E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এসডিএস ও আইটিসিএল-এর চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী কারাগারে

২০১৭ মে ১৮ ১৭:৪২:২৮
এসডিএস ও আইটিসিএল-এর চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী কারাগারে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড (আইটিসিএল) এবং এসডিএস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশ বুধবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় শত কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে চারটি মামলায় তার সাজা হয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের নগর জলফৈ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ঢাকা থেকে বাসে এসে সেখানে নেমেছিলেন। পুলিশ জানায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতে গ্রাহকদের করা চারটি মামলায় ইতিমধ্যে সাজা হয়েছে। এছাড়া ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ান রয়েছে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর বিরুদ্ধে।

পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, ৯০ দশকের শুরুতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) নামক একটি সংগঠন করেন। টাঙ্গাইল সমাজ সেবা বিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে শুরু হওয়া এই সংগঠন টাঙ্গাইল শহর ও আশপাশের এলাকায় ক্ষুদ্র ঋন ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করেন। চার উদ্যোক্তার ঐক্য দৃঢ় করার জন্য সিরাজীরা চার বন্ধু একই পরিবারের চার মেয়েকে বিয়ে করে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন।

এসডিএস-এর প্রসার ঘটার পর ৯৬ সালে তারা এর অঙ্গসংগঠন হিসেবে আইটিসিএল প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। খুব অল্প সময়ে শুধু টাঙ্গাইল নয়, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করার পর ঢাকার গুলশানে তারা অফিস নেন। তাদের অবৈধ কার্যক্রমের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপদেষ্টা পদে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি এলাকায় দুই শতাধিক একর জমির উপর কৃষি খামার গড়ে তোলে এসডিএস।

২০০২ সালে আইটিসিএল-এর আমানত সংগ্রহকে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পর গ্রাহকরা টাকা তোলার জন্য ভীড় করেন আইটিসিএল-এর বিভিন্ন কার্যালয়ে। গ্রাহকদের চাপের মুখে এক পর্যায়ে আইটিসিএল-এসডিএস-এর সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কর্মকর্তারা সব গাঁ ঢাকা দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইটিসিএল কর্তৃপক্ষের নামে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা মামলা করেন। ওই বছর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক করতে আসলে পুলিশ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে গ্রেপ্তার করে। সাড়ে আট বছর জেল হাজতে থাকার পর সিরাজী জামিন লাভ করেন। তিনি আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইটিসিএল-এসডিএস-এর নামে থাকা সকল সম্পত্তি বিক্রি করে জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত তহবিলে জমা রাখবেন এবং সেখান থেকে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু তিনি জামিন পেয়ে আর টাঙ্গাইল আসেননি। আত্মগোপন অবস্থা থেকেই তিনি গোপনে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন-এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামিনে মুক্তি লাভ করেন ইসমাইল হোসেন সিরাজী। কিন্তু ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও একজন গ্রাহকের টাকাও তিনি ফেরত দেননি। গ্রাহকদের করা একাধিক প্রতারনা মামলায় তার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়েছে।

(এমএনআই/এএস/মে ১৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test