E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অবশিষ্ট ১১ পরিবার

খোলপেটুয়ার গ্রাসে বিলুপ্তির পথে দয়ারঘাট গ্রাম

২০২১ এপ্রিল ৩০ ১৮:০৯:৫৩
খোলপেটুয়ার গ্রাসে বিলুপ্তির পথে দয়ারঘাট গ্রাম

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে খোলপেটুয়া নদীর অব্যহত ভাঙনে মাত্র ১১টি পরিবার তার ৫৪ সদস্য নিয়ে মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হওয়ার প্রহর গুনছে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট গ্রাম। ১৯৯৪ সাল থেকে খোলপেটুয়া গোগ্রাসে গিলে চলেছে গ্রামটির প্রায় ৪০০ বিঘা জমি,ঘর-বাড়ি, পুকুর ও ফসলের ক্ষেত।

প্রথম থেকেই নদী শাসন না করে পিছিয়ে রিংবাঁধ দিতে দিতে গ্রামের ৪০০ বিঘা থেকে মাত্র ৯/১০ বিঘা জমি বাকী আছে। বিগত আমপানে একই গ্রামের তিনটি স্থানে নতুন করে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ায় আবার নতুন ওয়াপদা রাস্তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এবার রাস্তা উঠলে এই ১১ থেকেই আবার ৪ টি পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। দুঃখীরাম, হরিপদ বিশ্বাস, কমলা বেওয়া ও নিমাই মণ্ডল ভেঙ্গে যাওয়া ওয়াপদার স্লোাপে বাস করেন। নতুন রাস্তা উঠলে এদের অন্যত্র যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

১৯৯৪-৯৫ সাল থেকেই নদী ভাঙ্গনে জমি দিতে দিতে তাদের কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি নদীতে বিসর্জন দিয়ে চলেছে। জন্মভিটা হারানো পরিবারগুলো হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামে না হয় অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন। এখনও যারা পড়ে আছেন বাপ-দাদার ভিটা আঁকড়ে তারাও প্রতি বছর খোলপেটুয়া নদীর ভাঙ্গনে লোনা পানিতে হাবুডুবু খেয়ে চলেছেন।

দয়ারঘাট গ্রামে এখনও টিকে থাকা পরিবার হলো মনিন্দ্র নাথ মণ্ডল, দুঃখীরাম মণ্ডল, হরিপদ বিশ্বাস, অজিত শীল, শ্বশ্মাণ শীল, নিমাই মণ্ডল, মণ্টু মণ্ডল, মদন মণ্ডল, গণেশ মণ্ডল, তারক মণ্ডল ও পঞ্চরাম মণ্ডল।

বাঁধ হলে নতুন করে ওয়াপদার স্লোপে চলে যাবেন মনিন্দ্র মণ্ডল, শ্বশ্মাণ শীল, তারক মণ্ডল ও মদন মণ্ডল। বাঁধ স্থায়ী না হলে হারাধনের ছেলেদের মত দয়ারঘাট গ্রামে আর কেউ থাকবে না। গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

নদী ভাঙ্গনের ফলে দয়ারঘাট গ্রাম থেকে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হয়েছেন রুপচাঁদ মণ্ডল ও দীপচাঁদ মণ্ডল, গুরুপদ মণ্ডল (জেলেখালী), প্রতিবন্ধী বিশ্বনাথ মণ্ডল (ভারত), ভুচি বেওয়া, রনজিৎ সানা (ভারত), মনিন্দ্র সানা (আশাশুনি), কোমল সানা (পুঁটিমারী), সুকুমার সানা (আশাশুনি), বিমল সানা (বলাবাড়িয়া), ক্ষিতিষ সানা (আশাশুনি), বিধুরঞ্জন সানা (ভারত), বিশ্বনাথ সানা (আশাশুনি, সুদর্শন সানা (আশাশুনি)। এছাড়া জেলে পল্লীর ভূপতি মণ্ডল সাতক্ষীরা শহরে গেলেও মধুসুধন মণ্ডল, সন্ন্যাসী মণ্ডল, বিমল মণ্ডল, বিজয় মণ্ডল, মতিলাল মণ্ডল, হরিপদ মণ্ডল, সাধু চরণ মণ্ডলল, দুলাল মণ্ডল, তারাপদ মণ্ডলসহ আরও অনেকে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মনিন্দ্র সানা, বিভূতি ভূষণ রায়, রবিউল ইসলামসহ অনেকেই জানান- দয়ারঘাট থেকে জেলেখালী পর্যন্ত মাত্র ১১ চেইন রাস্তা সবসময়ই জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকে। এছাড়া জেলেখালী থেকে মানিকখালী ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কি.মি. ওয়াপদা রাস্তাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকার বরাদ্দ দেয় কিন্তু কাজ ঠিকমত হয়নি কোনদিন। ৬৫ বছরের পুরানো রাস্তা ভাঙে, কর্মকর্তারা দেখে বরাদ্দ করেন। বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবার যা তাই অবস্থা। কারও কোন জবাবদিহিতা নেই।

সর্বশেষ আমপানের ভাঙ্গনের আগে থেকেই একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ নিয়ে কাজ করছিলেন। কাজ শেষ করার সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে নির্মাকাজ দ্রুত শেষ করা হয়নি। যেদিন ভাঙ্গে তার এক সপ্তাহ আগে সংস্কার কার্যক্রম চলা রাস্তার উপর প্রায় ২ হাজার বালু বোঝাই জিও ব্যাগ ভরা ছিল কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, উপজেলা প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধি কেউই সেগুলির ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখানকার ৩ টি পয়েন্ট ভেঙে যায়। পিচের রাস্তার উপর দিয়ে রিংবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানো হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড রিং বাঁধ দেওয়ার পর বলে চলেছেন বরাদ্দ হয়েছে,অচিরেই কাজ শুরু হবে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test