E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শীতে হাত ও পায়ের চায় পূর্ণ যত্ন

২০১৫ ডিসেম্বর ০৩ ১৭:২৪:১১
শীতে হাত ও পায়ের চায় পূর্ণ যত্ন

শেফালী সোহেল : শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বকের কোষগুলো ঠিকমতো পানি পায় না, তাই রুক্ষহয়ে ওঠে হাত-পা। এ সময় হাত ও পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি।প্রতিদিন হাত-পা পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যাঁরা প্রতিদিন অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে আসেন তাঁদের অবশ্যই একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষ করে রান্নাঘরে কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, পাশেই যেন একটা তোয়ালে থাকে। কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাতটা আলতো করে মুছে ফেলুন। হাত ও পা কখনই ভেজা রাখা যাবে না। মুছে সাথে সাথেই ময়েশ্চারাইজার লাগান। পরিষ্কার, সুন্দর, কোমল দুটি পা অন্যের সামনে সৌন্দর্যের সাথে রুচিরও পরিচয় বহন করে। হাত ও পায়ের যত্ন নিয়ে এগুলোর সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনুন। শীতে হাত ও পায়ের যত্নের প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিকভাবে তা পরিষ্কার করা।

হাত ও পায়ের যত্নে বাইরে থেকে ফিরে সোডা মেশানো পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর চিনি, লবণ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। এতে পায়ের মরা চামড়া উঠে যাবে। যাদের পা ফাটে তারা পিউমিস স্টোন বা ঝামা দিয়ে পায়ের তলাটা ঘষে নিতে পারেন।

শীতে হাঁটু, গোঁড়ালি, কনুইয়ের ত্বক একটু বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে গ্লিসারিন খুব কাজ করে। রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে একবার লেবু ও মধু মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। শীতে বাইরে যাওয়ার সময় দু’হাতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার মেখে বেরুবেন।

হাত আমাদের সৌন্দর্যেরও বড় অংশ। একে মোলায়েম ও মসৃণ রাখতে নিয়মিত স্ক্র্যাব ও মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন।ঘরেতৈরি স্ক্র্যাব ব্যবহার করতে পারেন। ১টি পাতিলেবুর রস ও ২ চা চামচ চিনিমিশিয়ে এই মিশ্রণটি হাতে দিয়ে ঘষে ঘষে মেলাতে পারেন, মরা কোষ উঠে মসৃণ হবে।এছাড়া আরেকটি মাস্ক হাতের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্যবহার করতে পারেন।১ টেবিল চামচ ময়দা ও চালের গুঁড়া দুধে গুলে হাতে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। হাতের কনুই এর খসখসে ভাব দূর করতে ডাল বাটা দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে উষ্ণপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর গ্লিসারিন বা লোশন লাগান।২ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ/দুধ , ২ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ লেবুররস একসাথে মিশিয়ে হাত ও পায়ে লাগান ভালো করে। ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়েফেলুন ভালো করে। এটি কালচে ছোপ দূর করে হাতে পায়ের উজ্জলতা বৃদ্ধিতেসাহায্য করবে।ময়েশ্চারাইজার, লোশন, ক্রিম কেনার সময় অবশ্যই ভালো কোম্পানি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে কেনা জরুরী।

