E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারের কুখ্যাত মামলাবাজ মেহের আলীর অত্যাচারে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী!

২০১৭ মে ২০ ১৪:৩১:৫৯
মৌলভীবাজারের কুখ্যাত মামলাবাজ মেহের আলীর অত্যাচারে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুখ্যাত মামলাবাজ মেহের আলীর অত্যাচারে ফুঁসে উঠছে নিজ এলাকার সাধারণ জনগণ। গত দুই দশক যাবত তার অত্যাচার নিরবেই সহ্য করছে সদর উপজেলার ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের তার নিজ গ্রাম জগন্নাথপুরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। মিথ্যা মামলা, হয়রানী ও প্রকাশ্যে হুমকির কারণে এত দিন ভয়ে মানুষজন প্রতিবাদ না করলেও এখন তার অপকর্মের বিরুদ্ধে গোটা এলাকার সাধারণ মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠছেন। আর এসব ঘটনায় যে কোন সময় এলাকায় ঘটতে পারে অনাকাংখিত দুর্ঘটনা।

মামলাবাজ মেহের আলীর একমাত্র পেশা হল জায়গা জমির দলিল জাল করে তার নিজ তার নামে চালিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন সম্মানী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নামে বেনামে ভুয়া মিথ্যা হয়রানী মূলক মামলা করে জেলে পাঠানো, চাঁদাবাজি ইত্যাদি। মেহের আলী বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ক্ষেত্রে বেছে নেয় অশিক্ষিত,গরিব ও অসচ্ছল নারীদের,যাদেরকে মোটা অংকের টাকার বিনিমিয়ে জাল কাবিননামা ও আসলনাম পরিচয় গোপন রেখে আদালতে মিথ্যা মামলা করে থাকে। বিষয়টি এতদিন গোপন থাকলেও এখন তা সম্পূর্ণ দিনের আলোরমত প্রকাশিত সত্য। যেসব নারীদের দিয়ে মামলা করাতো মেহের আলী, এসব নারীরা এখন অকপটে টাকার লোভে মিথ্যা মামলা করেছে বলে এলাকার বিভিন্ন মহলের কাছে স্বীকার করে নিয়েছে। আর এসব কারণেই যারা ভুক্তভুগি তারা এখন ফুঁসে উঠছেন মেহের আলীর এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে। এদিকে সূত্রে জানা গেছে মেহের আলীর রাজনৈতিক কোন পরিচয় না থাকলেও বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শাষনামলে সাবেক প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ভাই মরহুম মানি মিয়ার ছত্রছায়ায় মূলত আলোচনায় আসে তৎকালিন সময় থেকে। রাজনৈতিক সুবিধাবাদী মেহের আলী যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন, সব অবস্থায়ই দাপুটের সাথে চলে তার সকল অপকর্ম।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে ভুক্তভুগি অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেখানেই দু পক্ষের মধ্যে জায়গাজমি বা ব্যক্তিগত বিরোধ হচ্ছে, সেখানেই মেহের আলী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে কোন পক্ষের হয়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে মামলা করে ইন্ধন দিচ্ছে, ফলে এসব কারণে কখনো কখনো দু পক্ষের মধ্যে মারামারি থেকে শুরু করে খুন খারাবির মত ঘটনাও অতীতে ঘটেছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, গত ১০ এপ্রিল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মৌলভীবাজার বরাবর ভুয়া ঠিকানা ও জাল কাবিন ব্যবহার করে মিনারা বেগম নামের এক মহিলাকে দিয়ে সদর উপজেলার ১১ নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি মৃত আছলম উল্লার ছেলে ও ৩ সন্তানের জনক মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঐ মহিলার স্বামী দাবি করে যৌতুক আইনে মেহের আলীর চাপে পড়ে টাকার বিনিময়ে একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে (মামলা নং ৪৯/১৭)। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। পরে দেখা যায় মিনারা বেগম নামের ঐ মহিলা জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে মিনারা বেগম নামের ঐ নারীর আসল নাম রুনা বেগম তার স্বামীর নাম মোঃ সামছুল ইসলাম। ঘটনার প্রেক্ষিতে ১১ নং মোস্তাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ তার নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিনারা বেগম মেহের আলীর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে সে জানায়, মেহের আলী তাঁকে ভুল বুঝিয়ে টাকা দিয়ে এসব করিয়েছে। পরবর্তিতে মৌলভীবাজার মডেল থানা সূত্রে জানা যায় এ ঘটনায় মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর। ঘটনার পর থেকে মুহিবুর রহমান ভয়ে গ্রাম ছাড়া হয়ে যান । পরে গত ১১ মে বৃহস্পতিবার মুহিবুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আদালত মিনার বেগমের কাছে জানতে চান যে মুহিবুর রহমানকে জামিন দিলে তার কোন আপত্তি আছে কিনা জবাবে সে আদালতকে জানায় যে মুহিবুর রহমানের সাথে তার সমঝোতা হয়েছে বিধায় তাঁকে জামিন দিতে তার কোন আপত্তি নেই।

এলাকার একজন সম্মানী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরকম মিথ্যা, ভূয়া ও হয়রানী মূলক মামলার প্রেক্ষিতে গ্রামের সাধারণ মানুষ রয়েছেন আতংকে, কখন কার উপর অজানা মিথ্যা মামলার খড়গ নেমে আসে। মিথ্যা মামলার বিষয়ে মিনারা বেগম (আসল নাম রুনা বেগম) নামের ঐ নারীর মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমেই তার পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান, পরে ফোনটি অন্য এক পুরুষ ব্যক্তি রিসিভ করেন। তার কাছে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ঐ নারীর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, মেহের আলী এ এলাকার কুখ্যাত এক দালাল, সে ঐ নারীকে ভুল বুঝিয়ে এই মিথ্যা মামলা করিয়েছে। এর পর আর ঐ ব্যক্তি কোন কথা বলতে চাননি এ প্রতিবেদকের সাথে ।

