E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জীবনে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসই সঙ্গী

২০১৪ অক্টোবর ১২ ১২:০৪:০৬
জীবনে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসই সঙ্গী

প্রত্যাশা দুরু দুরু বুকে ভাইভা বোর্ডের পাশের রুমে অপেক্ষা করছে। ‘মানুষের জীবন এত দুর্বিষহ কেন’ ভাবছে সে। সব পড়া আছে মোটামুটি তবুও কেন বুকের ভেতর ধবধব করছে সে বলতে পারবে না। চোখে হঠাত্ হঠাত্ অন্ধকার দেখছে, তারপর যখন সত্যিই ডাক এলো রুমে এবং সে তার পরিচিত শিক্ষকদেরই দেখল সবাই তাকে প্রশ্ন করার জন্য বসে আছে। মাথাটা বেমালুম ফাঁকা হয়ে গেল। যা ভয় পাচ্ছিল তাই। তারপর আর একটা উত্তরও দিতে পারল না সে। না ফলাফল? এসবের সুযোগ হারাতে হলো তার। অথচ রেজাল্ট মোটামুটি ভালো হয়তো উত্তর দিতে পারত। কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হলো এ চাকরিটা সে পাবে না। ব্যস, সব উত্তর আটকে গেল। বলুন তো ভাইভার বোর্ডে প্রত্যাশার কী প্রয়োজন ছিল? এর নামই হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস হবে আপনার জীবনের সফলতা অর্জনের বিশ্বস্ত সঙ্গী, আজীবন আপনাকে সে সহায়তা দিয়ে যাবে প্রতিটি পদক্ষেপে।