পা ফাটা প্রতিরোধে যা করা প্রয়োজন:
• খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। আর পায়ে ধুলো-ময়লা লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করতে হবে।
• গোসলের সময় অমসৃণ মেঝে কিংবা ঝামা ইট বা গোড়ালি ঘষার উপকরণ দিয়ে ঘষে ঘষে গোড়ালির মরা চামড়া দূর করতে হবে। শীতে প্রতিদিন এটি করলে পায়ের গোড়ালি ভাল থাকবে।
• গোসল বা প্রতিবার পা ধোয়ার পর ভাল করে মুছে এরপর ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন লাগিয়ে নিন। এতে করে মসৃণ ভাব টিকে থাকবে।
• প্রতিদিন গোসলের আগে পায়ে তেল মেখে নিন। অলিভ অয়েল খুব কার্যকরী এই শীতে। তারপর সাবান দিয়ে পায়ের চামড়া, গোড়ালি, আঙ্গুলের কোণ ও ধারগুলো পরিষ্কার করুন। হালকা গরম পানি দিয়ে পা ধোবেন। এতে কোমল ভাব বজায় থাকবে।নখ পরিষ্কার করুন নেল ব্রাশ দিয়ে নখের চারপাশ, মাঝখানের অংশও।
• প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে কোনো ভালো ক্রিম দিয়ে পা মাসাজ করবেন। এতে পায়ের সৌন্দর্য বাড়বে এবং পা ফাটবে না।
• সপ্তাহে অন্তত দু’দিন উষ্ণ পানিতে পা ভেজাবেন।এতে শরীরের রক্ত প্রবাহ ভালো হয়।এছাড়া নখও খুব ভালো থাকবে।

ঘরেই তৈরি করুন ময়েশ্চারাইজার
হাতে পায়ের যত্ন নেয়ার সব শেষে ভালো কোনো ময়েসচারাইজার লাগাতে একেবারেইভুলবেন না। যদি প্রাকৃতিক ময়েসচারাইজার খোঁজেন তবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতেপারেন। ময়েসচারাইজার ভালো করে লাগিয়ে রাতে ঘুমুতে যাবেন।
বাজারে পাওয়া ময়েশ্চারাইজারের পাশাপাশি আপনি ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন আপনার হ্যান্ড ও ফুট ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার। হাতের জন্য তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল সমপরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহারকরতে পারেন। তিলের তেলের পরিবর্তে জলপাইয়ের তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ের জন্য মধু, গ্লিসারিন, লেবুর রস ও ঘৃতকুমারীর রস একসঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে পারেন। সয়াবিন গুঁড়া হাত ও পায়ের জন্য খুবই ভালো। বাজার থেকে সয়াবিন কিনে কড়াইয়ে তেল দিয়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ নেড়ে গুঁড়া করে সেটা দিয়ে হাত ও পাধুতে পারেন। এটা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজারের ভূমিকা রাখে।
সপ্তাহে একদিন মাস্ক লাগান। মুলতানি মাটি, সয়াবিন গুঁড়া, কাঁচা হলুদ ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে হাত ও পায়ে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

হাত ও পায়ের বিভিন্ন সমস্যা
শীত মানেই হাতের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, পা ফাটে, কাল দাগ বিভিন্ন সমস্যা। কিন্তু চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এর সহজ সমাধান আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন।
যাঁদের হাতের চামড়া অত্যধিক রুক্ষ, তাঁরা ক্ষারযুক্ত সাবান এড়িয়ে চলুন এবং ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। অথবা বেসন দিয়ে ধুয়ে নিন।
যাঁদের হাত ও পায়ের হাড়ের সন্ধিস্থানে কালো দাগ পড়ে, তাঁরা সাবান বর্জন করুন। কাল দাগযুক্ত স্থানে লেবুর রস ও মধু লাগান। এতে খুব ভালো কাজ হয়।
অনেকের চামড়া ফাটে তারা তিলের তেল ব্যবহার করুন। এটি ওষুধের মতো কাজ করবে।
শীতে অনেকের নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে লেবুর খোসা খুব কার্যকর। মুড়ি বা চানাচুরের সঙ্গে লেবুর খোসা মিশিয়ে ১৫ দিন নিয়মিত খেলে নখ ভাঙা বন্ধ হয়ে যায়।
অতিরিক্ত শুষ্ক হাত-পায়ে কাঠবাদামের মাস্ক লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
যাঁদের পা ফাটে তারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখুন। খোলা জুতা না পরে শীতে ঢাকা জুতা বা কেডস পরলে পা ফাটা অর্ধেক কমে যায়।’তবে যাঁদের পা ফাটার প্রবণতা খুব বেশি, তাঁরা অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।


