হয়ে তারা আর এ নিয়ে টু শব্দটি করার সাহস পায়নি। অপরদিকে, তাদের পিতার মৃত্যুর পর থেকেই সহযোগী সাদত মিয়া, নুরুল ইসলাম, লিয়াকত আলী, সাদেক মিয়া, নজরুল ইসলাম, মতছির আলী, ইব্রাহীম আলী, রাজন মিয়া, ফখরুল ইসলাম, রশিদ আলী, মাহমুদ আলী প্রমুখের সহযোগীতায় স্থানীয় গবিন্দপুর এলাকার লন্ডনী মখদ্দছ আলী টেইলার উক্ত ভূমি জবরদখলে নেয়ার চেষ্টা শুরু করেন।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান লয়লুছকে দিয়ে উক্ত ভূমি সরকারি ভূমি মর্মে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত করে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই উক্ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ চেষ্টায় তাদের বসতঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে তাদের ভাই হীরামন রুহিদাসকে গরুচোর সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে হয়রানী করা হয়। তাদের নির্যাতন হয়রানী থেকে বাঁচতে হীরামন রুহিদাস ভাইবোন ও নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে অদ্যাবধি সেখানেই দিনাতিপাত করছেন। অন্যান্যরা সৃষ্টিকর্তার দয়ানির্ভর হয়ে কমরদ্দিন মেম্বার ও স্থানীয় কিছু মানবতাবোধ সম্পন্ন মানুষের উছিলায় ছোট্ট একটিমাত্র ঘরে গাদাগাদি করে উক্ত ভূমিতেই কোনরকমে বসবাস করছেন চরম অনিশ্চয়তার মাঝে।

প্রয়াত সীতারাম রুহিদাসের স্ত্রী-সন্তানরা আক্ষেপ করে বলেন- আমরা ভূমিহীন এবং এ দেশেরই নাগরিক। এ ভূমির মালিক প্রয়াত নরেন্দ্র শীল দয়া করে এ ভূমিটুকু আমাদেরকে দান করেছেন। অথচ, এটাকে সরকারী খাস ভূমি উল্লেখ করে মখদ্দছ আলী টেইলার লন্ডনী আমাদেরকে উচ্ছেদ করে নিজ দখলে নিতে চাচ্ছেন। সরকারি খাস ভূমি হলেতো এ ভূমির মালিক সরকার। তাহলে পাবলিক কেন আমাদেরকে উচ্ছেদ করবে? তাছাড়া, এলাকার সব সরকারি খাস ভূমি এলাকার বিভিন্ন লোকজন ভোগ-ব্যবহার করছে। তাহলে আমরা ভোগ-ব্যবহার করতে অন্যের আপত্তি কেন ? অন্য লোকজন সরকারি খাস ভূমি ভোগ-ব্যবহার করলেও, কেউ টু শব্দটি করছেনা। অথচ আমাদেরকে উচ্ছেদ করতে প্রায় সবাই একজোট। আমরা হতদরিদ্র অসহায় ছোটজাত হিন্দু বলেই নিগৃহ-নির্যাতন-হয়রানী করা হচ্ছে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হয়েও, আমরা সেই মানুষেরই নিগৃহ-নির্যাতন-হয়রানীর শিকার হচ্ছি। হতদরিদ্র, অসহায়, হিন্দু, সংখ্যালঘু ও সর্বোপরী ছোটজাতের হিন্দু হওয়াটাই কি আমাদের অপরাধ?

(এএফবি/এএস/মার্চ ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test