E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগুনমুখা নদীর ভাঙনে দিশেহারা রাঙ্গাবালীর মানুষ 

২০১৭ ডিসেম্বর ২৯ ১৭:১০:৪০
আগুনমুখা নদীর ভাঙনে দিশেহারা রাঙ্গাবালীর মানুষ 

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : একদিকে ভাঙছে, আরেক দিকে গড়ছে। প্রকৃতির এই খেলায় দিশেহারা মানুষ। কারও সাজানো ঘরবাড়ি কেড়ে নিয়েছে। কারও আবার আবাদি জমি। এ কারণে কেউ বেড়িবাঁধের ওপর মাথাগোজার ঠাঁই নিয়েছে। কেউ আবার প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এ চিত্র আগুনমুখা নদীর ভাঙন কবলিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, গরুভাঙা, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়া গ্রামের। 

এসব গ্রামে ৬ হাজার মানুষের বসবাস। নদী ভাঙনে ভিটেবাড়ি হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। সরেজমিনে ভাঙন কবলিত ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট। সেখানে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৪৫ মিনিটের উত্তাল আগুনমুখা নদী পেড়িয়ে হল চালিতাবুনিয়া। কাছে গেলেই চোখে পড়বে নদী ভাঙনের দৃশ্য। শোনা যাবে ভিটেবাড়ি হারানো মানুষের আর্তনাদ।

মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের অসিম মীর (৩৫) পেশায় জেলে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনজন। প্রায় দেড়বছর আগে তাঁর ভিটেমাটি আগুনমুখায় বিলীন হয়েছে। এখন তিনি নতুন করে বেড়িবাঁধের ওপর ঘর তৈরি করে ওখানেই বসতি গড়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙ্গনের হাত থাইক্কা আমাগো নিস্তার নাই। নদীতে আমার সব শ্যাষ কইরগা দেছে। এ্যাহন আমি সরকারি জাগায় থাহি। নদী এ্যাহন এহানেও আইছে (ভাঙতে ভাঙতে নদী কাছাকাছি চলে এসেছে।

এসময় কথা হয় অসিমের প্রতিবেশী এরশাদ খানের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাত আসটো (সাত আট) মাস আগেও নিজের ঘরে থাকতাম বউ পোলা মাইয়া লইয়া। এ্যাহন নিজের কিছু নাই।’ তিনি সরকারের কাছে দাবি করে বলেন, ‘ঘরবাড়ি নদীতে গ্যাছে আবার নতুন কইরা বাড়িঘর করছি। এ্যাহন দেহি হ্যাও ভাঙ্গনের দারাদারি (কাছাকাছি)। আমাগো এই দুঃখ কষ্ট কেউ দ্যাহে না। সরকার মাগো দিগে একটু হির‌্যা (ফিরে) চাইলে বাঁচতাম।’ শুধু অসিম ও এরশাদ নয়, এই অবস্থা অনেকেরই।

স্থানীয়রা জানায়, ২০১৩ সাল থেকে আগুনমুখা নদীর তীব্র স্রোতের তোরে ওই ইউনিয়নের চার গ্রামের প্রায় ১৫০টি ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। যারা এলাকায় জমি হারিয়ে টিকে আছে, তারা অধিকাংশই বেড়িবাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু তাও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে ইয়াকুব আলী হাফিজিয়া মাদ্রাসার স্থানটি এখন আগুনমুখার গর্ভে। বর্তমানে ভাঙনের তীব্রতা এতই যে, চালিতাবুনিয়া রেড ক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং পার্শ্ববর্তী জামে মসজিদসহ চার গ্রামের অন্তত দেড় হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা রয়েছে।

চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, ‘দ্রুত ভাঙন রোধে সরকার পদক্ষেপ না নিলে মানচিত্র থেকে চালিতাবুনিয়া নিচিহ্ন হয়ে যাবে। আমরা সারাক্ষণ এ আতঙ্কে বসবাস করি।

চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘নদী ভাঙনে চার বছরে চার গ্রামের ১৫০টি পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। আগুনমুখা ও ডিগ্রি নদীতে বালু উত্তোলন এবং চর ড্রেজিং না করায় এ ভাঙনের তীব্রতা দিনদিন আরও বাড়ছে। প্রায় দুই বছর আগে মূল বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এরপরে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তাও ভাঙছে। ফলে প্রচুর ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে রয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো: রেজাউল করিম বলেন, ‘নদী ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ‘আগে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে। তারপর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। প্রতিবছরতো বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ দেবে না কর্তৃপক্ষ। তবুও জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করতেছি। যদি বরাদ্দ আসে তাহলে বাঁধ সংস্কার করা হবে।’

(এসডি/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test