E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিলীনের পথে রানীশংকৈলের ঐতিহ্যবাহী রামরায় দিঘী 

২০১৮ জানুয়ারি ০৮ ১৭:২৯:৪৭
বিলীনের পথে রানীশংকৈলের ঐতিহ্যবাহী রামরায় দিঘী 

খুরশিদ আলম শাওন, রানীশংকৈল : ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত জেলার একমাত্র বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র দীর্ঘতম ও ঐতিহ্যবাহী রামরায় দিঘী অনেকটা বিলীনের পথে। 

রামরায় দিঘী থেকে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করলেও সংস্কারে নেই প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ। এ নিয়ে হতাশ উপজেলাবাসী। সচেতন মহলের অভিযোগ সরকার এ দিঘী থেকে বছরের লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করলেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামান্যতম নজর দিচ্ছে না। আরও দিঘী ইজারা দিয়ে ইজারাদার বিষাক্ত মুরগীর লিটার দিয়ে মাছ চাষ করছে। লিটারের দূগন্ধে প্রকৃতি প্রেমীরা মুখে কাপড় দিয়ে পুকুরটির চারপাশ কষ্ট করে ঘুরে দেখছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রাকৃতিক সুগন্ধি বাতাস থেকে। এ কারণে পুকুরটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মানুষ।

জেলার রানীশংকৈল উপজেলা সদর থেকে ৩ কিঃমিঃ দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। পুকুরটি ১৮.৩৪ একর সু উচ্চ পাড় যেখানে ১২০০ লিচু গাছ রোপন করা রয়েছে ও ২৩.৮২ একর জলভাগসহ মোট ৪২.২০ একর বিশিষ্ট। রামরায় দিঘি বরেন্দ্র ভুমিতে প্রাচীন জলাশয় গুলির মধ্যে আয়তন ২য় বৃহত্তম।পুকুরটি দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিনে ৯০০মিটার ও প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০মিটার।

বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্যা প্রাচীন নির্দশন যা প্রচারনার অভাবে মানুষের কাছে পৌছায় নি যার মধ্যে অন্যতম আরেকটি নাম রামরায় দিঘী। তবে এ দিঘী খননের সঠিত ইতিহাস জানা যায় নি। ধারনা করা হয় প্রায় পাচশত থেকে হাজার বছর আগের হতে পারে। এ দিঘীতে প্রতি বছরের শীতকালীন সময় হাজার হাজার অতিথি পাখি এসে এখানে আশ্রয় নেই। তারা দিঘীটির পানিটাকে ঘিরে ধরে খেলা করতে থাকে যা দেখার জন্য অনেক পাখি প্রেমীরা দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসে। এ দিঘী বর্তমানে বিনোদন পার্ক এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে আসে ।

দিঘী ও লিচু গাছ ইজারা দিয়ে প্রতি বছরে ২০ লক্ষেরও অধিক টাকা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন আয় করলেও অভিযোগ উঠেছে এ দিঘীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। অথচ জেলার মধ্যে একটি মাত্র বিনোদন কিংবা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে একটি পরিবারের সবাই মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আহরনের অন্যতম স্থান এ দিঘীটি।

সোমবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিঘীটির প্রবেশ পথের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত জিরাফের মুর্তি ২টি ভেঙ্গে ভুঙ্গে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ফটকের পাশেই শিশুদের শিশু পার্কের সামগ্রী গুলো খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। দিঘীর উত্তরের পাড় থেকে মাটি খনন করে দেদারশে নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ নেই। পুকুরে পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষদের বসার নেই কোন ব্যবস্থা । দিঘীর চারপাশে অপরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট পুকুরের মত খনন করে ঘুরতে আসা মানুষদের চলাফেরাই দারুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও ইজারাদার কতৃক পাকা ২টি ঘর স্থাপনা করা হয়েছে। দিঘীর পানিতে বিষাক্ত মুরগী লিটার ফেলে রাখা হয়েছে। লিটারের দূগর্ন্ধে ঘুরতে আসা পর্যটকরা মুখে কাপড় চেপে ঘুরতে দেখা গেছে।

কথা হয় রুহিয়া থানা থেকে সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসা নাসরিনের সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রামরায় দিঘী দেখতে ইতিপূবেও এসেছিলাম অনেক ভাল লেগেছিলো এবারে অনেকটা প্রাকৃতিক তৃপ্তিহীন হয়ে ফিরতে হচ্ছে কারন দিঘীর পানিতে দূর্গন্ধজনিত লিটারের ব্যবহার পাহাড়ে ময়লা আর্বজনা, বোখাটেদের উৎপাতসহ নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

একইভাবে পঞ্চগড় জেলা থেকে আসা পাখি প্রেমী আব্দূর জব্বার বলেন, প্রতিবার শীতের সময় আসি অতিথি পাখির কৌলাহল দেখতে এবারে এসে পাখি পেয়েছি তবে ভোগান্তিতেও পড়েছি মুখে কাপড় দিয়ে পাখির খেলা দেখতে হয়েছে। এরকম অনেক অভিযোগ রয়েছে রামরায় পুকুর নিয়ে।

সচেতনমহলের দাবী রামরায় পুকুরকে সু-নজরে দেখে তার থেকে যে আয় হচ্ছে সেই অর্থ দিয়েই রামরায় দিঘী সংস্কার করে আধুনিক মডেল পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। বন্ধ করা হোক দিঘীর মাছ চাষে লিটারের ব্যবহার ।

এ বিষয়ে বরাবরের মত আশ্বাসের বানী শুনা গেল উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসানের নিকট তিনি বলেন, ইজারাদার কতৃক ছোট ছোট পুকুর খননের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ লিটার ব্যবহার বন্ধ অতিথি পাখিদের সংরক্ষন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি রামরায় দিঘী আধুনিকায়নের প্রসঙ্গে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হন নি।

(কেএএস/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test