E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১ লক্ষ টাকা না পেয়ে মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২০ ১৩:৪৬:০৬
১ লক্ষ টাকা না পেয়ে মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দাবিকৃত এক লাখ টাকা না পেয়ে এক মাদ্রাসা সুপারকে সাপের মত পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে দুইজন উপপরিদর্শক ও দুইজন সহকারি উপপরিদর্শকসহ অজ্ঞাতনামা দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথণ্ডা গ্রামের দেলদার রহমানের ছেলে মৃতের ভাই বজলুর রহমান বাদী হয়ে মঙ্গলবার সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামীরা হলেন, সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান (৩৮), উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার হোসেন (৪০), সহকারি উপপরিদর্শক শেখ সুমন হাসান (৩৫) ও সহকারি উপপরিদর্শক আশরাফুজ্জামান (৩৬)।

মামলার বিবরনে জানা যায়, সাঈদুর রহমান(৪৮) কলারোয়া উপজেলার বাকসা হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহষ্পতিবার মাদ্রাসার কাজ শেষে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথণ্ডা গ্রামের নিজ বাড়িতে ফেরেন। বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে অর্থাৎ শুক্রবার রাত দু’টোর দিকে নিজের ঘরে সস্ত্রীক ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় তিনটি মোটর

সাইকেলে যেয়ে পুলিশ পরিচয়ে তাকে দরজা খুলতে বলা হয়। কোন মামলা নেই ও গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় তিনি দরজা খুলতে চাননি। ঘরে ঢুকেই পুলিশ সাঈদুর রহমানের দু’ হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেয়।

জানতে চাইলে গালিগালাজ করে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। সাঈদুর রহমান পাঁচ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না বলায় তাকে গলা ধাক্কা দিতে দিতে ঘরের বাইরে আনা হয়। বাড়ির
উঠানে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান, উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার হোসেন ও সহকারি উপপরিদর্শক সুমন হোসেন লাঠি দিয়ে সাঈদুরকে পেটাতে থাকে। সহকারি উপপরিদর্শক আশরাফুজ্জামান
তার শরীরের এলোপাতাড়ি লাথি মারে। স্বজনদের কান্নাকাটিতে স্থানীয় লোকজন ছুঁটে এলে তাদের সামনে ওই চার পুলিশ কর্মকর্তা সাঈদুরের মুক্তির জন্য এক লাখ টাকা দাবি করেন।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বাদিসহ তিনজন সাঈুদরকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেন। এরপরও আসাদুজ্জামান, সুমন হোসেন ও আশরাফুজ্জামান থানার গারদের মধ্যে সাঈদুরকে বেত ও লাঠি দিয়ে
বেদম মারপিট করেন। একপর্যায়ে তারা টাকা দিতে রাজী হয়ে সাঈদুরের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলার সময় মলদার দিয়ে রক্ত পড়ছে বলে সাঈদুর তাদেরকে জানায়।

এর কিছুক্ষণ পর সাঈদুরকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতের গারদখানায় দেখা করলে সাঈদুর রহমান জানায় যে নির্যাতনে তার সারা শরীর ফুলে গেছে। মলদার দিয়ে থান থান রক্ত পড়ছে। উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান তার পেটের উপর উঠিয়া পা দিয়ে চাপ দিয়ে পাক দিয়েছে। বাঁচবে না বলে সে চাপা আত্মনাদ করলে বাদীসহ কয়েকজন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন । সন্ধ্যার পর
সাঈদুরকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শুক্রবার দিবাগত রাত দুই টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শনিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে তারা আবারো হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদুর মারা
যান।

প্রসঙ্গত, লাশের ময়না তদন্ত শেষে সাতক্ষীরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফরহাদ জামিল বলেন যে, নিহত মাদ্রাসা সুপার মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ণ পাওয়া গেছে ।
মাওলানা সাঈদুর রহমান কাথণ্ডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। তাকে সদর থানার জিআর-১৮১/১৭ ও জিআর -৫৪৮/১৭ বিচারাধীন মামলায় গ্রেফতার
দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তার হাজতী নং ছিল ৪৪৯০/১৭। মৃত্যুর ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানায় ৮৪/১৭ নং অপমৃত্যু মামলা হয়।

জানতে চাইলে সদর থানার উপপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান সাঈদুর রহমানের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি জামায়াত কর্মী সাঈদুরকে গ্রেফতার করলেও নির্যাতন করেননি। আগে থেকেই তিনি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আবু বক্কর ছিদ্দিক সাতক্ষীরা সদর থানার চার পুলিশ কর্মকর্তা ও অজ্ঞাতনামা দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনের খুলনা শাখার পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার জানান, আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার পর তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেনে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test