আত্মবিশ্বাস নিজেকে বিকশিত করে: আত্মবিশ্বাস হলো নিজের ‘নিশ্চয়তা বোধ’। একটি বোধের মাধ্যমে ‘আমি কী’ এবং ‘আমি আমাকে ও পৃথিবীকে কতটুকু দিতে পারি’ এ প্রশ্ন দুটোর উত্তর একজন মানুষের পরিষ্কারভাবে জানা থাকে। আত্মবিশ্বাসের জন্য মানুষ নিজের কাছে নিজে যোগ্য এবং মূল্যবান বলে প্রতীয়মান হয়। আত্মবিশ্বাস আমাদের স্বপ্নগুলোকে সার্থক করে তোলে। এই নিশ্চয়তাবোধের মাধ্যমে যে শক্তি মানুষ নিজস্বতায় খুঁজে পায়, তা দিয়েই সে তার দৈনন্দিন জীবনকে সার্থক এবং সৃষ্টিশীল সত্তাকে বিকশিত করতে পারে।
আত্মবিশ্বাস অহঙ্কার নয়: ‘আমি অন্যদের থেকে ভালো’ এ বিশ্বাসের চর্চা এবং এ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মকাণ্ড মানুষকে ঔদ্ধ্যত, অহঙ্কারী হিসেবে গড়ে তোলে, তাকে কোনোভাবেই ‘আত্মবিশ্বাসের’ সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। আত্মবিশ্বাস কখনই অন্যকে নিচু দেখানো বা ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় না অন্য কারও কাছে থেকে সুবিধা আদায় বা কর্তৃত্ব প্রকাশ করা একজন আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের কাজ। আবার অন্যদিকে অনেকেই ভীত-সস্ত্রস্ত থাকে এমন ভেবে যে সে, পৃথিবীর যোগ্য নয় বা যা সে চাচ্ছে তা আদৌ তার অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, প্রতিটি মানুষেরই যোগ্যতা রয়েছে কোনো না কোনো কিছু করার। শুধু নিজের প্রয়োজন ও যোগ্যতাকে চিনতে পারা এবং দুটির সমন্বয় ঘটিয়ে সার্থকভাবে কাজ করে যাওয়ার মধ্যেই সাফল্য নিহিত।
আপনি ইচ্ছা করবেন এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে যাবেন, জয়ী আপনি হবেনই। আত্মবিশ্বাস আপনার জন্য জাদুকরী ইচ্ছা পূরণের এক জগত্ খুলে দেবে। আপনি যখন আত্মবিশ্বাসী, যখন তখন আপনার প্রতি আকর্ষিত হতে বাধ্য। আপনি দেখবেন সহস্র মানুষ আপনার চতুর্দিকে বিভিন্ন কারণেই অবস্থান করছে। আপনার কাছ থেকে কিছু শিখতেই- আপনার সঙ্গে খেলাধুলার জীবনের বহুবিধ অভিজ্ঞতা আপনার সঙ্গে মানুষ বিনিময় করতে চাইবেই।
সঠিক সিদ্ধান্ত: আপনি যা করতে চান, প্রথমেই সে কাজের বিষয় নিয়ে স্থির হয়ে ভাবুন। সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বিশ্লেষণ করুন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কাজটি কতটুকু সহজ বা কঠিন সে সম্পর্কে নিজেকেই আগে ধারণা দিন। সিদ্ধান্তটি আপনার জীবনে কতখানি ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ক্যালকুলেশনটি আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে লাগান। মন এবং পারিপার্শ্বিকতা যদি আপনার অনুকূলে থাকে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন। প্রতিজ্ঞা করে নিজেকেই বলুন, ‘হ্যাঁ আমি পারব।’ তখন অবশ্যই আপনি পারবেন। যখন কাজটি আপনি পেরে যাবেন তখন নিজেকে অমিত শক্তিধর মনে হবে। তাই সুচিন্তিত এবং সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আপনি হয়ে উঠবেন আত্মবিশ্বাসী।
কর্মক্ষমতা আর কর্মদক্ষতার জয়: সিদ্ধান্ত যা নিয়েছেন, তাই ঠিক, এ বিশ্বাস সব সময় মনের ভেতর রাখতে হবে । অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ভাবতে হবে ‘আমি পারি এবং পারব’। নিজের ভেতরে এমন এক সত্তা থাকে যা মানুষকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করে, যা সত্য ও সুন্দরকে জয় করতে শেখায়। কিছু দুর্বল চিত্তের কারণে মানুষ নিজের অবস্থান থেকে সরে যায়। ভুল পথে অগ্রসর হয়। তাই নিজের চিন্তা চেতনার প্রতি বিশ্বাস অর্থাত্ নিজের ওপর বিশ্বাস সবার আগে ও সবার পরে অর্থাত্ সর্বক্ষণ। বিশ্বাসের এ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে নিজের প্রতি, নিজের কর্মক্ষমতা আর কর্মদক্ষতার প্রতি।
প্রস্তুতিই হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের মূলশক্তি: প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এ প্রযুক্তির যুগে, যত যুদ্ধই হোক না কেন, যত শক্তিশালীই হোক না কেন একটি পক্ষ, প্রস্তুতি গ্রহণ অনিবার্য। আপনার লক্ষ্য স্থির করার পর, ইচ্ছেকে জয়যুক্ত করতে হলে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো প্রস্তুতি গ্রহণ। নির্দিষ্ট কাজটি করার জন্য যেসব কাজ আপনি করবেন যেসব কাজের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা, অনুশীলন এবং তা করার জন্য আত্মগৌরব মিলিয়েই তৈরি হয় প্রস্তুতি। কোনো কাজে প্রস্তুতি না থাকলে মনের ওপর চাপ পড়বে এবং আপনার মানসিক বিপর্যস্ততা আপনাকে আত্মবিশ্বাসহীন করে তুলবে।
ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখুন: বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে এবং একই সঙ্গে আপনাকে হতে হবে ইতিবাচক। প্রতিদিনের খুঁটিনাটি কাজ থেকে বড় কাজ পর্যন্ত যেসব জায়গায় সাফল্য এসেছে সেজন্য নিজেকে প্রশংসা করুন। কোনো কাজে সফল না হলে, তার বাস্তবতা স্বীকার করে নিন এবং কেন সফল হতে পারলেন না সে কারণগুলো খুঁজে নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করুন কিন্তু নেতিবাচক মনোভাবকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেয়া চলবে না।
অনুতাপ ঘুণপোকা: ভুল করা কোনো অন্যায় নয়। মানুষ ভুল করবে আবার তা থেকে নিজেকে শুধরেও নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল থেকে অনুতাপের রাস্তা বেছে নেয়া ঠিক নয়। তাহলেই ঘুণ ধরবে আপনার আত্মবিশ্বাসে। তখন মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে হবে, নিজের ওপর আস্থা চলে যাবে এবং এই মনোভাব আপনাকে ঠেলে দিতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। তাই যখন কোনো ভুল করেই ফেলবেন, উপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গেই নিজের কাছে স্বীকার করে নিন, এক মুহূর্তও অনুতাপ না করে সামনের দিনের প্রস্তুতি নিন।
অঙ্গীকার করুন অন্যের কাছে: সাফল্য ও সমৃদ্ধি আমাদের চিন্তা ও সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতি। আত্মবিশ্বাস সেই পথে আমাদের অগ্রসারিত করে। একজন মানুষ তার নিজের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে যতটা দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে পারে, তার সফলতা ততটাই সহজ হয়। চাপ বা বিপত্তির মুখেও নিজের অঙ্গীকার ভুলে যাবেন না। একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ মূল্যবোধের চেতনা গড়ে তুলুন। যে কোনো ক্ষেত্রে তারা যদি অঙ্গীকারাব্ধ হই তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে এবং আমরা এগিয়ে যাই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে।
সৃজনশীলতাকে প্রধান্য দিন: প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে সৃজনশীল, অমিত সম্ভাবনার আঁধার। তাই নিজেকে কখনও অন্যের চেয়ে কম সৃজনশীল ভাবার প্রয়োজন নেই। আপনার সৃজনশীলতা এবং আগ্রহ যেখানে আছে, সেক্ষেত্রটি চিহ্নিত করুন। নিজেকেই সুযোগ দিন ক্ষেত্রে বাছাইয়ে এবং সেজন্য পর্যাপ্ত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। নতুন নতুন আবলার রেখা আপনাকে উদ্ভাসিত করবে। নিয়ে যাবে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে।
নিজের ওপর নির্ভরশীল হোন: অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে মানুষকে নিজস্ব চিন্তা, সামর্থ্য ও লক্ষ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। তাই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিজের ওপর আস্থা বাড়াতে থাকুন ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠুন। মনে রাখবেন জীবন আপনার, ইচ্ছা আপনার, চিন্তা শক্তি আপনার, অভিষ্ট লক্ষ্য আপনার, গতিময়তা আর চলার পথ তাই আপনাকেই তৈরি করতে হবে।

(ওএস/এইচআর/অক্টোবর ১২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test