E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পহেলা বৈশাখে বাঙালি সাজ

২০১৬ এপ্রিল ১২ ০৭:০৫:০৪
পহেলা বৈশাখে বাঙালি সাজ

নিউজ ডেস্ক : বৈশাখে সকলেই নিজেকে বাঙালি সাজে সাজাতে চায়। বর্ষবরণে নিজেকে নতুনরুপে সাজাতে সবাই শাড়িটাকেই প্রাধান্য দেন। শাড়িই বৈশাখের সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ। বর্ষবরণে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলে শাড়ি।

তবে গ্রীষ্মের বাড়তি গরমে কেমন শাড়ি পরলে ভালো লাগবে বৈশাখের সাজে, তাও ভেবে নিতে হবে। গরমে সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যেহেতু দিনের অনেকটা সময় শাড়ি পরেই থাকতে হবে, সেক্ষেত্রে সুতি কিংবা সিল্কের শাড়িতেই আরাম পাওয়া যাবে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বৈশাখের শাড়ি হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁতে বোনা সুতি জামদানি শাড়ি কিংবা তাঁতে বোনা সুতি শাড়ির ওপর সুতার কাজ এবং ব্লক বাটিকে সুতির শাড়িগুলো বৈশাখের পোশাকে তুলে ধরে ভিন্ন রকম আমেজ।

এছাড়া সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও এম্ব্রয়ডারির কাজের শাড়িগুলোও আপনি বেছে নিতে পারেন। বৈশাখের সাজ মানেই লাল পাড়ের সাদা রঙের শাড়ি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে নতুনত্ব। এখন আর লাল-সাদায় সীমাবদ্ধ নেই বৈশাখ। ফ্যাশন সচেতনরা বেছে নিচ্ছেন পোশাকে বিভিন্ন রঙ। হালকা গোলাপি, কমলা, মেরুন কিংবা নীল রঙের সুতি শাড়ির মধ্য দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন বৈশাখের সকালে।

শাড়ি বাছাইয়ের পাশাপাশি পছন্দের ব্লাউজ তৈরিটাও সমান গুরুত্ব পায় বর্ষবরণে। শাড়িটা সাদামাটা হোক কিংবা জমকালো, এখন ব্লাউজটা হওয়া চাই ভিন্ন ধাঁচের। ফ্যাশন-সচেতন সব নারীই এখন মনোযোগ দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর ব্লাউজের দিকে। এখনকার ট্রেন্ডটা হলো শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ব্রাউজ পরার। সুতি বা তাঁতের শাড়ি শাড়িগুলোর সঙ্গে কাঁথাস্টিচ, টাইডাই, প্যাচওয়ার্কের কাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গামছা কাপড়ের ব্লাউজও ভালো লাগবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাইপিং লাগানো যেতে পারে।

রাতে দাওয়াত কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে অ্যান্ডি সিল্ক, ধুপিয়ান বা কাতান কাপড়ে লেইস বসানো অথবা নকশা করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। এই সময়ে হাই নেক, বোট নেক, পেছনে কাটা, সামনে ও পেছনে ‘ভি’ আকৃতির কাটের ব্লাউজের চল দেখা যাচ্ছে। স্টিভলেস ও কনুই পর্যন্ত হাতার ব্লাউজের সঙ্গে ফুলহাতার ব্লাউজও হবে ফ্যাশনেবল।

বৈশাখে সবার আগে যে বিষয়টি তরুণীদের ভাবায়, সেটি বৈশাখের সকালের সাজ। কেমন হবে বৈশাখের প্রথম সকালের সাজের ধরন? সাজসজ্জার নানা পরামর্শ দিয়েছেন রুপবিশেষজ্ঞ গীতিবিল্লাহ। তার মতে, বৈশাখের প্রথম সকালে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরে নিতে পারেন বিভিন্ন ডিজাইনের মাটির গহনা। এছাড়াও শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পাট কিংবা পুঁতির মালাও পরতে পারেন। আর বৈশাখের সাজে এসব গহনা আপনার সঙ্গে অনায়েসে মানিয়ে যাবে।

বৈশাখের সাজ সম্পর্কে রূপ বিশেষজ্ঞ গীতিবিল্লাহ জানান, বৈশাখের সাজে ফাউন্ডেশন কিংবা ফেস পাউডার ব্যবহার না করাটাই ভালো। তবে কেউ যদি মেকআপ করতেই চায় তা হলে তেলহীন (অয়েলফ্রি) মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন। তার সঙ্গে দিতে হবে ম্যাট ফাউন্ডেশন। আর বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।

