E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শীতে প্রয়োজন ত্বকের বাড়তি যত্ন

২০১৫ নভেম্বর ২৪ ১৪:৩৩:০৯
শীতে প্রয়োজন ত্বকের বাড়তি যত্ন

শেফালী সোহেল : শীত প্রায় চলেই এসেছে। ঋতুর পালাবদলে ত্বকে দেখা দেয় নানা সমস্যা। শীতের এ সময়ে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও অনুজ্জ্বল। চেহারা হারায় তার স্বাভাবিক শ্রী। তাই এ সময়ে ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। সঠিক প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার, প্রয়োজনীয় খাদ্যগ্রহণ ও এ ঋতুর সাথে মানানসই জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা শীতেও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারি।

শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে ত্বকের এপিডার্মাল লেয়ার থেকে আর্দ্র ভাব কমে যায়। এজন্য ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। শীতকালে ক্রিম, সাবান যাই ব্যবহার করেন না কেন লক্ষ্য রাখবেন তা যেন ময়েশ্চারাইজারযুক্ত হয়। অন্তত সকালে এবং রাতে ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। আলফা হাইড্রক্সি বা ভিটামিন-ই যুক্ত ক্রিম ব্যবহার ত্বকের জন্য ভালো।

সাধারণত ত্বক তিন ধরণের হয়ে থাকে-শুষ্ক, তৈলাক্ত ও স্বাভাবিক। এছাড়াও আর এক ধরণের ত্বক আছে আর সেটা হলো মিশ্য। ত্বকের পার্থক্যভেদে ও ঋতুর সাথে মানানসই ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

শুষ্ক ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার অত্যাবশ্যকীয়।রাতে ঘুমানোর আগে ও গোসলের পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে রোজ গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল অথবা লিকুইড প্যারাফিন মাখতে পারেন। এক্ষেত্রে ফেইসওয়াশ হিসেবে নিতে পারেন ক্রিমি ক্লিনজার বা গ্লিসারিন সোপ এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে একটি ভারি ময়েশ্চারাইজার।

বাড়িতে বসে কলার সঙ্গে মধু মিশিয়ে বা পাকা পেঁপে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের শুষ্ক ভাবটা থাকবে না। শুষ্ক ত্বকে অলিভ অয়েল, ডিমের কুসুম ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগালে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। তাছাড়া সমপরিমানে মধু, অলিভ অয়েল ও গোলাপজল মিশিয়ে সপ্তাহে একদিন লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

তৈলাক্ত ত্বকে শীতে কোন ময়েশ্চারাইজার লাগবে না এটি ভুল ধারণা । শীতেও ত্বকের যত্নে ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের ক্ষেত্রে অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে গরমের প্রশাধনী শীতে এড়িয়ে চলতে হবে। এক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ফেইসওয়াশ ব্যবহার করুন। ঘরোয়া ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পাকা টমেটোর রস লাগালে খুব ভালো ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে ।

ক্লিনজিং ও টোনিংয়ের পর লেটুস পাতার রস, মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে লাগাতে পারেন। আনারস, আপেল, পাকা পেঁপের সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।সপ্তাহে এক দিন মুলতানি মাটির প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মুখে একটি মাস্ক দিতে পারেন। লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে ফেলুন, পরে ময়েশ্চারাইজার দিন। এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল ভাবটা কমে যাবে।

স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে ক্লিনজার বার ও তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে নিজেই একটা প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। গোলাপজল, দই ও মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এতে ত্বক কোমল থাকবে।স্বাভাবিক ত্বকে যেকোনো ক্রিম বা লোশন আনায়াশে ব্যবহার করা যায়।

মিশ্র ত্বক দুই ধরনের হয়ে থাকে- অয়েলি কম্বিনেশন এবং ড্রাই কম্বিনেশন। মিশ্র ত্বকের যত্ন নেয়াটা একটু আলাদা। এক্ষেত্রে প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ত্বকের শুষ্ক জায়গাগুলো অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। সিদ্ধ করা মিষ্টি কুমড়ো চটকে তার সঙ্গে মধু ও দুধ পরিমাণ মতো মিশিয়ে ২০ মি. রেখে তারপর ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এ প্যাকটি সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করুন।শীতে ত্বকের যত্নের শুরুতে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। বাজার থেকে বাদাম তেল বা এভাকাডো সম্বৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিনুন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার অথবা যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন।

অনেকের ধারণা শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয় না। এটি ঠিক নয়। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ ‍মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে মুখে বার বার পানির ঝাপটা দিন। ঘুমানের আগে ও গোসলের পরে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন লাগান।

শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে । এর ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করুন। তা ছাড়া গোলাপজল ও গ্লিসারিন ৩:১ অনুপাতে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঠোঁট ফাটা ও কালো হয়ে যাওয়া শীতের সাধারণ সমস্যা। এর সমাধানও গ্লিসারিন। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালে ঠোঁট আরো ফেটে যায়। তাই এটি কখনোই নয়। আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে গ্লিসারিন লাগান।

শীতকালে ত্বকের যত্নে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও হতে হবে মনোযোগী । শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বকের জন্য প্রয়োজন। ত্বক হচ্ছে আমাদের শরীরের উপরিভাগের অংশবিশেষ। এই উপরিভাগের যত্নটাই মুখ্য বিষয় নয়। ভেতরের পুষ্টিটাই আসল। ভেতরের পুষ্টি যোগাতে খাবারের দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাজা ফলমূল, শাক-সবজি, মাছ, ডিম, দুধ বা এ জাতীয় খাবারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। প্রতিদিন ১টি করে হলেও সিজনাল ফল খেতে হবে। ফ্রেস জুস, শরবত, স্যুপ জাতীয় খাবারগুলোর দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

খাবারের পাশাপাশি ত্বকের উপরিভাগের যত্ন নিতে হবে। তাহলে সঠিক পরিচর্যায় আপনি লাবণ্যময় হয়ে উঠবেন। বাইরে থেকে ফিরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর প্যাক ব্যবহার করতে হবে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী। ত্বক খুবই স্পর্শকাতর তাই ভালোমানের পণ্য ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। রূপচর্চায় কোনো ধরনের ব্যাঘাত হলে ত্বকে নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এ সময় ত্বকের পানি শুকিয়ে আসে। সে জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে পানি রাখুন।

(ওএস/এএস/নভেম্বর ২৪, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test