হাত ও পায়ের ব্যায়াম
ত্বকের সজীবতার জন্য শরীরের রক্ত সঞ্চালন খুব বড় ভূমিকা রাখে। তাই হাত ও পায়ের ব্যায়াম করা জরুরী। হাত মুঠ করা, মুঠ ছাড়া, বসে বসে পা সামনে পেছনে টেনে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাত ও পায়ে ভ্যাসলিন লাগিয়ে ম্যাসাজ করাও ভালো। এতেও রক্তসঞ্চালন বেড়ে ত্বক সজীব হয়ে ওঠে।

শীতকালে প্রচুর তাজা ফলমূল পাওয়া যায়। ত্বকের যত্নে শীতকালীন সব ফলখান। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন। আর কর্মব্যস্ত জীবনে পার্লারে যেতে না পারলে মাসে অন্তত একবার বাসায়ই করে নিন মেনিকিউর ও পেডিকিউর।

প্রতিদিন কিছু সময় নিয়ে যদি আপনি হাত-পায়েরসঠিক যত্ন নেন তাহলে এই শীতেও আপনি হতে পারেন সুন্দর ও নরম হাত-পায়ের অধিকারী।ঘরে বসে হাত-পায়ের সঠিক পরিচর্যা করার বেশ কিছু সহজ টিপস রয়েছে যা হাত-পায়ের যত্নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

• দিনশেষে বাসায় ফিরে এসে মুখ ধোয়াটা যেমন জরুরী তেমনই জরুরী হাত ও পাধুয়ে ফেলা। তবে শুধু পানি দিয়ে হাত পা ধোয়া নয় একটু বিশেষ যত্ন নিয়ে হাত পাধোয়া উচিত। একটি বড় গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে এতে ভিনেগার ও সামান্য লবণদিয়ে ১০ মিনিট হাত পা চুবিয়ে রাখুন। পড়ে হাত পা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়েফেলুন। অথবা
কুসুমগরম পানিতে এক ফোঁটা শ্যাম্পু ও এক চিমটি লবন মিশিয়ে ১৫ মিনিট পা পানিতেভিজিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর পেডিকিউর ব্রাশ দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালভাবে ঘষেনিন। এরপর পরিষ্কার পানিতে পা ধুয়ে ভালভাবে পানি মুছে ভাল কোন ময়েসচারাইজারলোশন বা ক্রিম লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে ২ বার এ পদ্ধতিতে পায়ের যত্ননিন। এতে পায়ের গোড়ালি ফাটা কমে যাবে এবং পায়ের ত্বক নরম ও মসৃণ হয়ে উঠবে।
• ঘরেরযেকোনো কাজ করতে হাত বেশি সময় ভিজে থাকলে ভেজা হাতে মাসাজ অয়েল মেখে নিন।এরপর কিছুটা লিকুইড সোপ নরম ব্রাশে নিয়ে হাতে জমা ময়লা বা মরা চামড়াভালোভাবে পরিস্কার করুন। এরপর কোল্ডক্রিম লাগিয়ে নিন।
• শীতে বাইরেযাওয়ার সময় হাতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার মেখে নিতে হবে। হাত মোলায়েম ও মসৃণরাখতে নিয়মিত স্ক্র্যাব ও মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। ১টি পাতিলেবুর রস ও ২চা চামচ চিনির মিশ্রণ দিয়ে হতে ঘষতে পারেন। এতে মরা কোষ উঠে মসৃণ হবে।
• হাতের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ১ টেবিল চামচ ময়দা দুধে গুলে হাতে মেখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এরপর হাতে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না।
• একটি লেবু মাঝামাঝি খণ্ড করে নিয়ে কাটা দিক২-৩ টেবিল চামচ চিনির মধ্যে গড়িয়ে চিনি লাগিয়ে চিনি সহ লেবুর খণ্ড হাতে ওপায়ে ঘষে নিন ভালো করে। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
• হাত-পায়ের ত্বক ফেটে গেলে তারপর গ্লিসারিন বা ভেসলিন না মেখে বরং ফেটে যাওয়ার আগেই গ্লিসারিন মেখে নিন।

(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test