মেকআপ করার আগের দিন রাতে অবশ্যই ফেসিয়াল করে নিতে হবে। কারণ তা না হলে ত্বকে মেকআপ বসবে না। তবে যদি সেটা করা না যায়, তাহলে মাইল্ড ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। সব ধরনের ত্বকে মেকআপ লাগানো যায়। তবে এক্ষেত্রে জরুরি হলো মেকআপ বেল্গডিং। তারপর টোনার দিয়ে ত্বক টোন করে নিতে হবে। এবার মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এর ৫ মিনিট পর সানস্ক্রিন বা ফাউন্ডেশন লাগান। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ট্রান্সলুশান পাউডার অথবা পিঙ্ক শেডের ফেস পাউডার পাফ করুন। একটু অপেক্ষার পর লাগালে মেকআপটা ত্বকে ভালোভাবে বসবে। এ সময় মুখে একটু বেশি পাউডার লাগান। তারপ সামান্য পানি স্প্রে করুন। এবার পাউডার ত্বকের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন তাতে দেখতে সুন্দর লাগবে। তখন মেকআপ বেশি মনে হবে না।

তাছাড়া যদি পানি স্প্রে করে নেন তাহলে সারাদিন ঘাম হওয়ার ভয় থাকে না। এরপর চিকবোন হাইলাইট করুন বল্গাসন দিয়ে। বল্গাসন যেন হালকা হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তাতে আপনার ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলে যাবে বা কাছাকাছি হবে। ফর্সা মেয়েদের গাঢ় রঙের বল্গাশন যেমন লাল, মেরুন গোলাপী বল্গাশন লাগাতে হবে। আর যাদের গায়ের রঙ চাপা তারা বাদামি রঙের বল্গাশন লাগাতে পারেন।

চোখের সাজের ক্ষেত্রে যেটি বলব চোখের সাজ আপনার চেহারারটাকে আলাদা একটা লুক দেয়। ড্রেস বা শাড়ির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে শ্যাডো দিতে পারেন চোখে। চোখকে আকর্ষণীয় করতে চোখের মাঝখানের অংশে একটু হালকা কালার দিন। আর কোনার অংশে দিন ডার্ক আর ওপরের অংশে দিন সফট গোল্ড আইশ্যাডো। তবে এসময় অবশ্যই চোখের আকৃতির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এতে চোখ আকর্ষণীয় লাগে।

শ্যাডো চোখের পুরো অংশে ভালোভাবে বেন্ড হয়ে গেলে তারপর আইলাইনার দিবেন। তারপর দিবেন মাশকারা। আর বেশি ন্যাচারাল লুক চাইলে আইশ্যাডো ছাড়াই ব্রাউন কাজল দিয়ে আউটলাইন করতে পারেন। চোখের নিচের পাতায় দিন কাজল।

নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে ঠোঁটের সাজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিকব্যবহার করতে পারেন। বৈশাখের পোশাকে বেশিরভাগই লালের প্রাধান্য থাকে। তাই আপনিও পরতে পারেন লাল লিপস্টিক। বিকেলে একটু কমলা, পার্পেল, পিংক, ক্লাসিক রেডের মতো রঙগুলো অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটের আকৃতি অনুযায়ী লিপলাইনার দিয়ে প্রথমে ঠোট এঁকে নিন। তারপর লিপস্টিক লাগান।

বৈশাখে টিপ ছাড়া যেন পুরো সাজটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই কপালে মাঝারি বা বড় করে পরতে পারেন লাল টিপ অথবা লাল, সাদা, সবুজ মিলিয়ে দিতে পারেন কুমকুম টিপও। হাত ভর্তি লাল, সাদা মিলিয়ে কাচের চুড়ি পরতে পারেন ইচ্ছেমতো। শাড়ির সঙ্গে চুলের সাজে বেণি বা খোঁপা করাটাই বেশ মানানসই। খোঁপাভর্তি বেলি ফুলের মালা বা গাজরা, গোলাপ অথবা পছন্দমতো কাঁচাফুল গুঁজে দিতে পারেন। ফুলে ফুলে বরণ হয়ে গেল আপনার বৈশাখ।

(ওএস/অ/এপ্রিল ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test