E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যা

পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদীর বাড়িতে হামলা

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২২ ১৪:২২:৩৮
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদীর বাড়িতে হামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : টাকার দাবিতে সাতক্ষীরার এক মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করায় বাদির বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। হেলমেট ও মুখে কাপড় বাঁধা সন্ত্রাসী ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ বারান্দার গ্রীল ও দরজা ভাঙচুর করে ঘরে ঢুকে পড়ে। পরে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পর বাদির স্ত্রীর বুকে বন্ধুকের নল ঠেকিয়ে তার স্বামীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে। দোতলার দরজা ভেঙে  ছেলেকে মারপিট করে তার ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্ট ফোনটি লুট করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথণ্ডা গ্রামে শুক্রবার ভোর তিনটা থেকে ঘণ্টাব্যাপি এ হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার বাকসা হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার সদর উপজেলার কাথণ্ডা গ্রামের দেলদার রহমানের ছেলে সাঈদুর রহমানকে (৪৮) গত ১৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত দু’ টোর দিকে সস্ত্রীক ঘুমিয়ে থাকাকালিন দরজা খুলতে বাধ্য করে সদর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান, উপপরিদর্শক পাইক দেলোয়ার হোসেন, সহকারি উপপরিদর্শক শেখ সুমন হাসান ও সহকারি উপপরিদর্শক আশরাফুজ্জামানসহ কয়েকজন পুলিশ ।

গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া আটক করা হবে কেন জানতে চার পরিবারের সদস্যরা। এক পর্যায়ে তাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে হাতকড়া পরিয়ে উঠানে এনে মারপিট করা হয়। পুলিশের পায়ে ধরে অসুস্থ সাঈদুরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান তাদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পাঁচ হাজার টাকা দিতে চাইলে তারা সুপারকে কাথণ্ডা বাজারে এনে মারপিট করে। পরে তাকে থানায় নিয়ে এসে কয়েক দফায় মারপিট করা হয়। দুটি বিচারাধীন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলখানায় পাঠানো হয়।

শনিবার ভোর পাঁচটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদুর রহমান মারা যায়। শুক্রবার কোর্ট গারদে দেখা করলে পুলিশের নির্যাতনে তার মলদার দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে বলে জানান সাঈদুর। সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ ফরহাদ জামিল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন সাঈদুরের হাতে ও পায়ে পুরাতন আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানান।

এ দিকে সাইদুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে তার ভাই বজলুর রহমান গত ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে Íকেটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই চার পুলিশ কর্মকর্তা ও অজ্ঞাতনামা দু’ পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হয়। বিচারক হাবিবুল্লাহ মাহমুদ আগামি৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ইনভেস্টিগেশান ব্যুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

কাথণ্ডা গ্রামের রাকিবুজ্জামান জানান, শুক্রবার ভোর তিনটার দিকে কয়েকটি মোটর সাইকেল রাস্তার উপর রেখে ১৮/২০ জনের একদল হেলমেট ও মুখোশধারী সন্ত্রাসী ও সাদা পোশাকে ওয়ালেসধারী তিনজন পুলিশ তাদের বাড়ির বারান্দার গ্রীল ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে। গ্রীলের দরজা ভেঙে ফেলায় বাধ্য হয়ে তার মা মঞ্জুয়ারা বেগম দরজা খুলে দেন। এ সময় কাছে ওয়ারলেস থাকা এক পুলিশ সদস্য মায়ের বুকে বন্দুকের নল ঠেকিয়ো বলে যে, তোর স্বামী কোথায়? তিনি বাড়িতে নেই বলায় পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা মাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। কিছুক্ষণ পর তারা দোতলার দরজা ভেঙে তার ঘরে ঢোকে। তাকে মারপিট করে বাবার খবর জানতে চায়। একপর্যায়ে হামলাকারিরা তার ২০ হাজার টাকা মূল্যের স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়। ঘণ্টাব্যাপি তাণ্ডব চালানোর সময় রবিবার আদালতে যেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নিলে তার অবস্থা হবে ভাই সাঈদুরের মতো বলে চলে যায়। বজলুর রহমান বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে তাদেরকেও রেহাই দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে যায় তারা।

কাথণ্ডা গ্রামের মোঃ আমিনুর ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মনিরুল ইসলাম ও আজিজুর রহমান জানান, বজলুর রহমানেরে বাড়িতে শুক্রবার ভোরে যেভাবে পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী তাণ্ডব চালিয়েছে তাতে ওই পরিবারটি নিরাপত্তার কারণে এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশের সুবিধাভোগী জনপ্রতিনিধি কুখ্যাত চোরাচালানি আসাদুজ্জামান অসলে ও জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারি মজনু মালী পুলিশকে বাঁচাতে বৃহষ্পতিবার সকালে শহরে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে তারা যেসব বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন তাতে মনে হয়েছে শুক্রবার ভোরে বজলুর রহমানের বাড়িতে পুলিশ ব্যতীত হামলাকারিরা তাদেরই লোক । যদিও আসাদুজ্জামান অসলে ও মজনু মালী তাদের বিরুদ্ধে আনীত চোরাচালানী, জুয়ার বোর্ড পরিচালনাকারি ও বজলুর রহমানের বাড়িতে হামলার অভিয্গো অস্বীকার করে বলেন, এ ধরণের হামলা সাজানো।

বজলুর রহমানের বাড়িতে হামলা সম্পর্কে জানার জন্য শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সহকারি উপপরিদর্শক রুবেল জানান, স্যার রাতের ডিউটি করে ঘুমাচ্ছেন। একইভাবে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আব্দুল হাশেম তার মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test