E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় পুলিশের নির্যাতনে মাদ্রাসা সুপার নিহত!

২০১৭ সেপ্টেম্বর ১৬ ১৯:৪৯:১৩
সাতক্ষীরায় পুলিশের নির্যাতনে মাদ্রাসা সুপার নিহত!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে পুলিশ এক মাদ্রাসা সুপারকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোর তিনটার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পুলিশের দাবি, ওই শিক্ষক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত থাকায় মারা গেছেন।
নিহত মওলানা সাঈদুর রহমান (৪৮) কলারোয়া উপজেলার বাঁকশা- হঠাৎগঞ্জ মাদ্রাসার সুপার। তিনি সদর উপজেলা কাথন্ডা গ্রামের দিলদার সরদারের ছেলে।

সাতক্ষীরা টেকরিক্যাল স্কুল এণ্ড কলেজের ডিপ্লোমা তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র কাথণ্ডা গ্রামের মোত্তাসিন বিল্লাহ জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান, উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার ও সহকারি উপপিরিদর্শক সুমনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল চাচা সাইদুর রহমানকে আটক করে। অসুস্থতার জন্য মোটর সাইকেলের তেল খরচ ৫০০ টাকা নিয়ে মওলানা সাঈদুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে তাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান। পরে তাকে কাথন্ডা বাজারে নিয়ে এসে পাঁচ লাখ টাকার দাবিতে নির্মমভাবে মারপিট করে পুলিশ। তার অবস্থা খারাপ হতে থাকায় বিষয়টি এক দালালের কাছে মোবাইলে জানতে চান উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার।

দালাল ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন যে সাইদুর রহমান নাটক করছে। একপর্যায়ে সেখানকার পল্লী চিকিৎসক আবদুল্লাহর চেম্বারে দেখিয়ে তাকে সদর থানায় নিয়ে আসা হয়।সেখানেও টাকার জন্য তাকে দফায় দফায় নৃশংসভাবে নির্যাতন করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে চাচী ময়না খাতুনসহ কয়েকজন থানা লকআপে দেখা করতে যান। তাকে খাবার দেওয়ার সময় নির্যাতনের বিষয়টি তারা জানতে পারেন। বিকেল চারটার দিকে তাকে সদর থানার ৬১/১৭ ও ৮০/১৭ নং বিচারাধীন নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নিয়ে গেলে কোর্ট পুলিশ তাকে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল ৫টার দিকে তাকে আবারো আদালতে এনে সেখানে পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। রাত ১১টার দিকে কারা হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তড়িঘড়ি করে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে শনিবার ভোর তিনটার দিকে তাকে মৃত দেখানো হয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী আব্দুস সবুর জানান, কারাগার থেকে রাত একটার দিকে তার মামা সাইদুর রহমানকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও তার কাছে তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। ভোর তিনটার দিকে তাকে মৃত বলে ঘোষনা দেওয়া হলেও তিনি কয়েক ঘণ্টা আগেই কারা হাসপাতালে মারা গেছেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

মৃতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে শনিবার ভোরে হাসপাতালে গেলে সাঈদুর রহমানের গায়ে হাত দিতে দেওয়া হয়নি। পরে লাশ উঁচু করে দেখেন যে পিঠের একটি জায়গা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। হাতে ও পায়ে একাধিক রক্ত জমা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ভাই এর শরীরে।

মৃতের স্ত্রী ময়না খাতুন, মেয়ে তামান্না ও ছেলে ছাদিক হোসেনের দাবি, সাঈদুর রহমানের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।

সাতক্ষীরা কারাগারের সুপার হাফিজুর রহমান জানান ‘কারাগারের মধ্যে ওই রাতে সাঈদুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে । মধ্যরাতে তাকে স্থানান্তর করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা চলছিল’। কারা হাসপাতালে সাইদুরের মৃত্যুর বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

সাতক্ষীরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফরহাদ জামিল বলেন ‘ হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলছিল। শনিবার ভোর তিনটার দিকে মারা যান তিনি। তিনি নিহত মাদ্রাসা সুপার মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ণ পাওয়া গেছে বলে জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি জামায়াত কর্মী সাঈদুরকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করেননি। তার কাছে ঘুষও চাননি । আগে থেকেই তিনি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এর পর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য তার কাছে নেই।

কে এই আসাদুজ্জামান?
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান গ্রামে গ্রামে আসামি ধরার নামে বেপরোয়া আচরন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিরাতে আসামি ধরে মারপিট করে তাদের কাছ থেকে আদায় করছেন মোটা অংকের ঘুষের টাকা। ঘুষ দিলে অথবা না দিলেও তাকে জেল ভোগ করতে হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আধুনিক জুয়েলার্সে তিন’শ ভরি সোনার গহনা চুরির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত এক আসামী মুকুল প্রকাশ্য আদালতে বলেন যে ওই সোনা সে উপপরিদর্শক আসাদকে দিয়েছে। যদিও পরে ওই আসামীতে উপপরিদর্শক আসাদ রিমাণ্ডে নিয়ে এসে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করান। গত ২৭ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের কুলিয়াডাঙ্গা গ্রামের আক্তারুল ইসলামকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন আসাদুজ্জামান।

এ সময় তার কাছে থাকা চারটি ছাগল বিক্রির টাকা ঘুষ হিসাবে দাবি করে। অন্যথায় তাকে জামায়াতের মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে বলে চাপ প্রয়োগ করেন। আক্তারুল ইসলাম এ টাকা দিতে চাননি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। নির্যাতন করে তার কাছ থেকে আদায় করেন ৬৫ হাজার টাকা ঘুষ। পরদিন আক্তারুলকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। আক্তারুলের অভিযোগ তিনি ঈদ উপলক্ষে চারটি পোষা ছাগল বিক্রি করেছিলেন। পুলিশ সে টাকা নিয়ে নিল। এ নিয়ে মার খেলাম, মামলাও খেলাম। তবে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ সাদা পোশাকে শাঁখরা এলাকার এক কৃষককে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক লাখ টাকা দাবি করে।

ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদেরকে আটকে রাখেন তিন ঘণ্টা। পরে একটি ভুয়া ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ওই আসামীকে থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তবে আসাদুজ্জামান বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test