E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মহেশখালীতে কয়লা বিদুৎ প্রকল্প

জমি অধিগ্রহণের চেকের জন্য কমিশন ২০ শতাংশ!

২০১৪ আগস্ট ২০ ১৯:২৮:৪০
জমি অধিগ্রহণের চেকের জন্য কমিশন ২০ শতাংশ!

কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের সরকারি চেক হস্তান্তর নিয়ে চলছে কমিশন বাণিজ্য। একটি সিন্ডিকেট অধিগ্রহণ করা ভূমির মালিকদের কাছ থেকে চেক দেয়ার আগে নানা কৌশলে আদায় করছে ২০ শতাংশ কমিশন।

ভূমি মালিকদের অভিযোগ, এতে তারা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নানা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা পূর্বক একজনের চেক অপর জন চেক গ্রহণ করার মত ঘটনাও ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের প্রাপ্ত তথ্য মতে, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মৌজার ১হাজার ৪ শত ১৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ শত ৩৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্ধও হয়েছে। গত ১২ আগষ্ট শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারর্পারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের বৈঠকে ৩৫ হাজার ৯ শত ৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়নে (জাইকা) ২৮ হাজার ৯ শত ৩৯ কোটি, সরকারি খাত থেকে ৪ হাজার ৯ শত ২৬ কোটি ৬৬ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ১ শত ১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা মেটানো হবে। মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট। ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্প এলাকা হিসাবে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মূল্যমানের উন্নয়ন প্রকল্পটি চলতি বছরই কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে।

অধিগ্রহন করা জমি মালিকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমার্ণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পূর্ব থেকে একটি চক্র তৎপর হয়ে উঠে। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন হয়ে সরকার জমি অধিগ্রহন করার পর তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প না হওয়ার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, মাতারবাড়ীর জমির উদ্দিন ও মিজবাহ নামের ব্যাক্তি সহ আরো কয়েক জনকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করে। ওই সিন্ডিকেট ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুল কাদের ভুইয়াকে বশে নিয়ে নানা প্রতারণার মাধ্যমে ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকদের ১৯ টি চেকের মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। তৎমধ্যে জালিয়াতি ও প্রতারনা করে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম অপরের জমি নিজের দেখিয়ে চেক গ্রহনের অভিযোগ করেছে জমির মালিকরা। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছে মাতারবাড়ীর মৃত আলী আকবরের ছেলে নুরুল হুদা ও কায়ছার হোছাইন, মৃত আবুল হোছাইনের ছেলে মো. আবুল কাসেম ও ওবাইদুল হোছন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি সরকারের কাজে সহায়তা করছেন। নিজের জমির চেক নিজে নিয়েছেন। অন্যের চেক নেয়ার বিষয়টি সত্য নয়। আর জমির চেক তিনি সরাসরি জেলা প্রশাসকের হাত থেকে গ্রহণ করেন। একটি মহল কেবল তাকে হয়রানী করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা মৌজায় অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকরা নিয়ম মত প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আবেদন সহ কাগজপত্র জমা দিলে সার্ভেয়ার কানুনগো বরাবরে রিপোর্ট পেশ করে। কানুনগো রিপোর্ট সঠিক ভাবে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা বরাবরে রিপোর্ট পেশ করলে ফাইল অনুমতি পায়। কিন্তু উক্ত দালালদের মাধ্যমে ২০ শতাংশ কমিশনে চুক্তি হলেই কানুনগো ফাইল গুলোকে সঠিকভাবে প্রদান করে। অন্যথায় কানুনগো জমির কাগজপত্রে সমস্যা আছে মর্মে রিপোর্ট প্রদান করলে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা পুনরায় যাচাই করার জন্য ফাইল কানুনগো বরাবরে প্রেরণ করে। অবশেষে অধিগ্রহণকৃত জমি মালিকদের অনেকে উক্ত দালাল সিন্ডিকেটের কাছে ধর্ণা দিতে বাধ্য হয়। অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে ২০ শতাংশ কমিশন আদায় করছে চিহ্নিত ওই দালালরা। এতে ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছে ক্ষতিপূরন প্রাপ্য জমি মালিকরা।

এব্যাপারে অভিযুক্ত মাতারবাড়ির মো জমির উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, একটি মহল নানা কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

ভুমি অধিগ্রহন কার্যালয়ের কানুনগো আবদুল কাদের ভুইয়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযোগকারিদের নিয়ে প্রতিবেদককে তার সামনে যাওয়ার জন্য আহবান করেন।

বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারের ভ’মি অধিগ্রহন কর্মকর্তা আরেফিন আখতার নুর এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, কেউ এ প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

(টিটি/এটিআর/আগস্ট ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test