E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পায়ের আঙ্গুলের জাদুতে স্বপ্নের সিড়িতে বিল্লাল

২০১৮ মে ০৭ ১৫:৫১:১০
পায়ের আঙ্গুলের জাদুতে স্বপ্নের সিড়িতে বিল্লাল

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : দুই হাত নেই জন্ম থেকেই। পুষ্টিহীনতা ও রোগে ভুগে শরীরও বেড়ে ওঠেনি স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু মাতৃ স্নেহ ,বাবার শ্রম ও নিজের অদম্য ইচ্ছায় প্রতিবন্ধকতাকে জয় করলো বিল্লাল আকন। হাত নেই তাতে কি, পা দিয়ে লিখে এবার দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৮৫ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে সে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর গ্রামের এই স্বপ্ন কারিগরের সাফল্যে তার পরিবারের সদস্যসহ প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা খুশি হলেও বিল্লালের চিন্তা উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নের সিড়িতে উঠে পড়ে যাবেন নাতো। পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় তার কলেজে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে তো ?

উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক, এলাকাবাসীর ভালবাসা ও সহায়তা এবং বাবা-মায়ের কঠোর শ্রমে বিল্লাল দাখিল পাস করলেও বিল্লালের চিন্তা তার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ননিয়ে। কেননা অন্য স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েরা নিজের পায়ে স্কুল-মাদ্রাসায় গেলেও তাকে যেতে হয়েছে বাবার পিঠে চেপে, কখনওবা হুইল চেয়ারে। পা দিয়ে বেঞ্চে দাড়িয়ে তাকে লিখতে হয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষার খাতায়। কিন্তু এখন দূরের কলেজ মাদ্রাসায় সে কিভাবে যাবেন, কিভাবেই বা পড়ার খরচ যোগাবেন এ দূশ্চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে। সেই সাথে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় মন খারাপ বিল্লালের।

বিল্লালের শিক্ষা জীবনের গুরু তার মা। ছেলের দুই হাত না থাকা ও শারীরিক অক্ষমতায় ভবিষতে কেউ যাতে তাকে উপহাস কিংবা করুণা না করে তাই পায়ের সাহায্যে বর্ণমালা শেখাতে শুরু করেণ মা হোসনেয়ারা বেগম। বসার কাঠের পিরিতে দাড় করিয়ে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চক দিয়ে তাকে শেখাকে শুরু করে অ আ ক খ। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় সোজা হয়ে দাড়াতেও পারতো না বিল্লাল। ছেলের কষ্টে মা তার পিছনে খুটি হয়ে বসে তাকে শেখাতে শুরু করেণ বর্ণমালা। প্রথমে প্রতিবেশীরা বেল্লালকে নিয়ে হাসি ঠাট্রা করলো পিএসপি ও জেডিসি পরীক্ষায় তার ভালো ফলাফল দেখে এখন সবার কাছে সে আদুরে। শিশু শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা।

উমেদপুর গ্রামের খলিল আকনের চার সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে খাদিজা ও রাহিমাকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের ছোট নেছার উদ্দিন আকন বরিশাল বিএম কলেজ থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়ছে। গতকাল (রোববার) বড় ছেলের (বিল্লাল) পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়ে হাস্যোজ্জল খলিল আকন নিজ বাড়িতে সংবাদকর্মীদের বলেন, অভাব ও শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে মায়ের একান্ত চেষ্টায় বিল্লাল যে ফলাফল করেছে তাতেই তারা খুশি। কিন্তু ? তাঁর এই কিন্তুতে অনেক প্রশ্ন ও নিজের অসহায়ত্ব ফুটে উঠলেও স্বপ্ন দেখেন বিল্লালও একদিন ইউনিভার্সিটিতে যাবে।

বিল্লাল আকন জানায়, এখন বাড়িতে কয়েকজন শিশুকে প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু উপার্জণ হয়। কিন্তু এই টাকায় কি কলেজে পড়া যায়। বাবা-মায়ের অনেক কষ্ট। নিজেদের দু’বেলা খেতেই কষ্ট। ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ। এখন আমার কলেজে খরচ। কিভাবে যোগাড় হবে ?

বিল্লালের মা হোসনেয়ারা বেগম ছেলের এই ফলাফলে খুশি। তিনি বলেন, যখন ছোট ছিলো বিল্লাল যে লেখাপড়া করতে পারবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আমি যখন থাকবো না কে দেখবে বিল্লালকে এ চিন্তা করে পা দিয়ে তাকে ধরে ধরে শব্দ লেখাতেন। আজ বেল্লাল কলেজে যাবে এতেই সে খুশি। কিন্তু কলেজে পড়ার অনেক খরচ। কিভাবে যোগাড় হবে।

(এমকেআর/এসপি/মে ০৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test