E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাজিতপুরে ইউএনওর বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলা

২০২২ মার্চ ০১ ১২:৩৪:২৯
বাজিতপুরে ইউএনওর বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরশেদা খাতুনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানার পর সেই আদেশে অভিযুক্তের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ আদালতে ইউএনও’সহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন স্থানীয় আবদুল মান্নান স্বপন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। ২৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার আদালত মামলাটি আমলে নেন। একই সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজ মো. সায়েদুর রহমান অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ কার্যালয়কে নির্দেশ দেন।

এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দণ্ডের টাকা ফেরত আদেশ পাবার সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও সেই টাকা পাননি অভিযোগকারী।

স্থানীয় ও এজহার সূত্র থেকে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা অভিযোগকারী আবদুল মান্নান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ধমনী নামে তিনি একটি সাহিত্য পত্রিকারও সম্পাদক। মামলা হয় ২০ ফেব্রæয়ারি। চারজনের মধ্যে ইউএনও মোরশেদা খাতুনকে করা হয় প্রধান অভিযুক্ত। অপর তিনজন হলেন, ইউএনও’র কার্যালয়ের সুপার জহর লাল, উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হাসান ও অফিস সহায়ক সাব্বির আহমেদ।

অভিযোগে বলা হয় স্কুল সংলগ্ন বাদীর একটি পুকুর রয়েছে। গত বছরের ২৮ জুলাই অভিযোগকারী পুকুরটি সংস্কার করছিলেন। ওই দিন ইউএনও এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। বালু তোলার অভিযোগ এনে ইউএনও অভিযোগকারীকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। অনাদায়ে দেওয়া হয় ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

ওই দিন প্রশাসনিক চাপে অভিযোগকারী টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপিল করেন।

আপিল হবার পর মূল নথি তলব করে আদালত। তখন অভিযোগকারী দেখতে পান, যেখানে তার স্বাক্ষর থাকার কথা সেখানে তার নামটা লিখে রাখছে অন্য কেউ। আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরে ১৩ অক্টোবর দণ্ডের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়।

অভিযোগকারী আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর করব বলেই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। বিনা বেতনে নিজে শিক্ষকতা করছি। চোখের সামনে অন্যায় হলে মেনে নিতে পারি না। করোনার সময় ইউএনও লোকজনকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানী করেছেন। আমি ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছি। তাতেই ইউএনও রোষানলে পড়ি। ওই ঘটনার রেশ ধরেই আমার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে অন্যায় করা হয়।

তার দাবি বালু তোলা হচ্ছিল তার নিজের পুকুর থেকে। নিয়ম হলো দণ্ডের পর আমার কাছ থেকে সবার সামনে স্বাক্ষর নিবেন। কিন্তু তারা সেটি করেননি। টাকা নিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে ওই স্থানে অন্য কারোর স্বাক্ষর বসিয়ে দেন। এটি প্রতারণা ও জালিয়াতি।

সবচেয়ে দুঃখজনক দণ্ডের টাকা ফেরত দিতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। আদেশের সাড়ে চার মাস পরও ইউএনও আমাকে টাকা ফেরত দেননি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় ইউএনও মোরশেদা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথমত অভিযোগকারীর সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল না। পুকুর থেকে মাটি তোলা হচ্ছে জেনে ভূমি অফিসের লোক দিয়ে বারণ করে সফল হইনি।

অভিযোগকারী নিজেই আমাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে আসার অনুরোধ করেন। অভিযোগকারীর সঙ্গে পূর্ব শত্রুতা থাকলে একই দিন আরও দুটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতাম না।

স্বাক্ষর জালিয়ার বিষয়ে তার ভাষ্য, একটিতে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল। অন্যটিতে ভুলে নেওয়া হয়নি।

আপিলের রায়ের টাকা ফেরত না দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, রায়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিধিতে বলা আছে এই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়া অন্য কারোর পক্ষে ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়।

(এসএস/এএস/মার্চ ০১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test