E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতি দু’ভাগ

২০১৪ সেপ্টেম্বর ০৯ ১৭:২৫:২৮
শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতি দু’ভাগ

শেরপুর প্রতিনিধি : ক্ষমতা আর নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে শেরপুরের শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। দ্বি-বার্ষিক কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ শেষের আগেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দু’পক্ষই পৃথক পৃথকভাবে সাধারণ সভা ডেকে পৃথক কার্যকরী পরিষদের ঘোষণা দিয়েছে। আর এ অবস্থায় বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সাধারণ আমদানী-রপ্তানীকারকরা।

এদিকে, সমিতির নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর ব্যবসা-বানিজ্যে মন্দাবস্থার কারণে বন্দরের আমদানী-রপ্তানী কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে নাকুগাঁও স্থলবন্দর ছেড়ে পাশ্ববর্তী হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে চলে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। গত অর্থবছরে বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে বলে শুল্ক বিভাগের হিসাবে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাত বছর ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ও প্রেসক্লাব নালিতাবাড়ী সভাপতি এমএ হাকাম হীরা যথাক্রমে সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের ডাকসাইটে নেতা হিসেবে বদিউজ্জামান বাদশা সেসময় স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতির কর্তৃত্ব নেন। পরবর্তীতে তারা দ্বি-বার্ষিক সভা করে নেতৃত্বে থেকে যান।

বাদশা-হীরা কমিটির মেয়াদ আরো ৬ মাস থাকা স্বত্ত্বেও গত ১৫ আগস্ট নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুকছেদুর রহমান লেবুর নেতৃত্বে নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতির এক সাধারন সভা আহ্বান করা হয়। সেই সভায় মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুলকে সভাপতি ও নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুকছেদুর রহমান লেবুকে সাধারন সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। বাদশা-হীরার ১৩ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে ৯ জন বেরিয়ে এসে মুকল-লেবুর নেতৃত্বাধীন কমিটির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন।

এ সংবাদে বাদশা-হীরা নতুন কমিটিকে মেনে না নিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর নিজেরা এক সাধারন সভা ডেকে নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করেন। এতে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সরকার গোলাম ফারুককে সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা আনোয়ারুল মঞ্জিলকে সাধারন সম্পাদক করে ১৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী পরিষদ ঘোষণা করা হয়। সেই সভার পরই বাদশা-হীরা নতুন কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

এদিকে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রবিবার নাকুগাঁও স্থলবন্দর ইয়ার্ডে মুকুল-লেবুর নেতৃত্বাধীন আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতির নতুন কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিচিতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। এতে অন্যান্যের মধ্যে নতুন কমিটির সাধারন সম্পাদক মুকছেদুর রহমান লেবু, ব্যবসায়ী নেতা নূরুল আমিন ছাড়াও বন্দরের আমদানী-রপ্তানীকারক ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক সমিতির নবনিযুক্ত কার্যনির্বাহী কমিটির ২১ কর্মকর্তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এতে বন্দরের শতাধিক আমদানী-রপ্তানীকারক ছাড়াও জেলা ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, বন্দরের ইমিগ্রেশন, কাষ্টমস, পুলিশ, বিজিবি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বন্দরের সাধারণ আমদানী-রপ্তানীকারকরা জানান, এভাবে পাল্টাপাল্টি কমিটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। কমিটি নিয়ে রাজনীতির খেলা শুরু হয়েছে। একসময় বাদশা ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। বন্দরে তিনিই ছিলেন শেষ কথা। কিন্তু আজ আর তার সেই দিন নেই। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সাথে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে গিয়ে এখন তিনি দলের বাইরে। আবার সুযোগ নিয়ে বন্দরে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুকছেদুর রহমান লেবু। উনারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা। তাদের নিজেদের নেতৃত্ব ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে আমরা অসহায়। আমাদের এদিকে গেলেও বিপদ, ওদিকে গেলেও বিপদ, আবার না গিয়েও উপায় নেই। আমরা বন্দরে ব্যবসা করতে চাই, কোন নেতৃত্বের কোন্দল চাইনা। ইতোমধ্যে অনেক ভাল ভাল ব্যবসায়ী এ বন্দরে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও আমদানীকৃত কয়লার নিন্মমানের কারণে ব্যবসায় মার খেয়ে নাকুগাঁও স্থলবন্দর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুকছেদুর রহমান লেবু বলেন, আমাদের কমিটিই বৈধ কমিটি। দেড় শতাধিক আমদানী-রপ্তানীকারকের মধ্যে প্রায় সোয়াশ’ সদস্য আমাদের সাথে রয়েছেন। সাধারন আমদানী-রপ্তানীকারকদের স্বার্থেই তাদের দেওয়া দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন দায়িত্বে থেকেও বাদশা-হীরার নেতৃত্বাধীন কমিটি বন্দরের ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে তেমন কোন কাজই করতে পারেনি। বরং তাদের কারণে বন্দরের ব্যবসা-বানিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আমরা আশা করি কেবল চারটি পন্যই নয়, এ কমিটির মাধ্যমে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সহায়তায় আরো বেশ কয়েকটি অনুমোদিত পন্য ভারত থেকে এ বন্দর দিয়ে আমদানীর অনুমতি আনতে সক্ষম হবো।

অপরদিকে, সাবেক কমিটির সাধারন সম্পাদক এমএ হাকামী হীরা বলেন, এভাবে হয়না। আমাদের মেয়াদ থাকা স্বত্তেও রাজনৈতিক প্রভাবে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। ক্ষমতা আকঁড়ে থাকার আকাঙ্খা আমাদের নেই। আমরা তাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাধারন সভা ডেকে নতুন কমিটি করে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।

এদিকে, নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে কয়লা-পাথর সহ মাত্র ৪ টি পন্যের ভারত থেকে আমদানীর অনুমতি থাকায় এবং গত অর্থবছরে আমাদনীকৃত কয়লার নিন্মমান হওয়ায় বন্দরের ব্যবসায় মন্দাবস্থার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলন্দর সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে আমদানী-রপ্তানীকারকরা দারুণভাবে ক্ষতির শিকার হন। এতে করে বন্দরের রাজস্ব আয়ের পরিমান আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও নীচে নেমে আসে।

নাকুগাঁও স্থল বন্দর শুল্ক স্টেশনের উ-পরিদর্শক সামেদুল ইললাম জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ স্থলবন্দরে আমদানী শুল্ক আদায় হয়েছিলো ১৯ কোটি ১৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সেই আমদানী শুল্ক আদায়ের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

আমদানী-রপ্তানীকারকরা বলছেন, দ্রুত বন্দরের রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে এবং ভারত থেকে এ স্থলবন্দর দিয়ে পন্য আমদানীর সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। তাছাড়া এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানের সাথে বাংলাদেশের দুরত্ব অনেক কম এবং সবচেয়ে সহজ যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। ভুটানের সাথে এ স্থলবন্দর দিয়ে সরাসরি আমদানী-রপ্তানী চালু করা গেলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সাথে সাথে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে।

(এইচবি/এএস/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test