E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘুষ না দেওয়ায় ভারতীয় বানিয়ে জেলে প্রেরণ 

‘পুলিশি নির্যাতন বন্ধ না হলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করবো’

২০২১ এপ্রিল ১৯ ২৩:৩৯:৪০
‘পুলিশি নির্যাতন বন্ধ না হলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করবো’

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দাবিকৃত ঘুষের টাকা দিতে না পারায় ছেলের ভায়রা ভাইকে ভারতীয় বানিয়ে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ডেমরাইল গ্রামের নিজ বাড়িতে বসে সাংবাদিককের কাছে নিজের ছেলেসহ চারজনকে শুক্রবার রাতে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার বর্ণনা দিতে যেয়ে মনোরঞ্জন মণ্ডল তার স্ত্রী মমতা মণ্ডল কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা পুলিশি নির্যাতন বন্ধ না হলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কথা জানান।

মমতা মণ্ডল বলেন, দু’ মাস আগে মাদক ব্যবসায়ি বিধান কয়ালের ভাগ্নে উজ্জল কয়াল ২০০ বোতল ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী ওই রাতে র্দীলিপ মণ্ডলকে বাড়ি থেকে ধরে তার ছেলে সরোজিতকে ধরতে আসেন।

জানতে চাইলে জিয়ারত আলী জানান, উজ্জল কয়াল মাদক বহনকারি আর মালিক হলো দীলিপ ও তার (মমতা)ছেলে সরোজিৎ তাই তাকে ধরতে এসেছেন। একপর্য়ায়ে দীলিপকে ছেড়ে দিতে ও সরোজিতকে না ধরার জন্য ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায় পুলিশ।

তিনি আরো জানান, গত শুক্রবার দু’টি মোটর সাইকেলে উপপরিদর্শক জিয়ারত আলীসহ কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে প্রথমে তক্ষক সাপ বিক্রি, পরে গাজা ও পরে জুয়া খেলার মিথ্যা অভিযোগ এনে তার স্বামী মনোরঞ্জন ও ছেলে সরোজিতের হাতে হাতকড়া পরান। এ সময় তাদের ঘরে ঢুকে এসবেস্টার্স এর চাল ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় আসবাবপত্রন্বাড়ির কালিমন্দিরের ভিতরে জুতো পরে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করা হয়। খবর পেয়ে ভাই ইউপি সদস্য প্রশান্ত হালদার মোটর সাইকেলে তাদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকেও মাদক দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনও পুলিশের হুমকিতে তাদের বাড়িতে আসতে পারেনি। সরোজিতের কোমরে পুলিশ গাজার পুরিয়া দিতে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

একপর্যায়ে ভাই প্রশান্ত মেম্বরের সঙ্গে থাকা দেবেন মণ্ডল ও সুভাষ মণ্ডলকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে এসে তাদের হাতকড়া পরিয়ে তাদের বাড়িতে রাখা হয়। এসব ঘটনা দেখে বেড়াতে আসা বড় ছেলে স্বন মণ্ডলের ভায়রাভাই শ্যামনগরের কাঁচড়াহাটি গ্রামের কমলেশ মণ্ডল ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তাকেও নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে পুলিশ। একপর্যায়ে এলাকায় কয়েক বছর ধরে বিচরণকারি একটি তক্ষক সাপ ধরে আনতে বলে স্বামী মনোরঞ্জনের হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। এ সময় চারজনকে ছেড়ে দিতে ভাই প্রশান্ত হালদারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন উপপরিদর্শক জিয়ারত হোসেন। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে এলে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে জিয়ারত আলী সরোজিত, কমলেশ, দেবেন ও সুভাষকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রশান্ত মেম্বরের মোটর সাইকেলসহ তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ২০ হাজার টাকা দিতে না পারায় কমলেশকে ভারতীয় নাগরিক বানিয়ে পরদিন মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় পুলিশ।

মমতা রানী মণ্ডল বলেন, পুলিশ শুধু সরোজিতসহ চারজনকে ধরে নিয়েই শান্ত হয়নি। টাকার বিনিময়ে তিন জনকে ছেড়ে দিলেও শুক্রবার সারারাত ও শনিবার রাত পর্যন্ত দু’ বছরের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে পুত্রবধু, ছোট ছেলে ভাস্কর ও তারা স্বামী স্ত্রী কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ তরুন বাউলিয়াকে তাদের বাড়িতে উপস্থিত রেখে রাত ও দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছে। কমলেশ এর স্মার্ট কার্ডসহ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন নিয়ে থানায় গেলেও উপপরিদর্শক জিয়াত আলী হরিদাস মণ্ডলসহ কয়েকজনকে নানাভাবে হয়রানি করেছে। পুলিশি নির্যাতন বন্ধ না হলে স্বপরিবারে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

একই পাড়ার বাসিন্দা বাবুরাম মণ্ডল ও অমিত মণ্ডলসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে মনোরঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে এসে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশের তাণ্ডবের কাহিনী তুলে ধরেন। এলাকায় কয়েকটি হিন্দু পরিবার বসবাস করলেও তারা সেদিন পুলিশের গালিগালাজ আর হুমকিতে মনোরঞ্জন মণ্ডলের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, এলাকার বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ও সিরাজুল ইসলাম, ডেমরাইলের কৌশিক চক্রবর্তী ও একই গ্রামের বিধান কয়ালসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালানি পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। সরোজিত বেড়িবাঁধের উপর দোকান নির্মাণ করার পর থেকে ওই চক্রটি চোরাচালানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মাসোহারা দেওয়া ওইসব মাদক ব্যবকসায়িরা পুলিশকে ব্যবহার করে একের পর এক হয়রানি করছে মনোরঞ্জন মণ্ডলের পরিবারকে। তাছাড়া ভয় দেখালে টাকা মেলায় পুলিশের কাছে না চাইতেই বৃষ্টির মত মনে হওয়ায় বার বার ওই বাড়িতে হামলা করছে। মামলা খাওয়ার ভয়ে তাই কেউ বলিষ্টভাবে প্রতিবাদ করে না। তা ছাড়া সাড়ে তিন বছর ধরে একই থানায় থাকায় উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান পর্যন্ত কেউ তাকে ঘাটাতে সাহস না পাওয়ায় সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে কিভাবে?

এদিকে ঘুষ না দেওয়ায় বাংলাদেশীকে ভারতীয় বানিয়ে জেলে পাঠানো মর্মে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ায় কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারাত হোসেনের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তিনি কালীগঞ্জের এাক সাংবাদিককে টেলিফোন করে গ্রাত্রদাহের বিষয়টি জানিয়ে ওই বক্তব্য সারা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে ছড়িয়ে দিতে বলেছেন।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ১৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test