E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গ্রামের বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত এএসআই পেয়ারুল

২০২১ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৭:০১:৫৩
গ্রামের বাড়িতে চির নিদ্রায় শায়িত এএসআই পেয়ারুল

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে নিহত এএসআই পেয়ারুল ইসলাম কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহমান মিন্টুর ছেলে। তার মা একজন গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে পেয়ারুল ইসলাম সবার বড়। বৈবাহিক জীবনে দুই ছেলে সন্তানের বাবা। বড় ছেলে হাম্মামের (৬) আর ছোট ছেলে আব্রাহামের বয়স মাত্র ২ বছর। এমতাবস্থায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার এএসআই (নিরস্ত্র) পেয়ারুল ইসলাম কর্তব্যপালন করতে গিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১ টায় হারাগাছ থানাধীন সিগারেট কোম্পানির বাজারে ইয়াবা টাবলেট বিক্রির সময় মাদক বিক্রেতা পারভেজ রহমান পলাশকে আটক করে। আটক অবস্থায় মাদক ব্যবসায়ী পলাশ তার সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে অর্তকিতভাবে এএসআই পেয়ারুল ইসলামের বুকে এলোপাতাড়ি কোপ দিলে তিনি গুরুত্বর জখম হয়।পরে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী দ্রুত এএসআই পেয়ারুল ইসলামকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আইসিইউতে ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় মারা যায়।

২৬ সেপ্টেম্বর পেয়ারুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পেয়ারুলকে হারিয়ে পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে ভেঙ্গে পড়েছে। পেয়ারুলের মা আল্লাহ্ আল্লাহ্ ছাড়া কারো সাথে কথা বলছে না। স্ত্রী হেনা খাতুন বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।

শিশু ছেলে হাম্মাম(৬) বারাবার বাবার কবরের পাশে গিয়ে বলছে 'আব্বু আর কথা বলে না, আব্বু কখন কথা বলবে'। এ কথা বলে হাউ মাউ করে কাঁদছে। হত্যাকান্ডের শিকার পিয়ারুলের বাবা আব্দুর রহমান মিন্টুর প্রতিনিধির সাথে কথা হলে ছেলের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, ‘এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত হতে পারে। হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে। তাদের খুঁজে বের করা প্রশাসনের দায়িত্ব। যারা আমার ছেলের অবুঝ সন্তানদের এতিম তৈরি করলো, বাবা -মায়ের কোল খালি করে দিল তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি হওয়া দরকার। আর এ শাস্তি আমি দেখে যেতে চাই।’

শনিবার বিকেল ৪টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে জানাজা নামাজের পূর্বে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ তাকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন। তার কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ ট্রেনিং কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার, পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন।

এছাড়া জানাজায় অংশ গ্রহন করেন রংপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট শাফিয়ার রহমান শফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তিসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দ। পরে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে এএসআই পেয়ারুলের মরদেহবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি পৌচ্ছিলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তার অবুঝ শিশুসন্তান বাবার নিথর দেহ দেখে হাউ মাউ করে কাঁদছে। তার মা বারবার মূচ্ছা যাচ্ছে, সন্তানের অকাল মৃত্যু কোনভাবে মেনে নিতে পারছেন না মা। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ শুনেই স্ত্রী হাবিবা সুলতানা হেনা ও তার বাবা মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় চন্দ্র পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ গ্রহণ করেন রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আলতাফ হোসেন, হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী ও রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রাজু সরকার সহ কয়েক হাজার মুসল্লি। জানাজাা নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী নিহত এএসআই পেয়ারুলের বীরত্বের কথা বণর্ণা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। শেষে তাদের মসজিদের পাশেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।

(পিএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test