এদিকে মেহের আলীর অপকর্মের বিরুদ্ধে সর্বশেষ গত শুক্রবার পুরো এলাকার মানুষ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ এর বাড়িতে এক সালিসি বৈঠককের আয়োজন করা হয়। সালিসি বৈঠক ঠেকাতে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ওয়াছির মিয়াকে ব্যবহার করে মেহের আলী তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বিভিন্ন চেষ্টা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে সবশেষে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাহসী ভূমিকায় সালিসি বৈঠকে প্রথমে মেহের আলী তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাখান করলেও পরবর্তিতে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে এলাকাবাসী ও উপস্থিত স্থানীয় চেয়ারম্যানের সামনে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে আর এরকম কোন মানুষকে হয়রানী না করার প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয় । অন্যদিকে যে নারীকে দিয়ে মেহের আলী মিথ্যা মামলা করেছিল সালিসি বৈঠকে ঐ নারীও উপস্থিত ছিল। পরে তাঁকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাঁকে সে চিনেনা, তাঁকে মেহের আলী রাস্তায় আটকিয়ে জোরপূর্বক মামলার কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে ব্লাককমেইল করে আদালতে উপস্থিত করে।

হয়রানীর স্বীকার মুহিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, মেহের আলী শুধু আমাদের গ্রাম নয় পুরো সদর উপজেলার এক আতংকের নাম। কেননা আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কেউ কোনরূপ প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্ত করতে পারেননি। বর্তমানে মেহের আলী আমি এবং আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার ভয়ভীতি ও চক্রান্তে লিপ্ত আছে। যা নিয়ে আমার পরিবারের সবাই আতংকে আছি। তিনি বলেন, তার ভয়ে অনেক সময় বিবাদীদের লোকজন আদালতে হাজিরা পর্যন্ত দিতে ভয় পায়।
অনেক সময় বিবাদীগণের মামলার আইনজীবিদের সহকারীকে আদালত চত্তরে হামলার শিকার পর্যন্ত হতে হয়েছে, ঐ সব ঘটনার প্রেক্ষিতে আইনজীবিদের সহকারীরা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চালাতে কিংবা লিখতে ভয় পান।

মেহের আলীকে তার নিজ গ্রাম জগন্নাথপুরসহ সদর উপজেলার ভুক্তভুগি অনেক মানুষ তাকে ভয়নংকর একজন ভূমি সন্ত্রাসী হিসেবে জানে । অনেক মানুষ তার নাম শুনলে আতংকে আঁতকে উঠে অজানা মামলার ভয়ে। অনেকে হয়রানী মূলক মিথ্যা মামলায় বির্পযস্ত হয়ে পথে বসেছেন, পাচ্ছেননা কোন প্রতিকার ।

এর আগে ২০১৩ সালের দিকে মেহের আলী এরকম ভুয়া মিথ্যা নারী কেলেংকারীর মত জঘন্য মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে ১১ নং মোস্তাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও আওয়ামীলীগ নেতা আশি বছর বয়সী আলহাজ্ব আজমত আলীর বিরুদ্ধে। মাস তিনেক পূর্বে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত মৌলভীবাজার বরাবর একই মহিলা, ভুয়া ঠিকানা, জাল কাবিন ও নাম ব্যাবহার করে মিথ্যা মামলা (মামলা নং সি আর ১৪৮/২০১৬) দিয়ে হয়রানী করিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা প্রবাসী জাহাঙ্গিরের ছোট ভাই কিশোর মিলাদ হোসেনকে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পায়নি ঐ কিশোর। যৌতুক আইনে মামলা দিয়ে হয়রানী করে সহিদ মিয়া মাহালদার, মৃত ছালিক মিয়াসহ নাম না জানা আরো অনেকের বিরুদ্ধে। এর বাহিরে মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার ব্যবসায়ী অলিউর রহমান, ব্যবসায়ী সৈয়দ নুরুলসহ আরো অনেকেই মেহের আলীর দেয়া মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে মেহের আলীর জায়গা নিয়ে ব্যক্তিগত বিরোধ চলছিল তাদের বিরুদ্ধেই মামলায় হেরে গিয়ে বেনামে ভূয়া নাম ব্যবহার করে মামলা করে দেয়। এখানেই শেষ নয় গত কয়েক মাস পূর্বে মেহের আলীর সাথে মুহিবুর রহমানের যে জায়গা নিয়ে বিরুধ চলছিল দীর্ঘদিন যাবত সেই বিষয়ে উচ্চ আদালত মুহিবুর রহমানের পক্ষে রায় দিলে এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য মেহের আলী রায় তার পক্ষে হয়েছে বলে প্রচার করে আশে পাশের লোকজনের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করতে থাকে। এ রায়ের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েই মেহের আলী একের পর এক মিথ্যা মামলা করে আসছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে সর্বশেষ নারী দিয়ে যে মামলাটি মেহের আলী করিয়েছে প্রতিবেশী মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে, সেটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এতদিন যাদেরকে এরকম মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে এবং এসব মামলার কোন তথ্য প্রমান পাওয়া যেতনা এখন তারাও মেহের আলীর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সোচ্চার হচ্ছেন দিনদিন।

(একে/এএস/মে ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test