E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাবনায় ভূমিদস্যু অহিরসহ তার সন্তানদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

২০২০ সেপ্টেম্বর ০৯ ২২:৪৮:১০
পাবনায় ভূমিদস্যু অহিরসহ তার সন্তানদের প্রতারণায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার আমিনপুর থানার সিন্দুরী বরুলিয়া গ্রামে ভূমিদস্যু অহির খাঁ ও তার তিন ছেলের প্রতারণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। বুধবার দুপুরে প্রতারণা ও ক্ষতিগ্রস্ত শিকার স্থানীয় বাসিন্দারা ওই এলাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। একই সাথে তারা জেলা পুলিশ ও প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভোগী আব্দুল হাকিম শেখ ও গোলাম মওলা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য আলহাজ্ব তৈয়ব আলী, গ্রাম প্রধান সাহেব আলী, রহম আলী শেখ, আনন্দ সরদার, ভোলা শেখ, মন্টু শেখ, শাহজাহান আলী খাঁ, আতিকুল ইসলাম, সাইদুর রহমানসহ আরও অনেকে।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে জানা যায়, সিন্দুরী বরুরিয়া গ্রামের মৃত নৃত্ত নন্দ পোদ্দারের ছেলে নন্দ কুমার পোদ্দার বাবার মৃত্যুর পর ঢাকার সাভারে মুদিখানা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ব্যবসার কারনে তিনি ঠিকমতো বাড়িতে আসতে পারেন না।

ইতোমধ্যে তার মায়ের মৃত্যুর পর তার অনুপস্থিতির সুযোগে প্রতিবেশি অহির খাঁ (৬০), তার ছেলে স্কুল শিক্ষক হিরু খাঁ (৪০), বিরু খাঁ (৩৫) ও ফিরোজ খাঁ (৩৮) গত ৮ জুলাই ২০২০ তার পৈত্রিক বসতভিটায় থাকা মন্দির ভেঙ্গে ও মূল্যবান গাছ কেটে নিয়েছে। মন্দিরের ওই জায়গা দখলের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অহির খাঁ তার মৃত এক সন্তানকে কবরস্থ করলেও দুইটি কবরের জায়গা দখল নিয়েছেন।

এছাড়াও আব্দুল হাকিম বলেন, ওহির খাঁ যে দাগে তার কাছে জমি বিক্রি করেছেন ওই দাগে কোন জমি তার নেই। এবং জমির যে দলিল তিনি তৈরী করেছেন তা অন্য জেলার এবং ভুয়া দলিল। রাতের আধারে মন্দিরের নির্দারিত দাগের জায়গা থেকে মূর্তি সরিয়ে ফেলে অন্য স্থানে দিয়ে জায়গািিট দখল করে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলেছে।

নন্দ কুমার পোদ্দার বলেন, আমার মা স্বর্গীয় মানদিনী পোদ্দার অসুস্থ হওয়ায় সম্প্রতি মাকে নিয়ে ঢাকায় যান উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য। কিন্ত তার মাকে বাঁচাতে পারেনি ২০১৭ সালে নন্দর মা পরলোকগমন করেন। পরে এসে দেখেন তার পৈত্রিক সম্পত্তি ও তার মা যে স্থানে পারিবারিক তুলশী বেদী বসিয়ে পূজাঅর্চনা করতেন সেখানে তুলশী বেদী ভেঙ্গে দখলের উদ্দেশ্যে তুলশী বেদীর পাশে কবরস্থান বানানো হয়েছে।

গ্রাম প্রধান সাহেব আলী, প্রতিবেশি সাগর সাহা ও ইসলাম খাঁ জানান, ওহির খাঁ এলাকায় বেশ ধুরন্ধর ও কুটকৌশল সম্পন্ন মানুষ। আশপাশের বেশ কিছু হিন্দু সম্পত্তি জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিজ নামে কাগজ বানিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে। তিন ছেলে স্কুল শিক্ষক হলেও তারাও বাবার মতোই অন্যের সম্পত্তি দখলে জড়িত। তারা দাঙ্গাবাজ ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় নিজেরা একের পর এক অন্যায় কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। নিরীহ মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুরী বরুরিয়া মৌজায় ৮৮৯ নং খতিয়ানের ৩১৩৯ নং দাগে ৮৭ শতাংশ জমির কাতে ৪৩.৫ শতাংশ জমির মালিক নন্দ কুমার পোদ্দার। ওই জমির অংশ হিসেবে রয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ পারিবারিক মন্দিরের জমি। অথচ ওহির খাঁ জোরপূর্বক ওই জমি নিজের দাবি করে মন্দির ভেঙ্গে, গাছ কেটে মৃত সন্তানদের কবর দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি করে দখলের চেষ্টা করেছেন। স্থানীয় প্রতিবেশি ও গ্রামবাসী এই কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা জানান, কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ভেঙ্গে ফেলা মন্দিরের জায়গায় টিন দিয়ে খুটি গেড়ে ছাপড়া তুলে নন্দ কুমার পোদ্দারকে দখল দিয়ে যান থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু ওহির খাঁ সেটাও মানছেন না।

অভিযুক্ত ওহির খাঁ বলেন, নন্দ জমি পাবে কিন্তু তুলশী বেদরি কাছে না, জমি পাবে বাড়ির পিছন সাইডে সেখানে বাড়ি করলে আমাদের কোন আপত্তি নাই। কিন্তু তুলশী বেদী দাবি করা জায়গায় আমি বাড়ি করতে দেব না । তুলশী বেদীর পাশে কবরস্থান নির্মান প্রসঙ্গে ওহির খাঁ বলেন, এটা আমার কেনা সম্পত্তি তাই আমি এখানে কবর স্থান বানিয়েছি। আর জমির প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, যে দাগে জমি বিক্রি করেছি সেই দাগে জমি নেই। অন্য স্থান থেকে দিতে চেয়েছি।

এ দাগে জমি ক্রয় আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ওহির খাঁ খুব খারাপ একজন মানুষ, মানুষের জমি জাল দলিল করে দখল করা তার কাজ। এছাড়া এ জায়গায় দুই থেকে তিনটি মন্দিরের জায়গা ইতিমধ্যে ওহির খাঁ দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেছেন। এ এলাকার একটি শ্মশানঘাটও তাদের দখলে রয়েছে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আলহাজ্ব তৈয়ব আলী বলেন, আমি নিজেও ওহির খায়ের প্রতারণার শিকার। বিভিন্ন সময়ে শালিসী বৈঠক হলেও তিনি কখনো উপস্থিত হননা, হলেও বিষয়টি মিটমাট করে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছেন। আমরা এই জালজালিয়াতির সাথে জড়িত ব্যক্তি ও তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে বিষয়টি মিমাংশার জন্য উভয়পক্ষকে ডাকা হয়েছে। আশা করছি তারা উভয়ই সাড়া দিলে এই বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test